বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘প্রবৃদ্ধির পেছনে না ছুটে বাজার স্থিতিশীল রাখায় জোর দিতে হবে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ জুন ২০২২, ১০:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

‘প্রবৃদ্ধির পেছনে না ছুটে বাজার স্থিতিশীল রাখায় জোর দিতে হবে’

রাত পোহালেই জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট। এবারের বাজেটে প্রবৃদ্ধির পেছনে না ছুটে বাজারকে স্থিতিশীল করা, এটার মাধ্যমে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে রক্ষা করায় অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বিশেষ ফেলো, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। পাশাপাশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের উপর এবারের বাজেটে জোর দেয়া উচিত বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বাজেট পেশ করার প্রাক্কালে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাতকারে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেছেন। 


বিজ্ঞাপন


এবারের বাজেটে কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত?

প্রথমবারের মতো গত ১০ বছরে বিভিন্ন খাতওয়ারী আলোচনার চেয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিক স্থিতিশীলতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। তার ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি, খাদ্যপণ্যের দামের বিষয়টি আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এসেছে। কাজেই আগামী বাজেটের মূল লক্ষ্যটাই হওয়া উচিত প্রবৃদ্ধির পেছনে না ছুটে বাজারকে স্থিতিশীল করা এবং এর মাধ্যমে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে রক্ষা করা। পাশাপাশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের উপর জোর দেয়া উচিত এবারের বাজেটে।

অর্থনীতিতে বাংলাদেশ কী আবার ধাক্কা খেল?

এই মুহূর্তে অর্থনীতিতে ধাক্কা না হোক এক ধরণের ঝাঁকি তো আছে। সেই ঝাঁকির কয়েকটি কারণ আছে। যেমন এই মুহূর্তে বৈশ্বিক পরিস্থিতির যে পরিবর্তন হয়েছে সে চাপ আমাদের উপর আছে। এছাড়াও সরকার ২০১৩-১৪ সালের পর থেকে কোনো ধরণের সংস্কারমূলক পদক্ষেপে যায়নি। সেটা কর কাঠামোই হোক, কিংবা সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রেই হোক বা স্থানীয় সরকারের ব্যাপারে হোক তারা করেনি। এরসাথে যেটা আছে তা হলো সরকারের নীতি এবং নেতৃত্বটা খুবই দুর্বল মনে হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


অর্থাৎ সরকার ঘটনার পেছনে ছুটেছে। কিন্তু ঘটনার প্রাক অনুমান করেনি। যার ফলে সরকার এখন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে কিন্তু সেগুলো অপর্যাপ্ত। এখানে আমি বড় সমস্যা দেখছি। আমার মনে হয় রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ছাড়া অর্থনীতির ঝাঁকি থেকে বের হওয়ার পথ নেই।

আর্থিক খাতের সংস্কারের কথা অনেকদিন ধরে বলা হয়। কি বলবেন?

দেখুন সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সেখানে মাত্র কর দেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছে মাত্র ৭৫ লাখ মানুষ। তারমধ্যে ২৩ লাখ মানুষ মাত্র কর দেয়। এদের বড় একটি অংশই হলো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর আমাদের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী। এদের বাদ দিলে যাদের ঢাকা, ঢাকার বাইরে বিত্তবৈভব দৃশ্যমান তাদের তো করের আওতায় আনতে পারছি না।

উপরন্তু দেখুন ৩ লাখের যে সীমা আছে সেটা দুইবছর বাড়েনি, শুনেছি এবারও বাড়বে না। এটা তো অন্যায় হবে মধ্যবিত্তদের ওপর। সুতরাং যারা কর দেয় তাদের ওপর  অত্যাচার না বাড়িয়ে আরো বেশি করের আওতা বাড়ানো উচিত। এখানে অনেক বড় অংকের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

বলা হয় বড় বাজেট আসছে। আপনার মূল্যায়ন কী?

আমি তো বিশ্বাস করি না বড় বাজেট আছে। এটা যারা বলেন তারা হয়তো অর্ধসত্য বলেন। কারণ টাকার অংক দিয়ে কখনো বাজেটের আয়তন ঠিক হয় না। এটা ঠিক হয় অর্থনীতির আয়তন কত সেই অনুযায়ী বাজেট কত। অর্থাৎ নিঃসন্দেহে টাকার অংকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট অনেক বড় হবে। আরো অনেক দেশ আছে যাদের বাজেটের টাকার অংক অনেক বেশি। 

কিন্তু এটা তো এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে জিডিপির ১৩-১৪ শতাংশের উপরে রাষ্ট্রীয় বাজেট দিতে পারিনি। সুতরাং সরকারের পক্ষ থেকে যখন বলা হয় যে এত লক্ষ টাকার বাজেট তখন এক ধরণের বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এটা এক ধরণের আর্থিক ভেলকির মতো।

বাজেটের বড় একটা অংশ ভর্তুকিতে চলে যায়। এটা নতুন করে সাজানোর কোনো দরকার আছে?

উত্তর হলো হ্যা এবং না। হ্যা এজন্য যে যেসব খাতে ভর্তুকি আছে সেটা বিদ্যুৎ হোক, খাদ্য, কৃষি কিংবা রেমিট্যান্সের জন্য হোক, কিংবা রফতানির জন্য হোক এরমধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রয়োজন আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেটা হার এবং পরিমাণের।

মনে রাখতে হবে এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ আসতে হবে ভর্তুকিতে। এটা ৬০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা হলেও তা অস্বাভাবিক হবে না। সেটার মাধ্যমে খাদ্য এবং জ্বালানি এই দুটি খাতকে স্থিতিশীল রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এটা দিয়েই মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা, ক্রয়ক্ষমতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কি বলবেন?
 
প্রথমে বাংলাদেশে বসে আপনি চুরি করলেন। তারপর চুরি করে বিদেশে পাচার করলেন। এখন সেই ডাবল চুরির টাকা সোনার চামচ দিয়ে আবার দেশে আনার চেষ্টা করছি। এটা যদি সত্যি সরকার করে তাহলে দুদক বন্ধ করে দেয়া উচিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনানসিয়াল ইনটেলিজেন্ট ইউনিট আছে সেটা বন্ধ করে দেয়া উচিত, পিকে হালদারকে সমস্ত কেস বন্ধ করে ফুলের মালা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা উচিত।

অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে কি নতুন আর্থিক বছর শুরু হচ্ছে? 

অনেক ধরণের অনিশ্চয়তা আছে।এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই। সেটার বৈশ্বিক কারণে, আঞ্চলিক কারণে, অভ্যন্তরীণ কারণ আছে। তবে এটাই কিন্তু নেতৃত্বের যোগ্যতা প্রমাণের সময়। অনেক দুর্যোগে দেশের মানুষ তা মোকাবেলা করে নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়েছে। করোনার সময় যেভাবে ডিজিটাল সিস্টেমে নিবন্ধন করে এ কোটি মানুষকে টিকা দিলাম এটার মাধ্যমে আমাদের সামর্থ্য প্রমাণ হয়েছে। আমি ভরসা করে আছি সামনেও মানুষ সামর্থ্য দেখাবে।

বিইউ/ একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর