শরীরের প্রয়োজনীয় একটি উপাদান কোলেস্টেরল। এটি কোষের ঝিল্লি তৈরিতে, ভিটামিন ডি তৈরিতে এবং হরমোন সৃষ্টিতে সাহায্য করে। শরীরে হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এটি এক ধরনের মোমের মতো চিটচিটে ফ্যাট যা ধমনীতে জমে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে বেড়ে যায় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি।
রোজকার কিছু অভ্যাস শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এগুলো সম্পর্কে চলুন জেনে নিই-
বিজ্ঞাপন

১. অতিরিক্ত কফি পান:
হেলথলাইনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী কফিতে থাকা ক্যাফেইন রক্তচাপের পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে পারে। ২০২৩ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, দিনে ৩ কাপের বেশি কফি পান করলে মোট কোলেস্টেরল এবং এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) এর পরিমাণ বাড়তে পারে। বিশেষ করে এসপ্রেসো-ভিত্তিক ড্রিঙ্কস কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে বেশি প্রভাব ফেলে।
২. মানসিক চাপ:
মানসিক চাপ ও কোলেস্টেরলের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। মানসিক চাপ বেড়ে গেলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এতে রক্তে এলডিএল এবং মোট কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। তাই চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এক্সারসাইজ, ধ্যান এবং গভীর শ্বাস গ্রহণের মতো পদ্ধতি চাপ কমাতে সহায়ক।

৩. ধূমপান ও মদ্যপান:
সিগারেট খাওয়ার কারণে রক্তে থাকা এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল) কমে যায়, ফলে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করা কঠিন হয়। তামাকে থাকা নিকোটিন এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। একইসঙ্গে অতিরিক্ত মদ্যপানও কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এসব অভ্যাস ছাড়লে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
আরও পড়ুন-
৪. কিছু ওষুধ:
কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ওষুধ লিপিড বিপাকক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। যদি আপনি এমন কোনো ওষুধ খান যা কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিতে পারেন।

৫. অতিরিক্ত ওজন:
অতিরিক্ত মেদ শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে। স্থূলতা শরীরের মেটাবলিজম ও ফ্যাটের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন-
৬. গর্ভাবস্থা:
গর্ভাবস্থায় শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। গর্ভস্থ শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য এটি প্রয়োজন। তবে অনেকসময় এটি মাত্রাতিরিক্তও হতে পারে, যাকে জেস্টেশনাল হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া বলা হয়। এই অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি ডায়েট পরিবর্তন এবং বিশেষ ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন।

কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি থেকে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন:
কোলেস্টেরলের সমস্যা প্রতিরোধ করতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই মূল চাবিকাঠি। অতিরিক্ত কফি, ধূমপান, মদ্যপান, ওজন বৃদ্ধির মতো কারণগুলো এড়িয়ে চলুন। পাশাপাশি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে কোলেস্টেরল পর্যবেক্ষণ করুন। সচেতন থাকলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো বিপদের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
এনএম

