বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

মামলা নিষ্পত্তির গতি বেড়েছে বিচারিক আদালতে

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩৩ এএম

শেয়ার করুন:

মামলা নিষ্পত্তির গতি বেড়েছে বিচারিক আদালতে

সুপ্রিম কোর্টের  হাই কোর্ট বিভাগের আটজন বিচারককে নিয়ে মনিটরিং কমিটি গঠনের পর গতি বেড়েছে বিচারিক আদালতের মামলা নিষ্পত্তিতে। দেশের ৮ বিভাগের অধস্তন আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত—প্রথম ৬ মাসে এই নিষ্পত্তির হার গড়ে ৯১ দশমিক ৯০ শতাংশ।

অথচ গত বছরের এই সময়ে নিষ্পত্তির হার ছিল গড়ে ৫৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।  সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এমন তথ্য জানিয়েছে।


বিজ্ঞাপন


মনিটরিং কমিটি গঠিত হওয়ার পর বর্তমান কমিটির সভাপতিগণের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়ন, নিরবচ্ছিন্ন মনিটরিং এবং গতিশীল নেতৃত্বে দেশের সকল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ ৩২.৪০% শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এর মধ্যে দেশের অধস্তন আদালত গুলোর মধ্যে কম মামলা দায়ের করা হলেও সবচেয়ে বেশী নিষ্পত্তি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। সেখানে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি খেকে ৩০ জুন পযন্ত ময়মনসিংহ ৪৭,৯০৮ (দেওয়ানী ও ফৌজদারী) মামলার মধ্যে ৫১,৮১১টি। নিষ্পত্তির শতকরা হার ১০৮।

গত মার্চে অধস্তন আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানী, ফৌজদারি ও ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা সরজমিনে গণনা করে এবং তদন্তাধীন থাকা মামলার প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি।

২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের প্রথম ৬ মাসের তুলনামূলক পরিসংখ্যান হতে দেখা যায় যে, নতুন মনিটরিং কমিটি গঠিত হওয়ার পর বর্তমান কমিটির সভাপতিগণের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়ন, নিরবচ্ছিন্ন মনিটরিং এবং গতিশীল নেতৃত্বে দেশের সকল বিভাগে একরে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২.৪০%।


বিজ্ঞাপন


প্রধান বিচারপতির  অনুমতিক্রমে The Supreme Court of Bangladesh (High Court Division Rules), ১৯৭৩ অনুযায়ী মনিটরিং এর দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে বিগত ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারী বিজ্ঞপ্তি মূলে ০৮ (আট) জন বিচারপতিগণের সমন্বয়ে ০৮(আট)টি বিভাগের অধঃস্তন আদালতসমূহ মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়।

বিবরণীর তথ্যমতে, অধস্তন আদালতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেওয়ানি ও ফৌজদারি মিলে ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এই সময়ে অধস্তন আদালতে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫২টি মামলার নিষ্পত্তি হয়। গত বছর একই সময়ে আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মিলে ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮১টি মামলা হয়েছিল। নিষ্পত্তি হয়েছিল ৩ লাখ ৯০ হাজার ৩১১টি।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। শপথ নেওয়ার পর গত ২ জানুয়ারি এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, দেশের সব অধস্তন আদালতে মামলাজট নিরসন তথা বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে আটটি বিভাগের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিকে প্রধান করে একটি করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। প্রতি মাসে তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করা হবে।

এরপর গত ২৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধান বিচারপতি দেশের আটটি বিভাগের প্রতিটির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতিকে মনোনয়ন দিয়ে পৃথক আটটি মনিটরিং কমিটি ফর সাবঅর্ডিনেট কোর্টস গঠন করে দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামকে ঢাকা বিভাগের, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে খুলনা বিভাগের, বিচারপতি জাফর আহমেদকে বরিশাল বিভাগের, বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লাকে চট্টগ্রাম বিভাগের, বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানকে সিলেট বিভাগের, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনকে রংপুর বিভাগের, বিচারপতি মো. জাকির হোসেনকে ময়মনসিংহ বিভাগের ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানকে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিবরণীতে আটটি মনিটরিং কমিটির কার্যক্রম, বিভাগভিত্তিক চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ও ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দায়ের ও নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যা ও তুলানামূলক পরিসংখ্যান উল্লেখ রয়েছে। এতে ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাস ও ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে, অর্থাৎ মনিটরিং কমিটি গঠনের আগে ও পরে মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তির সংখ্যা ও শতকরা হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।

আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, পৃথক মনিটরিং কমিটি গঠনের পর কমিটির সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের আটজন বিচারপতি বিভিন্ন সময়ে দেশের আটটি বিভাগের অধস্তন আদালত পরিদর্শন করেন। কমিটির সভাপতিদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান, নিরবচ্ছিন্ন মনিটরিং ও গতিশীল নেতৃত্বে দেশের সব বিভাগে একত্রে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মামলাজট নিরসনসহ আদালতের বিভিন্ন সমস্যা ও এসব সমাধানে যুগোপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্দেশ্যে মনিটরিং কমিটির সভাপতিরা বিভিন্ন সময়ে নিজ নিজ বিভাগের অধস্তন আদালতের বিচারকদের সঙ্গে জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে মতবিনিময় সভা করেন। ইতিমধ্যে বিচারকার্যের সুবিধার্থে দেশের সব বিভাগের বিচারকদের বিডি লেক্সের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমান মনিটরিং কমিটির সভাপতিরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পুরোনো মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়ানো বিষয়টি পজিটিভ। এতে করে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে। জট তৈরী হবে না মামলার। এভাবে মনিটরিং অব্যাহতি থাকা উচিত।

চলতি বছরের নিষ্পত্তির হার গড়ে ৯১ দশমিক ৯০ শতাংশ
বিবরণীর তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ৮টি বিভাগের মধ্যে ঢাকা বিভাগের অধস্তন আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মিলে ২ লাখ ৬১ হাজার ৬২৬টি, খুলনা বিভাগে ৮৪ হাজার ৭৫৯, বরিশাল বিভাগে ৪৪ হাজার ৬৫৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫০৮, সিলেট বিভাগে ৩৯ হাজার ১৯৭, রংপুর বিভাগে ৫৩ হাজার ৬৭৩, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৭ হাজার ৯০৪ ও রাজশাহী বিভাগে ৮৩ হাজার ১৫৩টি মামলা দায়ের করা হয়। সব মিলিয়ে ৮ বিভাগে মামলা দায়ের করা হয় ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭৬টি।

বিবরণীর তথ্যমতে, এই সময়ে ঢাকা বিভাগে ২ লাখ ২৫ হাজার ৬০৮টি, খুলনা বিভাগে ৭৪ হাজার ৬৯৪, বরিশাল বিভাগে ৪০ হাজার ৯১১, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৬, সিলেট বিভাগে ৩৭ হাজার ৪৭৩, রংপুর বিভাগে ৫২ হাজার ৮৪৬, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫১ হাজার ৮১১ ও রাজশাহী বিভাগে ৭৩ হাজার ৬৮৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ হিসেবে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশের ৮ বিভাগে মোট ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এই ৬ মাসে মামলা নিষ্পত্তির হার গড়ে ৯১ দশমিক ৯০ শতাংশ।

গত বছর নিষ্পত্তির হার ছিল গড়ে ৫৯ দশমিক ৫০ শতাংশ
বিবরণীতে দেখা যায়, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের ৮ বিভাগের মধ্যে ঢাকা বিভাগে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা মিলে ২ লাখ ৫০ হাজার ৯৫৩টি, খুলনা বিভাগে ৬৭ হাজার ২৯, বরিশাল বিভাগে ৩২ হাজার ১৮৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৮৯, সিলেট বিভাগে ৩৪ হাজার ৭৯, রংপুর বিভাগে ৪৫ হাজার ৪৪৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৮ হাজার ৯৭৭ ও রাজশাহী বিভাগে ৬৬ হাজার ৪২৪টি মামলা দায়ের করা হয়। মোট মামলা দায়ের করা হয় ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮১টি মামলা।

বিবরণীর তথ্যমতে, ওই সময়ে ঢাকা বিভাগে নিষ্পত্তি হয় ১ লাখ ৩০ হাজার ২৪২টি, খুলনা বিভাগে ৪৬ হাজার ৬৪, বরিশাল বিভাগে ২৩ হাজার ৩২৪, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭০ হাজার ৯১১, সিলেট বিভাগে ২০ হাজার ৮৪৯, রংপুর বিভাগে ৩০ হাজার ৯৮৯, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪ হাজার ৮৫৫টি ও রাজশাহী বিভাগে ৪৩ হাজার ৭৭টি মামলা। গত বছরের প্রথম ৬ মাসে মোট নিষ্পত্তি হয় ৩ লাখ ৯০ হাজার ৩১১টি মামলা। এই সময়ে নিষ্পত্তির হার ছিল গড়ে ৫৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এআইএম/একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর