তকের সংক্রমণজাতীয় একটি সমস্যা দাদ। একসময় এই সমস্যা দেখা দিলে মলম লাগালেই সেরে যেত। এক থেকে দুই সপ্তাহ হতো এর ব্যাপ্তি। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট পুরোই বদলে গেছে। এই দাদের জন্যই এখন খরচ করতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকার ওষুধ। দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে সমস্যাটি।
এখানেই শেষ নয়। ওষুধ লাগানোর পরও ত্বকের একই জায়গায় বা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বারবার ফিরে আসছে ছত্রাকের সংক্রমণ। একসময় মামুলি ত্বকের রোগ মনে করা হলেও বর্তমানে তা আতঙ্কের কারণ হচ্ছে। কেন দাদে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এত বাড়ছে? এর পেছনে দায়ী কে?
বিজ্ঞাপন

বিশ্বজুড়ে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৫০ বছর বয়সি বা তার বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ৫৬ শতাংশই দাদ নিয়ে সচেতন নন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা নানা কোমর্বিডিটি রোগে (যেমন ডায়াবেটিস, সিওপিডি, হাঁপানি বা হার্টের রোগ) ভুগছেন তাদের ত্বকের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, রোগটি নিয়ে বেশিরভাগ মানুষেরই সচেতনতার অভাব।
আরও পড়ুন- বগলের পরিচ্ছন্নতা জরুরি
ত্বকের যেসব অঞ্চল অধিকাংশ সময়ে ঘেমে থাকে, সেসব অঞ্চলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। তাই দাদ থেকে দূরে থাকতে বাহুমূল, ঘাড়, স্তনের নীচের দিক, যৌনাঙ্গ ও কুঁচকির এলাকা যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
বিজ্ঞাপন

ঘাম ও ধুলাবালি থেকে দাদ
মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, শরীরের বিভিন্ন অংশে জমে থাকা ঘাম এবং ধুলোবালিও বিভিন্ন ধরনের ক্ষত ও চুলকানির কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাটা খুব জরুরি। সেসঙ্গে কী ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করছেন, তা-ও খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমানে মানুষ যেসব প্রসাধনী ব্যবহার করেন তাতে রাসায়নিকের পরিমাণ বেশি থাকে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন- গরমে চোখে চুলকানি, কী করবেন?
চুলকানির জন্য দায়ী পোশাকও
নারীদের চুলকানি হওয়ার পেছনে পোশাক বড় ভূমিকা রাখে। এই যেমন, কোমরের যে জায়গায় সেলোয়ার বা পেটিকোটের দড়ি বাঁধেন সেখানে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হয়। খুব আঁটসাঁট পোশাক পরলে বা স্টেরয়েড দেওয়া ক্রিম বেশি ব্যবহার করলেই তা থেকে সংক্রমণ ঘটে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ, দেহের কোনো অংশে চুলকানি বা ঘা হলে ত্বকের সেই অংশে রূপটানের সামগ্রী ব্যবহার না করাই ভালো। চুলকানি কমাতে কোনো ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে হলেও আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ফর্সা হওয়ার ক্রিমই যত নষ্টের গোড়া
ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন অনেকেই। দাদের মতো ত্বকের রোগের নেপথ্যে স্টেরয়েড অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করেন চর্মরোগ চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী। তার মতে, স্টেরয়েডের লাগামছাড়া প্রয়োগে সার্বিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে। স্টেরয়েড-নির্ভর রোগী বা স্টেরয়েড দেওয়া ক্রিম বা প্রসাধনী মেখে অভ্যস্ত, এমন কেউ রোদে বের হলেই তার চামড়ায় ঘা হয় বা র্যাশ বেরিয়ে যায়। কম বয়স থেকে ফর্সা হওয়ার ক্রিম বা প্রসাধনী যারা বেশি ব্যবহার করেছেন, তাদেরই ত্বকে দাদের মতো র্যাশ বা মেচেতার মতো পিগমেন্টেশনের সমস্যা বেশি।
আরও পড়ুন- গলায় ব্রণ-ফুসকুড়ি, দূর করুন ঘরোয়া উপায়ে
ফর্সা হওয়ার ক্রিমে যেমন স্টেরয়েড থাকে, তেমনি থাকে হাইড্রোকুইনোন নামক ব্লিচ আর ট্রেটিনয়েন নামক একটি উপাদান। দাদ-হাজা কমানোর জন্য বাজারচলতি মলম আসলে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্টেরয়েডের ভয়ঙ্কর ককটেল। এগুলোও ত্বকের সংক্রমণের কারণ হচ্ছে বলেই মনে করছেন চর্মরোগ চিকিৎসক।

দাদ প্রতিরোধে করণীয়
দাদ প্রতিরোধ করার প্রধান দুটি উপায় হলো- এক, পরিচ্ছন্নতায় জোর দেওয়া। আর দুই, স্টেরয়েডের ব্যবহার কমানো। অতিরিক্ত রাসায়নিক দেওয়া প্রসাধনীর ব্যবহার করলেই যে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, তা নয়। পুরোটাই সাময়িক।
আরও পড়ুন- দাদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
আসলে ত্বকের রং নির্ধারণ করা মেলানিন রঞ্জককে কোনোভাবেই ক্রিম ব্যবহারে বাড়ানো-কমানো যায় না। এই বিষয়ে সবার আগে সচেতন হতে হবে। ওষুধই যদি প্রতিরোধী হয়ে যায়, তাহলে দাদের মতো সংক্রমণের জন্য দায়ী ছত্রাকের রাসায়নিক বদল বা ‘মিউটেশন’ খুব দ্রুত হবে। আর তখন আর এধরনের সংক্রমণকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।
এনএম

