শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

পায়ে বুলেট নিয়ে কাতরাচ্ছেন শাহাদাত

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

পায়ে বুলেট নিয়ে কাতরাচ্ছেন শাহাদাত

শাহাদাত হোসেন খান মিশন (৩২) করোনার আগে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। কিন্তু সম্প্রতি জীবিকার তাগিদে দিনমজুর হিসেবে পেন্টিংয়ের কাজ করতেন। ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় থাকতেন তিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে অন্যদের সাথে নেমে পড়েন তিনিও। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট কারওয়ান বাজারে গুলিতে আহত হন শাহাদাত। সেই থেকে তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন।

সেদিন শাহাদাতের পায়ে দুটি গুলি লাগে। তার দাবি, এই গুলি পুলিশের ছোড়া নয়, আশপাশের ভবন থেকে করা হয়েছিল। কারণ সড়কের সামনে পেছনে তখন পুলিশ ছিল না।


বিজ্ঞাপন


গত বৃহস্পতিবার নিটোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার শিরুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কাকইড় খালকান্দী গ্রামের হুমায়ুন কবির খানের ছেলে তিনি।

শাহবাগ টু ফার্মগেট, ৪ আগস্ট যা ঘটেছিল

গত ৪ আগস্ট আহত হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কি কি ঘটেছিল সেসব চিত্র তুলে ধরে শাহাদাত বলেন, তারা সকাল ১০টা থেকে আন্দোলন করছিলেন। শাহবাগ এলাকায় গেলে ছাত্রলীগের ছেলেরা তাদের ওপর হামলা চালায়। পিজি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনের ফ্লোর থেকে গুলি ছুড়ছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ছেলেরা। তারা সংখ্যায় কম থাকলেও সবার হাতে অস্ত্র ছিল। এমন দৃশ্য দেখার পর আন্দোলনকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তখন থেকে সেদিনের গন্ডগোলের শুরু। আন্দোলনকারীদের কাছে খবর আসে বাংলামোটর এলাকায় ছাত্রলীগের ছেলেরা গুলি করছে। এরপর ৭-৮ হাজার আন্দোলনকারী বাংলামোটরের দিকে এগিয়ে যায়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তারা বাংলামোটর, কাঠালবাগান ও ইস্কাটন— এই তিনদিক থেকে বৃষ্টির মতো গুলি করতে শুরু করে। এভাবে চলছিল প্রায় বিকেল তিনটা পর্যন্ত। এরপর তারা কারওয়ানবাজারের দখল নেন। তাদের টার্গেট ছিল প্রথমে তারা ফার্মগেট যাবেন। সেখান থেকে বিজয় সরণি তারপর সবশেষ গন্তব্য হবে গণভবন। কিন্তু কারওয়ান বাজার থেকে ছাত্রলীগের ছেলেদের হটিয়ে দিলেও তারা বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। তার মাঝে আন্দোলনকারীরা ডেইলি স্টার পর্যন্ত যেতে সক্ষম হলেও অনেকে পথে আহত হন। আহতরা প্রাণ রক্ষায় ডেইলি স্টার ভবনে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।

সেদিন ডেইলি স্টারের সামনে যা ঘটেছিল


বিজ্ঞাপন


শাহাদাত বলেন, আমরা ডেইলি স্টারের দিকে এগোচ্ছিলাম, কিন্তু ওই সময় চারপাশের ভবনগুলো থেকে বৃষ্টির মতো গুলি করছিল ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এমন অবস্থায় গুলিগুলো কোথা থেকে আসছিল কেউ বুঝতে পারছিল না। বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকে গুলি করা হচ্ছিল। আমার গায়ে যে গুলি লেগেছে সেগুলো করা হয়েছে পেছন দিক ও মেট্রোরেলের ওপর থেকে। আমার সামনে পুলিশও ছিল না। পরে বুঝতে পারি কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল স্টেশন থেকে ডেইলি স্টারের দিকে যাওয়ার পথে দুই পাশে থাকা বিভিন্ন ভবন থেকে গুলি করা হয়েছে।

Imrul_Bullet--02

যেভাবে গুলি খেলেন

শাহাদাত আরও বলেন, আমি ডেইলি স্টার ভবনের কয়েক ফুট সামনে ফার্মগেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। সেই মুহূর্তে প্রথমে সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ আসে। পরে বৃষ্টির মতো গুলি শুরু হয়৷ তখন এত গোলাগুলি হচ্ছিল যে আমরা সেখানে টিকতে পারিনি। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি কারওয়ান বাজার মেট্রোরেলের দিকে পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে দুটি গুলি এসে আমার পায়ে লাগে। প্রথম গুলিটা পিছন দিক থেকে এসে লাগে।

একটু থেমে আবারও কথা বলা শুরু করেন শাহাদাত। তিনি বলেন, প্রথম গুলি লাগার পর আমি উঠে দাঁড়াই। কিন্তু পরের গুলিতে আর দাঁড়াতে পারিনি। শেষের গুলিটা আমার পায়ের হাড় খণ্ড বিখণ্ড করে ফেলেছিল। সেই গুলিটা এখনো পায়ের সাথেই আছে। তখন সেই এলাকায় এত গুলি হয়েছে যা কল্পনার বাইরে। এসব গুলি পুলিশ নয়, বিভিন্ন ভবন থেকে করা হয়েছিল। ওই দৃশ্য না দেখলে বলে বোঝানো কঠিন। এখনও আমার পায়ে একটি বুলেট আছে, যা বের করা সম্ভব হয়নি। পায়ের হাড় জোড়া লাগলে ছয় মাস পর অপারেশন করা হবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসক।

শাহাদাতের বাবা একজন পল্লী চিকিৎসক। তিনি ঢাকায় যা আয় করতেন তার অর্ধেকের বেশি গ্রামে পাঠাতেন। সেই টাকায় ভালোই চলতো সংসার। কিন্তু শাহাদাত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় সংসারে টানোপোড়েন শুরু হয়েছে। তার মা বলেন, আমরা এখন এমন অবস্থায় আছি বাবা, কারও কাছে সাহায্য চাইতেও পারছি না, আবার মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছি না।

এমআইকে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর