শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কবুতর পালনের সহজ পদ্ধতি

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

কবুতর পালনের সহজ পদ্ধতি

শান্ত একটি পাখি কবুতর। অনেকেই শখের বসে কবুতর পালন করেন। বর্তমানে আমাদের দেশে কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবেও কবুতর পালন করছেন। এই পাখিটি পালনে খুব বেশি জায়গা কিংবা পুঁজির প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, স্বল্প সময়েই কবুতর বাচ্চা দেয়, বাজারে যার দামও বেশি। তাই বেকারত্ব দূর করতে কবুতর পালন ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। 

বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন


বিজ্ঞাপন


পৃথিবীতে প্রায় ১২০ জাতের কবুতর রয়েছে। বাংলাদেশের ২০ জাতের কবুতর পাওয়া যায়। এদের দুই জাতে ভাগ করা হয়- 

স্কোয়াব বা মাংস উৎপাদন জাত
চিত্তবিনোদন জাত

‘জালালি কবুতর’ উন্নত জাতের দেশি কবুতর। মাংস উৎপাদনের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু জাত হলো- হোয়াইট কিং, টেক্সেনা, সিলভার কিং, হামকাচ্চা, কাউরা, হোমার, গোলা, ডাউকা, লক্ষ্যা পক্কা ইত্যাদি। 

শখের বশে যারা কবুতর পালেন তারা বেছে নেন সিরাজী, ময়ুরপঙ্খী, লাহোরি, ফ্যানটেইল, জেকোভিন, মুখি, গিরিবাজ, টাম্পলার, লোটন প্রভৃতি কবুতর। এছাড়া উড়ন্ত অবস্থায় ডিগবাজি খেয়ে মানুষের নজর কাড়ে গিরিবাজ কবুতর। 


বিজ্ঞাপন


kobutor

কবুতর কোথায় পাওয়া যায়?

ঢাকার গুলিস্তানের কাপ্তানবাজারে প্রতি শুক্রবার কবুতর এবং কবুতরের খাবারের বিশাল হাট বসে। এখানে দেশি-বিদেশি প্রায় সব ধরনের কবুতর পাওয়া যায়। চাইলে সেখান থেকে কবুতর সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া শুক্রবার রাজধানীর জিঞ্জিরা, শনিবার পাগলায় হাট বসে। কাপ্তানবাজার ও কাঁটাবনে কিছু স্থায়ী দোকান আছে যেখানে সবসময়ই কবুতর এবং এর খাবার মেলে।   

রাজধানীর বাইরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বিদেশি ও দামি কবুতরের হাট বসে। বাজারভেদে বিভিন্ন দেশি কবুতর ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়।

কবুতর পালনের সহজ পদ্ধতি

কবুতর পালন করতে চাইলে কিছু বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। এগুলো হলো ঘর নির্মাণ, খাদ্য ও রোগ ব্যবস্থাপনা। তিনভাবে কবুতর পালন করা যায়। 

kobutor

মুক্ত পদ্ধতিতে পালন- সকালে কবুতর ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা সারাদিন এদিক সেদিক উড়ে বেড়ায় এবং খাদ্য খায়। মাঝেমধ্যে ঘরে আসে। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে আসে। 

আবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন- আবদ্ধ ঘরে কবুতর পালন করা হয়। ঘরের ভেতর কবুতরের বাসা বা খোপ তৈরি করে দিতে হয়। বহুতল খাঁচায়ও এই পদ্ধতিতে পালন করা যায়।

অর্ধআবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন- এক্ষেত্রে বহুতল ঘর তৈরি করতে হয়। বড় আঙিনায় থাকে। কবুতর দূরে যেতে পারে না।

কবুতর পালনের জন্য সবার আগে ঘর তৈরির পদ্ধতি জেনে নিতে হবে। উঁচু স্থানে ঘর তৈরি করতে হবে যেন ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখি কবুতর খেয়ে না ফেলতে পারে। যথেষ্ট পরিমাণ শক্ত করে ঘর বানাতে হবে। কবুতরের ঘর তৈরির জন্য হালকা কাঠ, বাঁশ ও বাঁশের চাটাই, শন, পলিথিন, খড় ইত্যাদি সহজলভ্য উপকরণ ব্যবহার করুন। 

প্রতি জোড়া (একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী) কবুতরের জন্য এক বর্গফুট করে ঘরের প্রয়োজন হয়। জায়গা কম থাকলে একই জায়গায় কবুতরের ঘর কয়েক তলা করা যেতে পারে। এতে খরচও বাঁচে, জায়গাও বাঁচে। ঘরের সামনে অবশ্যই ৫ থেকে ৬ ইঞ্চির বারান্দা রাখতে হবে যেন কবুতর সহজে দূর থেকে উড়ে এসে আশ্রয় নিতে পারে আবার খাবারও খেতে পারে। প্রতি ঘরের দরজা রাখতে হবে ৪ ইঞ্চি বাই ৪ ইঞ্চি। 

kobutor

কবুতরের ঘর এমন জায়গায় করতে হবে যেখানে সহজে আলো বাতাস প্রবেশ করে। বৃষ্টির পানি, ঝড়ো বাতাস ও শৈত্যপ্রবাহ যাতে না ঢুকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরের সামনে খাদ্য ও পানির পাত্র রাখতে হবে। এছাড়া খড়কুটো এবং শুকনো ঘাসও রাখতে হবে যেন কবুতর ডিম পাড়ায় স্থান তৈরি করতে পারে।  

কম খরচে কবুতরের খাবার

কবুতর সাধারণত জোয়ার, ভুট্টা, ধান, চাল, কলাই, কাউন, মটর, খেসারি, সরিষা, গম ইত্যাদি খেয়ে থাকে। প্রতিদিন প্রত্যেকটি কবুতরের জন্য ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম খাদ্য প্রয়োজন। কবুতরকে রোগবালাই থেকে দূরে রাখতে চাইলে অবশ্যই সুষম খাবার দিতে হবে। 

বাজারে কবুতরের খাবার পাওয়া যায়। চাইলে ঘরেও কবুতরের সুষম খাদ্য তৈরি করা যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যে ভুট্টা ভাঙা ৩৫ গ্রাম, গম ভাঙা ২০ গ্রাম, সরিষা দানা ১৫ গ্রাম, ছোলা ভাঙা ২০ গ্রাম, সয়াবিন ভাঙা ৫ গ্রাম, চালের কুঁড়া ৪.৫ গ্রাম, লবণ ০.৫ গ্রাম রাখুন। 

আরও পড়ুন-
আচার, বালাচাও বিক্রি করে সফল হুমায়রা

কবুতর পালনের লাভ-লোকসান

পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর একসঙ্গে জোড়ায় বসে। প্রাকৃতিকভাবে এদের প্রজনন হয়। নিজেরাই খড়কুটো দিয়ে বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ে। ৪-৫ মাস বয়সে স্ত্রী কবুতর ২৮ দিন পর পর ২ দিন ব্যবধানে ২টি করে ডিম পাড়ে। নতুন জোড়া তৈরি করতে চাইলে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর এক ঘরে খাদ্য-পানি দিয়ে ৭-১৪ দিন আবদ্ধ করে রাখতে হয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে ১৮ দিন। স্ত্রী ও পুরুষ কবুতর পালাক্রমে ডিমে ‘তা’ দেয়। বাচ্চার দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হয়। 

kobutor

জন্মের পর ১০ দিন পর্যন্ত বাচ্চা কোনো বাইরের খাদ্য খায় না। এ সময় মা-বাবার খাদ্যথলি থেকে দুধজাতীয় খাদ্য পরস্পরের মুখ লাগিয়ে গ্রহণ করে। বাচ্চার বয়স ২৮ দিন পর্যন্ত ঠোঁট দিয়ে খাদ্য দানা খেতে পারে না। মা-বাবা দানাদার খাদ্য ছোট টুকরা করে বাচ্চার মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। ২৮ দিন পর বাচ্চার পাখা গজায় এবং নিজে খাবার খেতে পারে। 

সাধারণত একটি ভালো জাতের কবুতর বছরে ১২ জোড়া ডিম দিতে সক্ষম। প্রায় প্রতিটি ডিম থেকেই বাচ্চা পাওয়া যায়। এই বাচ্চা ৪ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়। দেশের বাজারে কবুতরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কবুতর পালনের মাধ্যমে লাভবান হওয়া সহজ। 

আরও পড়ুন- 
শিক্ষার্থী নাবীউলের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

কবুতরের রোগ কমই হয়। খাদ্য বা পানির মাধ্যমে দেহে জীবাণু প্রবেশ করে রোগ হতে হতে পারে। তাই জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হবে। অন্য প্রাণী থেকে কবুতর দূরে রাখতে হবে। এদের ঘর প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। কবুতরের সুস্থতার জন্য সুষম খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার খুব জরুরি। কোনো কবুতর অসুস্থ হলে তাকে আলাদা রাখুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাহলে লোকসান গুণতে হবে না। 

ঠিক নিয়ম মেনে পালতে পারলে ৩০ জোড়া উন্নত জাতের কবুতর পালনে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে প্রথম বছর প্রায় ৮০ হাজার টাকার বাচ্চা বিক্রি করা সম্ভব। দেশি জাতের ৩০ জোড়া কবুতর পালন করলে ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে প্রথম বছর ৫০ হাজার টাকার বাচ্চা বিক্রি করা যায়। 

কবুতর পালন করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। এটি আত্মকর্মসংস্থান বাড়তি আয় ও দারিদ্র্য বিমোচন করতে সক্ষম। কবুতরের বিষ্ঠাও জৈবসার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা যায়। কবুতর পালনে পুঁজি কম লাগে, দ্রুত বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া যায়। তাই যেকেউ আয়ের মাধ্যম হিসেবে কবুতর পালনকে বেছে নিতে পারেন। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর