শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘বন্ধুদের চড় পর্যন্ত খেতে হয়েছে’

পিয়াস সরকার
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

‘বন্ধুদের চড় পর্যন্ত খেতে হয়েছে’

আমার শিক্ষাজীবনে অনেক স্ট্রাগল ছিল। এটা শুরু হয় প্রাইমারি স্কুল থেকেই। আশপাশের মানুষজন স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতো না। আবার বাবা-মাকে আশপাশের লোকজন বোঝাত- এরকম সন্তান থাকা পরিবারের জন্য অশুভ। পড়াশোনা করে কি হবে, ভবিষ্যতে চাকরি তো হবে না। এরপরও যখন প্রাইমারিতে আমি ভর্তি হই, ছেলেরা অনেক বুলিং করতো। শারীরিকভাবে আঘাত করত, এমনকি থাপ্পড় মারত- এভাবেই নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থী অঙ্কিতা ইসলাম।

তিনি বলেন, এই বুলিংয়ের জন্য আমাকে অনেক পথ ঘুরে স্কুলে যেতে হতো। স্কুলে গিয়েও শান্তি পেতাম না। ওই বয়সে আসলে নারী পুরুষ কিংবা ট্রান্সজেন্ডার- কিছুই বোঝা যেত না। তারপরও কত যে সমস্যার সম্মুখীন হই আমি! তখন আমার মনে হতো- যত যাই হোক আমাকে পড়াশোনা শেষ করতে হবে। আমার সাথে যে অন্যায়টা হচ্ছে এর প্রতিবাদ করার জন্য পড়ালেখা জানাটা জরুরি মনে করেছি।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন: ‘সারাজীবন বিনা পারিশ্রমিকে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের ইচ্ছা আমার’

অঙ্কিতা বলেন, এরপর হাইস্কুলে গেলাম। সেখানেও বুলিংয়ের শিকার হই। এরপর যখন বয়ঃসন্ধিকাল আসলো তখন আরও সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করলাম। ট্রান্সজেন্ডারের যে বৈশিষ্ট্যগুলো তখন ফুটে ওঠা শুরু করল। এই সময়টায় মা-বাবা এবং বন্ধুদের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, কিন্তু আমি পুরো সময়টাতে বুলিংয়ের শিকার হয়েছি। মা-বাবাকেও ঠিকমতো বলতে পারতাম না। একটা সময় আমি নিয়মিত স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কলেজেও আমি একইভাবে বুলিংয়ের শিকার হই।

টাঙ্গাইল জেলার নান্দুরিয়া এলাকায় বড় হই আমি। এরপর অনার্সের জন্য ভর্তি হয়ে সরকারি সা'দত কলেজ, টাঙ্গাইলে। অনার্সেও আমাকে বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। আমি অনেক হতাশ হয়ে পড়ি। একটা সময় মনে হতো- আমি যদি মারা যাই, আমিও মুক্তি পাব, আমার পরিবারও মুক্তি পাবে। একসময় আমি আত্মহত্যা-প্রবণ হয়ে যাই। এরপর আমি ফেসবুকে কয়েকজন ট্রান্সজেন্ডারের জীবন দেখি। তাদের জীবন ইতিহাস দেখে আমার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। নিয়মিত ক্লাস না করেই আমি অনার্স শেষ করি। এরপর আমি চাকরিতে যোগ দেই এবং কাজের ভালো একটা পরিবেশ পাই। এখানে চাকরিতে থাকা অবস্থায় মনে হয় আমার এমবিএ করা প্রয়োজন।

>> আরও পড়ুন: ‘সেদিন চোখের সামনে কিয়ামত দেখেছি’


বিজ্ঞাপন


অঙ্কিতা বর্তমানে ব্রাক ব্যাংকে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সাহস পাই নাই। এত মানুষ, নতুন পরিবেশ, বাড়ির বাইরে থাকা- এসব করতে সাহস পাই নাই। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়া হয় নাই। আমার এক ভাই। বাবা সৌদিপ্রবাসী ছিলেন। আমাদের আর্থিক অবস্থা এতটা ভালো ছিল না। এরপর এমবিএতে আমি সুযোগ পাই। মেধাতালিকায় নাম আসে।

গত বছর ডিসেম্বরে অঙ্কিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ (ম্যানেজমেন্ট) ভর্তি হন।  তিনি বলেন, এখানে কোর্স ফি অনেক বেশি। এরপর উপাচার্য স্যারের সাথে দেখা করি। উনি আমাকে স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন।

>> আরও পড়ুন: ‘প্রবৃদ্ধির পেছনে না ছুটে বাজার স্থিতিশীল রাখায় জোর দিতে হবে’

আমি ব্র্যাক ব্যাংকে কর্মরত আছি। আমার বাবা কৃষক। আমার ভাই এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আমার কারণে আমার ভাইও অনেক বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। বাবা-মা-ও অনেক বুলিংয়ের শিকার হন। অনেক কান্নাকাটিও তারা করেছেন।

অঙ্কিতা ইসলাম বলেন, শুধু ব্যক্তি হিসেবে আমার কমিউনিটির মানুষদের জন্য ভালো লাগছে। তাদের ভবিষ্যতে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা চালু হচ্ছে- এটাও অনেক আনন্দের। আমরা শিক্ষার আলো পাব এতে। এটা দেশের জন্য ভালো। আমি চাকরি করছি। পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছি। এটা নিশ্চয়ই দেশের জন্যও ভালো।

পিএস/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর