বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আয়ানের মৃত্যু: যা আছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

শিশু আয়ানের মৃত্যুতে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট
শিশু আয়ান। ছবি: ঢাকা মেইল।

সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংস্থাটির মহাপরিচালকের পক্ষে উপ-পরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল ১৫ পৃষ্ঠার এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।


বিজ্ঞাপন


তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়ান ‌চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য আয়ানকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া লাগতো। সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।

প্রতিবেদনের মতামত অংশে আরও বলা হয়, শিশু আয়ানের অপারেশনের সময় স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মতো আর কারও যেন মৃত্যু না হয় এজন্য চার দফা সুপারিশ করেছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। সুপারিশগুলো হলো–

১. হাসপাতালে একাধিক এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া।
২. রোগী ও রোগীর আত্মীয় স্বজনকে এনেসথেসিয়া ও অপারেশনের ঝুঁকিসমূহ ভালোভাবে অবহিত করা।
৩. হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা রাখা।
৪. সরকারের অনুমোদনের পরে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা।


বিজ্ঞাপন


এদিকে আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের শুনানি হতে পারে আজ। একই সঙ্গে আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশনার বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানির কথা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য ছিল। সেদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তদন্তের কোনো অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা না দেওয়ায় এ বিষয়ে শুনানি হয়নি। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন জমা ও আদেশের জন্য ২৮ জানুয়ারি নতুন দিন ঠিক করেন।

এর আগে, চিকিৎসায় গুরুতর অবহেলায় আয়ানের মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শিশুটির পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। এছাড়া হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করে এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর পাঁচ বছরের শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা কীভাবে, কোন কারণে ঘটেছে তা যথাযথ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে (ডিজি) প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের অবহেলা পেলে ব্যবস্থা নিতেও বলেন হাইকোর্ট।

শিশুর বাবা শামীম আহমেদের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে সেদিন রিটের পক্ষে শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম নিজেই শুনানি করেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। এ সময় শিশুটির বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এরও আগে জনস্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম রিটটি দায়ের করেন।

‘লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরল না আয়ান: খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু’ শিরোনামে ৮ জানুয়ারি একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন। পরে রিটে আবেদনকারী হিসেবে যুক্ত হন শিশুটির বাবা শামীম আহমেদ। পাশাপাশি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল ও নতুন রোগী ভর্তি না করাতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করে রিটকারীপক্ষ। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।

তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে আজকের দিন ঠিক করেছেন আদালত।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর