রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় বিভিন্ন থেরাপি 

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

depression
ছবি: প্রতীকী

ডিপ্রেশনে ভোগেন না এমন মানুষ কমই আছেন। শরীরের বিভিন্ন রোগের মতনই মনের একটি রোগ এটি। অবসন্ন মন, উৎসাহহীনতা ও শক্তিহীনতা যদি কোনো ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে দীর্ঘসময় প্রভাব ফেলে তখন বলা যায় তিনি ডিপ্রেশনে আছেন। 

অনেকে ভাবেন এই মনের রোগের কথা কাউকে বলে কী লাভ। এর তো কোনো চিকিৎসা নেই। এই ধারণা ভুল। অন্যান্য রোগের মতনই ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করা সম্ভব। লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে এর চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।
d1


বিজ্ঞাপন


ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় সাইকোথেরাপি 

সাইকোথেরাপি বা মনোচিকিৎসাকে বলা হয় ‘কথা চিকিৎসা’। এক্ষেত্রে একজন দক্ষ থেরাপিস্টের কাছে রোগী নিজের মানসিক অবস্থার কথা প্রকাশ করেন। তার করণীয় বিষয়ে জানেন। গবেষণা বলছে, ডিপ্রেশনসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যার চিকিৎসা হিসেবে সাইকোথেরাপি বেশ ভালো কাজ করে। 

এই সাইকোথেরাপিরও আবার কয়েকটি ধরন রয়েছে। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক ধরনের সাইকোথেরাপি কার্যকরী ভূমিকা রাখে:
depression6

১। জ্ঞানভিত্তিক আচরণীয় থেরাপি (সিভিটি)


বিজ্ঞাপন


এক্ষেত্রে একজন থেরাপিস্ট রোগীর সেই চিন্তাধারাগুলো খুঁজে বের করবেন যা তার ব্যবহার, আচরণ এবং নিজের প্রতি বিশ্বাসে খারাপ প্রভাব ফেলছে। তিনি সময় নিয়ে রোগীর নিজের প্রতি খারাপ ধারণাগুলোকে ভালোতে রূপান্তরের চেষ্টা করেন। এই যেমন, ‘আমি এই কাজ করতে পারব না’ এমন ধারণাকে ‘আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই কাজ করতে পারব’-তে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন থেরাপিস্ট।  

২। সাইকোডাইনামিক থেরাপি

এটি সাইকোথেরাপির একটি ধরন যেখানে রোগীর অতীত থেকে শুরু বর্তমান জীবন পুরোটাই থেরাপিস্ট অনুসন্ধান করেন, দিনের পর দিন কীভাবে রোগীর মনের পরিবর্তন হয়েছে, কীভাবে রোগী তা পার করেছেন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। পুরো কাজটিই করা হয় রোগীর সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে। থেরাপিস্ট সব তথ্য জানার মাধ্যমে রোগীকে সাহায্য করেন কীভাবে তিনি নিজের জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন। 
depression7

ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় লাইট থেরাপি 

এই প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম আলোর সাহায্যে ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করা হয়। আমাদের দেশে এই চিকিৎসা অতটা পরিচিত নয়। শীতপ্রধান দেশে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় যখন আলো কম থাকে তখন অনেকে ডিপ্রেশনে ভোগেন। আবার অনেকে অন্ধকার ভয় পান। এই দুই ধরনের রোগীদের লাইট থেরাপি দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় রোগীকে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের নির্দিষ্ট রঙের সামনে রাখা হয়। তবে যাদের চোখ অতিরিক্ত আলো সংবেদশীল তাদের এই থেরাপি না নেওয়া উচিত। 

ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় মেডিটেশন থেরাপি 

কাজের চাপ, ভয়, রাগ ইত্যাদি ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে মেডিটেশন সাহায্য করে কীভাবে এসব অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পিইউবি মেড সেন্ট্রালের গবেষণা অনুযায়ী, মেডিটেশন ডিপ্রেশনের লক্ষণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। সেসঙ্গে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস করে।  
depression8

ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি)/ শক থেরাপি 

ডিপ্রেশন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এমন রোগীদের চিকিৎসায় ইসিটি ব্যবহার করা হয়। এই থেরাপিতে রোগীর মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উজ্জীবিত করার জন্য তার কপালে খুব অল্প এবং নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে বৈদ্যুতিক প্রবাহ দেওয়া হয়। এসময় রোগীকে অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয় যাতে তিনি কোনোকিছু টের না পান। পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য ৫-১০ মিনিট সময় লাগে। তবে এই থেরাপি গ্রহণ করলে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, পেশি ব্যথা ও ক্ষত, বিভ্রান্তি ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

এছাড়া ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় আকুপাংচার থেরাপি ব্যবহার করা হয়। এটি একটি প্রাচীন চিনা চিকিৎসাপদ্ধতি। ডিপ্রেশনের কিছু লক্ষণ সারাতে সাহায্য করে এটি। ডিপ্রেশন কমাতে চিকিৎসক ওষুধও দিতে পারেন। তবে বিনা পরামর্শে এমন কোনো মেডিসিন সেবন করা উচিত নয়। অনেকক্ষেত্রে এসব ওষুধ আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াতে পারে।
d
ডিপ্রেশন কেবল একটি মানসিক ব্যাধি নয়। এটি শরীর, সামাজিক অবস্থানসহ সবকিছু ওলটপালট করে দিতে পারে। হতাশা এবং বিষণ্ণতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই একজন সাইকোথেরাপিস্টের সাথে কথা বলুন। 

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন ডট কম, ওয়েবএমডি ডট কম, পিইউবি মেড, ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর