শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘ব্যক্তিগত কোনো এজেন্ডা নেই, একটি সুন্দর ডাকসু নির্বাচন করতে চাই’

মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৭:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

DU
অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ছবি: ঢাকা মেইল

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি কেবল একজন শিক্ষাবিদ নন, উন্নয়নবিষয়ক বিশ্লেষক ও পরিকল্পনাবিদ হিসেবেও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। উদ্ভাবন, গবেষণা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং আধুনিকায়নের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের পর্যায়ে এগিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তিনি। সবার অংশগ্রহণে এক নতুন দিগন্তের পথে পরিচালিত করছেন দেশের শীর্ষ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে। গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গণতান্ত্রিক অংশিদারিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ছয় বছর পর দেশের ‘দ্বিতীয় পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি ও অভ্যুত্থানপরবর্তী ক্যাম্পাস রাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গে উপাচার্যের মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকা মেইলের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুস সবুর (লোটাস)।

ঢাকা মেইল: ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে জানতে চাই। একই এই নির্বাচন আয়োজনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন- সে সম্পর্কেও কিছু বলুন।


বিজ্ঞাপন


অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: এটা আসলে এমন বিষয় নয় যে, আমি রাতে স্বপ্ন দেখার পর শখ করে মাঠে নেমেছি। এটি ছিল ছাত্রদের দীর্ঘ দিনের দাবি। গত বছরের অক্টোবর মাসের ২৬ তারিখ আমরা এগুলো নিয়ে প্রথম আলাপ শুরু করেছিলাম। ডিসেম্বর থেকে সব অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করি। লোকজন বিরক্ত হয়ে এক পর্যায়ে আমাদের ‘কমিটি প্রশাসন’ নাম দিয়েছিল। কিন্তু আমরা নিজেদের কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করার জন্য চেষ্টা করছিলাম। গত প্রায় নয় মাসে ৭০টির বেশি মিটিং করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডাকসু নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অসংখ্য সভা করেছি। এসব করে বৃহত্তর একটা ঐকমত্য না হলেও একটা সমঝোতা নিয়ে এসেছি যে, আমরা ডাকসুটা করতে চাই। ডাকসু নির্বাচন আমাদের ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আমরা একটি গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এই নির্বাচনের আয়োজন করছি। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের অধিকার ও অংশিদারিত্ব নিশ্চিত করবে প্রশাসন।

ঢাকা মেইল: বর্তমান পরিস্থিতি ডাকসু নির্বাচনের জন্য কতটুকু উপযোগী বলে মনে করছেন?

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সব ধরনের অংশীজনের সঙ্গে আমরা আলাপ করেছি। শিক্ষকদের বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ করেছি। বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেছি। বড় দুটি কমিটি দীর্ঘদিন এসব নিয়ে কাজ করেছে। তবে শতভাগ প্রুভ বলে কোনো কথা নেই। আমরা ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখার ব্যাপারে নিয়মিত কাজ করছি। এটা জান্নাতও নয়, এটা মর্ত্যলোকের পৃথিবী, ফলে কেউ এসে বলে দেবে না যে, এখন পরিস্থিতি শতভাগ ভালো আর আপনি কাজ শুরু করুন। এটা আপেক্ষিক বিষয়। আমি যদি ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ না করি, কোনো কিছু গোপন না করি, আর যা করছি তা সবাইকে বলে দিচ্ছি, তাহলে ভয়ের কিছু নেই। এইটুকু সৎ সাহস আমরা আছে। তবে এই বৃহৎ কাজে ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতা দুটোই রয়েছে। আমি আসলে কোন বিষয়টাকে গুরুত্ব দেব সেটা মূল বিষয়। সবার সহযোগিতায় সুষ্ঠু ও সুন্দর ডাকসু নির্বাচন করতে চাই।

আরও পড়ুন

‘খবরদারি নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া উচিত’

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানেই হাত দিই, সেখানে নতুন করে কাজ শুরু করতে হচ্ছে’

ঢাকা মেইল: এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের থ্রেট বা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি?

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: কোনো একক ঘটনার কথা বলতে চাইছি না। মোটাদাগে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যাও নেই। সর্বোপরি নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন কোনো থ্রেট আশঙ্কা করছি না। তবে এমন কিছু এলে আপনাদের অবশ্যই জানাবো। বিভিন্ন অংশীজন থেকে কিছু পরামর্শ আসছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। যেমন সাইবার বুলিং নিয়ে পরামর্শ ছিল, সেটার ব্যাপারে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিয়েছি। নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু অভিযোগ ছিল, সেগুলোও সমাধানের জন্য কাজ করছি।

DU1
নানামুখী চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে কাজ করছেন উপাচার্য। ছবি: ঢাকা মেইল

ঢাকা মেইল: নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আপনাদের পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: এখন আমরা নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করছি। এটি শুধু প্রতীকী অর্থে নয়, বরং প্রকৃত অর্থে কাজ করছি। আমরা এখন আর তাদের ওপর প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ফলাও করছি না। তারা যেভাবে গাইড করছে সেভাবে কাজ করছি। দফায় দফায় সভা করে আমরা ছয়টি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় পর্যাপ্ত লাইটিং, ১৮৬টি সিসি ক্যামেরা সচল রয়েছে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলাও বাহিনী কাজ করছে। 

আমাদের নিজস্ব ১৯ জনের প্রক্টরিয়াল টিমও কাজ করছে। অন্যদিকে ডাকসু ও প্রক্টরিয়াল বডির জন্য সেভাবে আলাদা কোনো বাজেট নেই। আবার বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ৫১ কোটি টাকার ঘাটতিতে রয়েছে। সব দিক মিলিয়ে আমরা বাজেটের বিভিন্ন অংশ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে একটা বাজেট জোগাড়ের চেষ্টা করছি। আমাদের সীমাবদ্ধতা প্রচুর, তারপরও এটি একটি জাতীয় দায়িত্ব। ব্যাপকসংখ্যক অংশীজন এটা চায়। এজন্য সাহস করে মাঠে নেমেছি। আমরা সর্বোচ্চ ভালো কিছুর চেষ্টা করব। এখানে কোনো ধরনের লুকোচুরি করব না।

ঢাকা মেইল: বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ও ক্যাম্পাসে কেমন রাজনীতি হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নির্ধারিত কিছু রাজনীতি করার কাঠামো দেওয়া রয়েছে। অধ্যাদেশের আওতায় থেকে রাজনীতি করার অধিকার সবার রয়েছে। সেই হিসেবে সবাই রাজনীতি করবে। তাহলে সমস্যা কোথায় হচ্ছে, সেটা হলো রাজনীতির নামে অন্ধ দলীয়পনার কারণে একটা নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল। যেটা এমনই ভয়াবহ, যার কিছু উদাহরণ হতে পারে গেস্টরুম কালচার। যেখানে পড়াশোনার চেয়ে দলীয় প্রোগ্রাম সফল করাই হলো আসল ব্যাপার। এছাড়া এসব কাজে কেউ না এলে প্রেসার দেওয়া ও অনেক পর্যায়ে শারীরিক আক্রমণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেরে পর্যন্ত ফেলা হয়েছে। এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভয় ও ট্রমা রয়েছে। এছাড়া অভিভাবকদের মধ্যে প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছিল, এমন রাজনীতি যাতে অনুমোদন দেওয়া না হয়। এক্ষেত্রে দুটি কমিটি রয়েছে, যারা সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে সমঝোতার মধ্যে যতটুকু করা যায়। এছাড়া ডাকসু সামনে রেখে সব দল হল ও ক্যাম্পাসে সমানভাবে রাজনীতির সুযোগ-সুবিধা পাবে। এসব করতে কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাবো। তবে এখন মূল ভূমিকা পালন করবে নির্বাচন কমিশন। তারা যা বলবে তাই করব আমরা।

আরও পড়ুন

‘ফেব্রুয়ারিতেই ভোট, ৫০ বছরেও আ.লীগের ফেরার সম্ভাবনা দেখি না’

‘পুলিশের মোরাল একদম পড়ে গিয়েছিল, এখন শতভাগ ঠিক’

ঢাকা মেইল: বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে আপনার কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে?

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: প্রথমেই আমি রিসার্চের ভিত্তি শক্তিশালী করতে চাই। তার জন্য আমরা সরকারের ওপর নির্ভর হতে চাই না। কারণ সরকার যা দেয় সেটা দিয়ে শুধু শিক্ষকদের কোনোরকম বেতন ভাতা হয়, যেটাও সাউথ এশিয়ার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কেলের নয়। আমাদের সবার বোঝা দরকার যে, নিজেদের রিসোর্চ মোবিলাইজ করতে হবে। এটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারের নয়। উপাচার্যসহ প্রশাসনিক দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদের মেরুদণ্ড শক্ত রাখতে হবে, পরিষ্কার কথা। এখানের দায়িত্ব নিয়ে অ্যামিবা হতে পারবে না। মেরুদণ্ড সম্পূর্ণ প্রাণী হিসেবে অবস্থান রাখতে হবে। সেটা করতে না পারলে স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করা যাবে না। এবারের বাজেটে গবেষণার জন্য ২২ কোটি টাকা আছে, যেটা বাজেটের ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। এখন এটা শুনলেই বোঝা যায়, এটা শুধু অপ্রতুল নয় বরং দুশ্চিন্তারও কারণ। তাহলে আমরা কী করছি? প্রাইভেট সেক্টরের মোবিলাইজেশনের চেষ্টা করছি। তবে এটা রাতারাতি সম্ভব নয়। আমাদের ট্রাস্ট ফান্ডের পরিমাণ বেড়েছে, অ্যালমনাইসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এখানে আপনিও পড়াশোনা করেছেন। আপনারা আমাদের রিসার্চে সহযোগিতা করুন- এমন প্রস্তাব সবার কাছে করা হয়েছে। এছাড়া একাডেমি ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে মেলবন্ধনের কাজ চলছে, এখানে বেশ কিছু বড় প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। যেগুলোর জন্য রিসার্চের ফান্ড ম্যানেজের চেষ্টা চলছে।

DU-VC3
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভিসির দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মেইল: কোন কোন উপায়ে গবেষণা ফান্ড সংগ্রহের চেষ্টা করছেন?

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের অসাধারণ কিছু গবেষক রযেছেন, যারা ব্যক্তি পর্যায়ে ফান্ড নিয়ে আসতেন। ভালো গবেষক যারা নিজেদের যোগ্যতায় ফান্ড নিয়ে আসতে পারেন। এতদিন তারা ব্যক্তি পর্যায়ে কাজ করতেন। সেটা আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করতে চাচ্ছি। ভালো গবেষক ও শিক্ষক হলে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ দেখার বিষয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা নিয়ে আসার জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পান সেটার চেষ্টা করছি। আগে তাদের লুকিয়ে কাজ করতে হতো, এসব যাতে না করতে হয় সেটার জন্য আমরা কাজ করছি।

এছাড়া ইউনেস্কো চেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে। এটা একটা বিশাল  ব্যাপার। কারণ এটির একটি আন্তর্জাতিক সম্মান রয়েছে। এটার উদ্যোগ আগেই নেওয়া হয়েছিল, আমরা সেটা কার্যকর করেছি। এছাড়া আমরা ভিজিটিং প্রফেসরশিপ চালু করেছি। এরইমধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে প্রফেসর এসেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন প্রফেসররা আসবেন।

ঢাকা মেইল: বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ঢাবি কেন ভালো জায়গায় যেতে পারছে না?

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: র‌্যাঙ্কিংয়ে ভালো করার জন্য আমরা একটা বড় কমিটি গঠন করেছি। এর জন্য প্রায় ২১টি ফ্রন্টে কাজ করতে হয়। আমরা সব দিকে কাজ শুরু করেছি। র‌্যাঙ্কিংয়ে কিছুটা উন্নতিও হয়েছে। তবে এখানে আত্মতৃপ্তির কোনো জায়গা নেই। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে, যেটার আসলে কোনো একাডেমিক মূল্য নেই।

জাতি আশা করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। বায়ান্ন থেকে শুরু করে চব্বিশের গণঅব্যুত্থান পর্যন্ত এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনও করেছে। তবে এই কাজটি করতে গিয়ে একাডেকি ফোকাসড অনেক সময় ভিন্ন দিকে চলে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিরতার কারণে বন্ধ থেকেছে এবং একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের নামে ৮০০ কোটি টাকার বাণিজ্য!

‘মানসিক চাপে’ ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

ঢাকা মেইল: এই বিশ্ববিদ্যালয় কি ইন্ডাস্ট্রির দক্ষ জনবল সরবরাহ করবে নাকি দেশীয় স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেবে?

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এটি সর্বজনতার প্রতিষ্ঠান। এর প্রতি জাতির একটা দাবি রয়েছে। আমাদেরকে তারা অনেকভাবে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে, ফলে তাদের প্রতি একটা দায়ও আছে। এখন বৃহত্তর প্রশ্ন হলো, বিশ্ববিদ্যারয়কে যদি এসব দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়দাগে একটি রাজনৈতিক আধিপত্য থাকবে। সেটা যদি আপনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় এভাবেই করা উচিত, তাহলে আমি কিছু বলব না। যদি আপনি মনে করেন, রাজনীতির বাইরে একাডেমিতে ফোকাসড করতে, তাহলে জাতিকে ওই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এর জন্য বৃহত্তর সামাজিক বোঝাপড়া জরুরি।

DU2
ঢাকা মেইলের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ঢাবি ভিসি। ছবি: ঢাকা মেইল

এই বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই দেশের সব সংকটে সাড়া দেবে। গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে রিকশাওয়ালা, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। ওই সময়ে ১৭ ও ১৮ জুলাইয়ের পর সবাই বলছিল, অল আইস অন ডিইউ। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সেটির জন্য সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এই বৃহত্তর ঐক্য যদি আমরা না গড়তে পারতাম, তাহলে এত শক্তিশালী নিবর্তনমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব ছিল না। গত শাসনামল শুধু রাজনৈতিক শাসনামল নয়, এটি অত্যন্ত গভীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও বটে। এটি শুধু একটি শুধু সরকারকে পরিবর্তন করার ব্যাপার নয়, এটি একটি আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন। যেটা গত ১৫ বছরে দিনে দিনে শেকড় গজিয়ে শক্তিশালী হয়েছিল। সেটাকে পরাভূত করা কোনো সহজ ব্যাপার ছিল না। সেই যে অসাধারণ ঐক্য তৈরি হয়েছিল, সেটার জন্য সবাইকে গভীরভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই। এটা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একক কৃতিত্ব নয়। আমরা সবাইকে নিয়েই করেছিলাম।

ঢাকা মেইল: গণঅভ্যুত্থানের পর পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যাওয়ার অবস্থা থেকে নির্বাচনী পরিবেশ কীভাবে তৈরি করলেন?

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: আমরা একটা বিশেষ ও জটিল সময়ে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন ঘটনা আর নেই। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ, হলগুলো ভাসমান অবস্থায় ছিল। ফলে আমাদের প্রথম কাজ ছিল একাডেমিক কাজ চালু করা। যেটা আমরা এক মাসের মধ্যে চালু করতে সক্ষম হয়েছিলাম। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার কাজ শুরু করি। একাডেমি চালুর পর আমরা হলগুলো ভিজিট শুরু করি। হল প্রশাসন ধীরে ধীরে গঠিত হলো, তারপর নিয়মশৃঙ্খলা তৈরি হলো। আমরা জানি, অস্বাভাবিক রাজনীতির কারণে রাজনীতি আমাদের কুড়ে কুড়ে খেয়েছে। তবে বর্তমানে এতটুকু শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে বলতে পারি যে, মহসীন হলের ২০৫ নম্বর রুমে কে থাকে সেটা আমরা বলে দিতে পারি।

আরও পড়ুন

২০০ কোটির তহবিলেও দুঃখ ঘোচেনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের

এইচএসসির ৪ বিষয়ের প্রশ্নপত্র ভুলে ভরা!

অভ্যুত্থানপরবর্তী ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক ট্রমা, দুঃখ ও ক্ষোভের জায়গা ছিল, আবার কিছুটা আনন্দেরও। কারণ দীর্ঘদিনের একটা ক্ষমতাশীন অবস্থা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তারপর আমরা ট্রমা ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে গুরুত্ব দিলাম। মনবৈঠক নামের একটা প্রোগ্রাম চালু করলাম। আমাদের মনোবিজ্ঞান ও কাউন্সিলিং বিভাগের সহযোগিতায় এটা পরিচালিত হয়েছে। এটি ব্যাপকভাবে হলগুলোতে কাজ করেছে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সবার দরজা সব সময় খোলা রাখলাম। যাতে যে কেউ আসতে পারে। আমরা নিয়মিত তাদের কথা শুনলাম, আমার অফিসে সারাক্ষণ মানুষ আসে। অনেক সময় বিশৃঙ্খলা তৈরি হলো, তাও সবকিছু খোলা রেখেছিলাম। এভাবে ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে।

ঢাকা মেইল: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ: আপনাকেও।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর