প্রেমে পড়া বারণ... কারণে অকারণ...। কিন্তু মানুষের মন শোনে না বারণ। তাইতো বারে বারে প্রেমে পড়ে মন। যদিও অনেকেই বলে থাকে প্রেম নাকি একবারই আসে জীবনে। কবির ভাষায়... প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে/ আমারই এ দুয়ার প্রান্তে/ সে তো হায়/মৃদু পায়/এসেছিল পারি নি তো জানতে/প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে...। একথা বুঝি একালে খাটে না। কেননা, এখন মানুষ বার বার প্রেম আসে। বার বার মানুষ প্রেম পড়ে।
বিজ্ঞাপন
জীবনে প্রেম হয় একাধিক বার। কিছু প্রেম টিকে যায়, কিছু প্রেম টুকরো টুকরো স্মৃতির মতো মনের এক কোণে গেঁথে যায়। তবু কেন বার বার প্রেম আসে জীবনে? অনেকেই জানতে চান।

প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবন
বলা হয় ভুবন জুড়ে প্রেমের ফাঁদ পাতা। সেই ফাঁদকে, কত বার নিজেকে সমর্পণ করবেন, তার হিসেব প্রেমের খাতা খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। ভালোবাসা এমন এক শব্দ বর্ণমালা যে, মায়ার নাগপাশে নিজেকে জড়াননি অথবা জড়িয়ে পড়েননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
বিজ্ঞাপন
এক বার, দুইবার, তিন বার... জীবনে যত বারই প্রেম আসুক, কাছে-দূরে-জলে-স্থলে ভালোবাসার সুরে ঠিক বেজে ওঠে বাঁশি। রুবি রায় থেকে বনলতা সেন, সেই সুর এড়িয়ে যেতে পারেন না কেউই। সহজ নয়।
আরও পড়ুন: এই ৫ ধরনের পুরুষদের অপছন্দ করেন নারীরা
জীবনের বিভিন্ন বাঁকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। প্রেমও হয় একাধিক বার। কিছু প্রেম টিকে যায়, কিছু প্রেম টুকরো টুকরো স্মৃতির মতো মনের এক কোণে গেঁথে যায়। আবার কোনও সম্পর্ক খারাপ অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করায়। তবুও, জীবনে নানা ভাবে বার বার প্রেম খুঁজে নেন অনেকেই। ‘কী হবে অতীত নিয়ে?/ চলো পুনর্বার প্রেমে পড়ি’— অতীত পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেন। কিন্তু প্রেম-সমুদ্রের ঢেউ কেন বার বার ভাসিয়ে নিয়ে যায় গভীরে? ভালোবাসার গালিচায় প্রেমের ছায়াপথ ধরে কেন হাঁটতে মন চায়? কেন মনের মিনারে প্রেমের অনুভূতি বুদ্বুদ কাটে? মোদ্দা কথা, জীবনে প্রেম আসে কোন শূন্যতা মেটাতে?

প্রেমের সংজ্ঞা আছে?
এক এক বয়সে এক এক ভাবে প্রেমের সংজ্ঞা নির্ধারিত হতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে যে বোধ অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যে উল্টা দিকের মানুষটির সঙ্গে বিশেষভাবে জুড়ে গেলাম। প্রেমের এটা একটি দিক। সব সময়ে এমন না-ও হতে পারে। অনেকেই পলিঅ্যামোরাস সম্পর্কে আছেন। তারা সম্পর্ককে অন্য ভাবে সংজ্ঞায়িত করছেন। সম্পর্ক, সাহচর্য, যৌথতার অর্থ প্রত্যেকের কাছে আলাদা।
জীবনে প্রেম নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাননি, এমন মানুষও তো আছেন। যিনি হয়তো প্রেমের সম্পর্কে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। আসল প্রেমের প্রয়োজন প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভাবে নির্মিত হয়।

প্রেম এক এক জনের কাছে এক এক রকম
প্রত্যেকেই তার প্রেমের সত্তাটিকে সংগোপনে বহন করেন নিজের মধ্যে। এর আলাদা করে কোনও সন-তারিখ-দিনক্ষণ-বয়ঃক্রমের প্রয়োজন পড়ে না। মনের চোখ ঠিক প্রাণের সখা-সখীকে খুঁজে নেয়। পাশের বাড়ির ‘চাঁদের টুকরো’ হোক কিংবা স্বপ্নে দেখা রাজকুমার— ভালোবাসার ডাক ফেরাতে পারেন না কেউই। যতই পুরনো প্রেমের ক্ষত বুকের মাঝে দগদগে হয়ে থাকুক, কেউ যদি মনের সবটুকু আবেগ এক জায়গায় এনে দরাজ গলায় বলে ওঠে, ‘শুধু তোমাকেই চাই’— সেই চাওয়া অস্বীকার করার দুঃসাহস কারই বা আছে। প্রেম তো শুধু ভালবাসার প্রকাশ নয়, জীবনের প্রতিটি প্রেম প্রতি বারই এক অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করায়। সেই নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় নিজেকে জড়িয়ে নেওয়ার তাগিদ থেকেই কি প্রেম হয়?
প্রেমে পড়ার কারণ কী?
এক জীবনে একাধিক বার প্রেমে পড়ার কারণগুলোও বদলে বদলে যায়। কারও সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়, কারও মেধা আবার মনের কোণে অনুভূতির জন্ম দেয়। কেউ আবার কথার প্রেমে পড়েন, কারও মনে গেঁথে যায় কাজলকালো গভীর চোখের ছবি। বাহ্যিক হলেও, প্রেমে পড়ার এগুলোও এক একটি কারণ। তবে বিদেশের বিভিন্ন নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা গবেষণাপত্র বলছে, প্রেমে পড়ার একটি বড় কারণ হল একাকিত্ব। একা থাকার উদযাপন সকলে করতে পারেন না। একাকিত্ব অনেকের কাছেই যন্ত্রণার, ভয়ের। শুধু ভালোবাসায় ভর করে যোজনপথ হেঁটে ফেলতে পারেন যিনি, সঙ্গীহীনতা তার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। তাই তো সেই ভরসার হাত ধরে পথ হাঁটার তাগিদ জাগে। আবেগ স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে। প্রেমের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে মন চায়। বইয়ের পাতার, সিনেমার পর্দার নায়ক-নায়িকার জায়গায় নিজেকে বসাতে ইচ্ছা করে। কোনও এক রূপকথার জগতে ভেসে যেতে মন চায়।

প্রেম আসলে কী?
প্রেম হল মান-অভিমানের খেলা। রাগ থাকবে, অনুরাগ থাকবে, মন কষাকষি থাকবে, মুখ ঘুরিয়ে একা ঘরে খিল দেওয়া থাকবে, মানভঞ্জন থাকবে। এগুলো ছাড়া তো প্রেম অসম্পূর্ণ।
প্রেমের স্বাস্থ উপকারিতা
কারো কাছে প্রেম ঝামেলার হলেও, প্রেম করার কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে। এমনটাই মনে করেন কলকাতার পুষ্টিবিদ এবং লাইফস্টাইল বিশেষজ্ঞ অনন্যা ভৌমিক। কারণ যা-ই হোক, প্রেম করলে নাকি গ্যাসের সমস্যা খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

অনন্যা বলেন, প্রেম করলে অক্সিটোসিন, ডোপামিন, এন্ডোরফিন নামক ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসরণ হয়। এগুলো যত বেশি নিঃসরণ হবে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, ঘুম ভালো হবে সেই সঙ্গে বাড়বে বিপাকহারও। ভালোবাসা বা ইতিবাচক অনুভূতির কারণে এই হরমোনগুলোর নিঃসরণ হয়। এই ধরনের হরমোন খাবার হজম করাতে দারুণ সাহায্য করে। মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে বিপাকক্রিয়া চলে। যাকে আমরা ভালবাসি, তাকে দেখা মাত্রই এই হরমোনগুলোর নিঃসরণ ঘটে। আর এই হরমোন যত বেশি নিঃসরণ হবে, হজম প্রক্রিয়াও অনেক বেশি সহজ হবে।’’
মানুষ কেন বার বার প্রেম পড়ে?
বার বার কেন প্রেমের জোয়ারে ভেসে যেতে ইচ্ছে করে? তার যে নির্দিষ্ট কারণ হতে পারে না, সেটা স্পষ্ট। কার মনে কে ধরা দেবে কিংবা কে প্রথম কাছে আসবে সে সব বোঝাও শক্ত। অঙ্কের চেয়েও কঠিন। তবে তার চেয়েও কঠিন প্রেম-ভালবাসার আসল সংজ্ঞা বোঝা। নচেৎ রবীন্দ্রনাথ কেন লিখবেন, ‘সখী, ভালোবাসা কারে কয়’?
এজেড

