ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা বলতে এমন একটি মানসিক পরিস্থিতি বোঝায় যখন একজন ব্যক্তি জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এর প্রকারভেদ রয়েছে। একেক জনের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন একেক রকম হতে পারে। লক্ষণের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে একে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (এমডিডি) বা গুরুতর ডিপ্রেশন
বিজ্ঞাপন
ডিপ্রেশনের গুরুতর রূপকে মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার বলা হয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও যখন কোনো ব্যক্তি অবিরাম হতাশা, দুঃখবোধ আর মূল্যহীনতায় ভোগেন তখন বলা যায় তিনি ডিপ্রেশনের এই পর্যায়ে রয়েছেন। মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারের কিছু লক্ষণ হলো–
- অধিকাংশ সময় হতাশায় নিমজ্জিত থাকা
- প্রায় সব কাজেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
- উল্লেখযোগ্য হারে ওজন বাড়া বা কমে যাওয়া
- অতিরিক্ত ঘুমানো কিংবা অনিদ্রা
- চিন্তা-ভাবনা বা চলাচলে গতি কমে যাওয়া
- সবসময় ক্লান্তি অনুভব করা
- নিজেকে মূল্যহীন লাগা বা অপরাধবোধে ভোগা
- মনোযোগ হারিয়ে ফেলা
- সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা
- বারবার মৃত্যু বা আত্মহত্যার কথা চিন্তা করা
কোনো ব্যক্তি যদি ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ওপরের ৫ বা তার অধিক সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে বলা যেতে পারে তিনি মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব তার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
বিজ্ঞাপন
পার্সিস্ট্যান্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (পিডিডি) বা স্থায়ী ডিপ্রেশন
ডিপ্রেশনের এই ধরনটিকে ডিস্টিমিয়াও বলা হয়ে থাকে। এর প্রভাব হালকা হয়। তবে এটি বেশি স্থায়ী। পার্সিস্ট্যান্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারের কিছু লক্ষণ হলো–
- স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
- আত্মসম্মান কমে যাওয়া
- নিরাশ হয়ে পড়া
- নতুন কিছু করার ইচ্ছা মরে যাওয়া
অন্তত দুই বছর ধরে যদি কোনো ব্যক্তি এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়ে থাকেন তবে বলা যেতে পারে তিনি পার্সিস্ট্যান্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে ভুগছেন।
সাইকোটিক বা মানসিক ডিপ্রেশন
ডিপ্রেশনের এই প্রকারটি একটু জটিল। এই ডিপ্রেশনে ভোগা রোগীর মধ্যে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে তা হলো–
- হ্যালুসিনেশন (এমন কিছু দেখা বা শোনা বাস্তবে যার অস্তিত্ব নেই)
- বিভ্রম (মিথ্যা বিশ্বাস)
- প্যারানয়া (অন্যরা ক্ষতি করবে এমনটা বিশ্বাস করা)
পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা প্রসব পরবর্তী ডিপ্রেশন
হয়তো ভাবছেন পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কী? এই সমস্যায় নারীরা বেশি ভোগেন। সন্তান জন্মদানের পরবর্তী সময়ে নতুন মা যে ডিপ্রেশনে ভোগেন তাকে পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বলা হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর শূন্যতা অনুভব করা কিংবা দুঃখবোধ হওয়া স্বাভাবিক। বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রেই এর স্থায়িত্ব হয় কয়েক দিন। কিন্তু এই মন খারাপ যদি দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয় তবে তিনি পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগতে পারেন। এর কিছু লক্ষণ হলো–
- সবসময় অস্থির লাগা বা মেজাজ খারাপ থাকা
- দুঃখবোধ হওয়া বা অসহায় লাগা
- শিশুকে বা নিজেকে আঘাত করার কথা চিন্তা করা
- সন্তানের প্রতি কোনো আগ্রহ কাজ না করা, তার থেকে দূরে থাকা (এমন মনে হওয়া যেন সন্তান নিজের নয়, অন্য কারোর)
- কোনো কাজে শক্তি বা অনুপ্রেরণা না পাওয়া
- খুব কম খাওয়া কিংবা অতিরিক্ত খাওয়া
- স্মৃতিঘটিত সমস্যা হওয়া
- প্রায়ই অপরাধবোধে ভোগা বা নিজেকে খারাপ মা মনে হওয়া
- পরিবার ও বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া
সন্তান জন্মদানের পর দেহে হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও এই ডিপ্রেশন হতে পারে।
প্রিমেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার বা পিরিয়ড পূর্বকালীন ডিপ্রেশন
পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগে নারীরা যে ডিপ্রেশনে ভোগেন তাকে প্রিমেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার বলে। এর কিছু লক্ষণ হলো–
- মুড সুইং হওয়া
- সব কাজে বিরক্তি লাগা
- ভয় হওয়া
- মনোযোগে ঘাটতি দেখা দেওয়া
- ক্লান্ত লাগা
- ঘুমে সমস্যা
ডিপ্রেশনের ধরন যাই হোক কেন তা সঠিকভাবে জানা উচিত, সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এটি সামলে ওঠা যায়।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন ডট কম, ওয়েবএমডি ডট কম
এনএম