গানের ভাষায় বলা হয়, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’। চোখ মনের কথা বলুক বা না বলুক, শরীরের কথা ঠিকই বলে। হার্ট অ্যাটাকের মতো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দেয় চোখ। সময়মতো তা শনাক্ত করা গেলে বড় বিপদ এড়ানো যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখ ৩০ দিন আগে থেকেই হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত দিতে পারে। এ বিষয়ে আগে থেকে জেনে রাখা উচিত। চোখের কোন লক্ষণগুলো হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত দেয় চলুন জেনে নিই-
বিজ্ঞাপন

১. হলুদ বা সাদা দাগ
চোখের পাতার চারপাশে হলুদ বা সাদা দাগ তৈরি হওয়াকে চিকিৎসার পরিভাষায় জ্যানথেলাসমা বলা হয়। এমন দাগ শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি নির্দেশ করে। আর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে বাড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি।
জ্যানথেলাসমা হলে সাধারণত চোখের চারপাশে ছোট ছোট চর্বি জমার মতো দেখা যায়। এই স্তরগুলো হৃদপিণ্ডের ধমনীতে বাধা নির্দেশ করে, যা হার্ট অ্যাটাকের মতো গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে। এই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিজ্ঞাপন

২. ধূসর বা সাদা বৃত্ত
চোখের মণির চারপাশে ধূসর বা সাদা বৃত্ত গঠনও হৃদরোগ সম্পর্কিত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এই সমস্যাকে আর্কাস সিনিলিস বলা হয়। এই বৃত্ত কোলেস্টেরল বৃদ্ধির লক্ষণ এবং রক্ত ধমনীতে চর্বি জমার ইঙ্গিত দেয়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা স্থূলত্বের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায়ই এই সমস্যা দেখা যায়। এই বৃত্ত ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং বাড়তে থাকে হৃদরোগের ঝুঁকি। এই লক্ষণ দেখা দিলে, একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৩. চোখ ঝিনঝিন করা
দৃষ্টি ঘন ঘন ঝাপসা হয়ে যাওয়া এবং চোখ ঝিনঝিন করা হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। হৃদপিণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটলে সাধারণত এই সমস্যা দেখা দেয়। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, প্রচুর মানসিক চাপে থাকেন অথবা যাদের খাদ্যাভ্যাসও ভারসাম্যহীন হয়ে থাকে তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে রক্ত প্রবাহ সঠিকভাবে চোখে পৌঁছাতে পারে না। এই লক্ষণটিকে অবহেলা করবেন না।

৪. চোখ ফোলা বা লালচে ভাব
চোখ ঘন ঘন ফোলা বা লালচে ভাব হওয়া হৃদরোগের একটি বড় লক্ষণ হতে পারে। এই সমস্যাটি দেখা দিলে শরীরে তরল ধারণ বৃদ্ধি পায়। হৃদপিণ্ড সঠিকভাবে পাম্প না করার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে চোখের নিচে ফোলাভাব এবং লালভাব সাধারণত বেশি দেখা যায়। এই লক্ষণটি রক্তচাপ বা হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাসের ইঙ্গিত দিতে পারে। একইসঙ্গে চোখে জ্বালাপোড়া বা ভারী ভাবও অনুভূত হতে পারে।
আরও পড়ুন-
হার্ট অ্যাটাক এড়ানোর উপায়:
১. স্বাস্থ্যকর খাবার খান:
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়াতে কোলেস্টেরল এবং ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলুন। খাদ্যতালিকায় রাখুন তাজা ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য। মাছ, বাদাম এবং হৃদরোগের জন্য উপকারী চর্বি খান।

২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন। দ্রুত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে।
৩. মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন:
হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ মানসিক চাপ। যোগব্যায়াম এবং ধ্যানের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করুন। চাপমুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন।

৪. ধূমপান এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন:
ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এই অভ্যাসগুলো ছাড়ুন।
এনএম

