শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে জুয়া-গাঁজার আসর!

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে জুয়া-গাঁজার আসর!
সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় প্রকাশ্যেই চলে জুয়া ও গাঁজার আসর। ছবি: ঢাকা মেইল

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। এর এক পাশে আদালত ভবন, যেখানে বসেন বিচারপতিরা। অন্য পাশে অবস্থিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, যেখানে বসে মক্কেলদের সঙ্গে কথা বলেন আইনজীবীরা। এর মাঝখানেই ফাঁকা জায়গায় বসে রমরমা জুয়ার আড্ডা। অভিযোগ রয়েছে, বিচারপতি ও আইনজীবীদের গাড়ির ড্রাইভার, এখানকার বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত কর্মচারীরা এই জুয়ার আসর বসিয়ে থাকেন।  

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ভবনের সামনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেউ বসে আছেন খোলা আকাশের নিচে। কেউ আবার পলিথিন বা কার্পেট দিয়ে অস্থায়ী ছাউনি গড়েছেন। সেখানে তাস খেলার বাহানায় চলছে জুয়ার আড্ডা।


বিজ্ঞাপন


পাশেই জাতীয় ঈদগাহ মাঠ, সেখানে গিয়ে দেখা গেল গোল হয়ে আড্ডায় বসা অনেকের মুখ থেকে বের হচ্ছে সাদা ধোঁয়া। আবার আরেক পাশেই দেখা গেল মাটি দিয়ে তৈরি এক ধরনের পাইপ মুখে নিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লেই বের হচ্ছে ধোঁয়া। কেউ কেউ আবার কাঁচি বা ছুরি দিয়ে কিছু কাটাকুটি করছেন।

কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল- সিদ্ধি খাচ্ছেন তারা। ‘সিদ্ধি’ বলতে তারা মাদকদ্রব্য ‘গাঁজা’কে বুঝিয়েছেন, সেটাও ব্যাখ্যা করেন কেউ কেউ।

আরও পড়ুন

বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে কি?

এদিকে জাতীয় ঈদগাহে এভাবে প্রকাশ্যে মাদক সেবনের ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমসহ একাধিক ইসলামিক ব্যক্তিত্ব। তারা বলছেন, জাতীয় ঈদগাহে এভাবে মাদক সেবন কখনোই কাম্য নয়। কর্তৃপক্ষের উচিত ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা রক্ষা করা।


বিজ্ঞাপন


সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের ভেতরে-বাইরে এবং আশপাশে অনেকেই গাঁজা সেবন করেন। সেখানে সারা দিনই চলে মাদক সেবন। তবে সন্ধ্যার পর তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। গাঁজার গন্ধে ওই এলাকায় যাওয়াই কঠিন হয়ে যায়। প্রকাশ্যে বসে অনেকেই গাঁজা সেবন করেন। তাদের বাধা দেওয়ারও যেন কেউ নেই।

আগের তুলনায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জুয়া খেলার পরিমাণ কমে এসেছে বলে দাবি করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সহসভাপতি জেসমিন সুলতানা। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের একটা জায়গায় জুয়ার আসর বসত। বিচারপতি, আইনজীবীদের গাড়ির ড্রাইভার, এখানে কর্মরত পিওন, সুইপারসহ অন্যান্য পদের কিছু কর্মচারী নিয়মিতভারে জুয়া খেলার আসর বসাত। এখন সেই দৃশ্য অনেক কমে গেছে। আমি এসব জুয়াড়িকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি।

এই আইনজীবী নেত্রী আরও বলেন, এখন এসব লোক বসে আর জুয়া খেলে না। এমন চিত্র দেখা যায় না। তবে বসে বসে অনলাইনে জুয়া খেলার চিত্র দেখা যায়। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

জেসমিন সুলতানা বলেন, আমরা এ বিষয়ে পুলিশকে জানিয়েছি। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকেও বলেছি।  

আরও পড়ুন

বার বার জামিন নিয়ে অপরাধের রাজ্য গড়েন তারা

জানতে চাইলে ইসলামি আইনজ্ঞ মাওলানা মোস্তফা মাহমুদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ঈদগাহ হচ্ছে একটি পবিত্র জায়গা। নামাজের স্থান। এখানে প্রতি ঈদে নামাজ আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। তাদের এই জায়গাটি যেন অরক্ষিত না থাকে এবং কেউ যেন এখানে অনৈতিক কাজ না করেন সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত। কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।’

সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মাঝে মধ্যেই আমরা জুয়াড়িদের তাড়িয়ে দিই। কিন্তু তারা গোপনে এখানে বসে জুয়া খেলার চেষ্টা করে। আমরা অ্যালার্ট আছি যেন এখানে কেউ অনিয়ম বা অনৈতিক কোনো কাজ না করেন। এই অঙ্গনের পবিত্রতার দায়িত্ব আমার আপনারসহ সংশ্লিষ্ট সবার।’

সুপ্রিম কোর্টের নবীন আইনজীবী মো. সাকিল আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের সুপ্রিম কোর্ট একটি পবিত্র জায়গা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভুক্তভোগীরা বিচার চাইতে আসেন। কিন্তু তারা যদি এখানে এসে দেখেন পবিত্র অঙ্গনে জুয়াড়িদের আখড়া, তাহলে ম্যাসেসটা যাবে কী? নেগেটিভ। এই নেগেটিভ ম্যাসেজ যাক এটা আমরা কেউই চাই না। তাই এখান থেকে জুয়াসহ অন্যান্য সবধরনের বেআইনি কাজ বন্ধ করে দেওয়া হোক। আদালতের পবিত্রতা রক্ষা করা হোক।’

এআইএম/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর