শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আগাম জামিন নিয়ে বিড়ম্বনায় বিচারপ্রার্থীরা

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

আগাম জামিন নিয়ে বিড়ম্বনায় বিচারপ্রার্থীরা
ফাইল ছবি

কারণে-অকারণে ছোট-বড় অপরাধের কথা বিবেচনা না করেই দেশে অহরহ মামলা হচ্ছে। এতে দিন দিন বাড়ছে মামলার জট। এখনও বিভিন্ন আদালতে ঝুলে আছে প্রায় ৩৭ লাখ মামলা। দিন দিন এই সংখ্যা শুধু বাড়ছেই। আপসযোগ্য অপরাধেও মামলা ঠুকে দেওয়া হচ্ছে। এসব অপরাধ মিটানো যাচ্ছে না গ্রাম্য বা নগর আদালতে।

সম্প্রতি সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘিরে ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এসব ঘটনায় দেশব্যাপী মামলা হচ্ছে। এসব মামলায় আসামি হাজার হাজার নেতাকর্মী। দায়রা জজ আদালত এসব আসামিকে সাধারণত আগাম জামিন দেন না। নিরুপায় হয়ে তারা দ্বারস্থ হন হাইকোর্টের। কিন্তু হাইকোর্টেও বেঞ্চের সংখ্যা কম। এই অবস্থায় আগাম জামিন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আদালত ও বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন আইনবিদরা।


বিজ্ঞাপন


সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘হাইকোর্টের সব বেঞ্চ আগাম জামিন শোনেন না। শুনলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমত। আগাম জামিন তো সাময়িক রিলিফ (প্রতিকার)। পরে তো এসব মামলায় আবারও জামিন নিতে হয় জজ কোর্টে গিয়ে। যদি দায়রা জজ আগাম জামিন দিতেন তাহলে বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তি কমতো। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে তাদের কষ্ট করে ঢাকায় এসে জামিন নিতে হতো না।’

আরও পড়ুন: মামলা নিষ্পত্তির গতি বেড়েছে বিচারিক আদালতে

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে দেশব্যাপী যেসব মামলা হচ্ছে সেগুলো মূলত ভোগান্তির জন্যই দেওয়া হচ্ছে।’


বিজ্ঞাপন


jamin2

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারাদেশে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় আড়াই লাখ মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। আর এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখের বেশি নেতাকর্মীকে। দেশের আদালত পাড়ায় মামলা জট হওয়ার পেছনে এটিও একটি কারণ।’

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এই সরকারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে জনগণকে ভোগান্তি দেওয়া। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরাও প্রস্তুত আছি সরকারের ভোগান্তি শিকারের মধ্যে দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো। দলের নেতাকর্মীরা এসব ভোগান্তি মেনে নিয়েই আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে শরিক হচ্ছেন। ইতোমধ্যে সারাদেশে অনেক মামলা-হামলা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে ভোলা-মুন্সীগঞ্জসহ অনেক জায়গায় পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন: বার বার জামিন নিয়ে অপরাধের রাজ্য গড়েন তারা

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সগীর হোসেন লিওন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সুযোগ বুঝেই মামলা দিচ্ছে। এসব মামলায় আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে ভিড় করছেন ভুক্তভোগীরা। মামলার অধিকাংশ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক।’ 

ভুক্তভোগীদের বিড়ম্বনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মামলার আসামিদের কোর্টে এসে বসে থাকতে হয়। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিতে হয় আগাম জামিন নেওয়ার জন্য। ঢাকায় এসে তাদের থাকতে হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের বাসা, হোটেলে বা বিভিন্ন মেসে। আগাম জামিন নিতে এসে ১০/১৫ দিনও অপেক্ষা করতে হয় অনেককে। আমাদের সেশন জজ (দায়রা জজ) বা হাইকোর্ট আগাম জামিন বা প্রি এরস্টে বেইল দিতে পারে। আগাম জামিনের বিষয়ে আপিল বিভাগের সর্বশেষ একটি ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) হয়েছে।’

এই আইনজীবী বলেন, ‘আগাম জামিন দেওয়া হয় যখন রাজনৈতিক হয়রানির জন্য মামলা করা হয়। অপরাধের ধরন দেখে আদালত আসামিদের জামিন দিয়ে থাকেন। পুলিশের রিপোর্টের আগে সর্বোচ্চ আট সপ্তাহ সময়ের জন্য আগাম জামিন দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল আন্দোলন করছে। এজন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ হচ্ছে। এগুলোকে কেন্দ্র করে মামলা হচ্ছে হাজার হাজার। হাইকোর্ট অবকাশকালীন ছুটি থাকায় দুই একটা কোর্ট বেঞ্চ খোলা আছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে আগাম জামিনের আবেদন গ্রহণ করছে না আদালত। এজন্য অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন।’

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী সগীর হোসেন লিওন বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সুযোগ বুঝেই মামলা দিচ্ছে। এসব মামলায় আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে ভিড় করছেন ভুক্তভোগীরা। মামলার অধিকাংশ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক।

jamin3

রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা জামিনের বিষয়ে আদালতে বিরোধিতা করে থাকি। অপরাধের ধরন দেখে আমরা ভূমিকা পালন করি। যেগুলো খুবই গুরুতর অপরাধ সেসব মামলায় যেন আসামির জামিন না হয় সে বিষয়ে জোরালো ভুমিকা পালন করি। অনেক সময় হাইকোর্ট জামিন দিলে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত ও আপিল বিভাগে সেই আদেশের বিরুদ্ধে যাই। এটাই আমাদের দায়িত্ব।’

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘আগাম জামিন মূলত ছয় সপ্তাহ বা আট সপ্তাহের জন্য আদালত দিয়ে থাকেন। পরে জেলা জজ আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে হয়। পুলিশের রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত আগাম জামিন দিয়ে থাকেন আদালত।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে আদালত বাড়ানো দরকার। বিচারক বাড়ানো দরকার। কারণ দেশে মামলার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। মামলা কমাতে বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে।’

এআইএম/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর