# নতুন সিলেবাসে এক বছর পড়াশোনা করেই পরীক্ষা
# হঠাৎ সিলেবাস পরিবর্তন, বই পেতেও দেরি
# কারিকুলাম পরিবর্তনে যথেষ্ট সময় দেওয়ার দাবি
‘নবম শ্রেণির এক বছর একটা সিলেবাসে পড়াশোনা করেছি। তারপর দশম শ্রেণিতে ওঠার পর শুনতে পাই আমাদের সিলেবাস পরিবর্তন হবে। নতুন সিলেবাসের বই পেতে ফেব্রুয়ারি মাস পার হয়ে যায়। সবশেষ কিছুদিন আগে আমাদের এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। বছরের শুরু থেকে এক ধরনের মানসিক চাপে ছিলাম।’
বিজ্ঞাপন
কথাগুলো বলছিল রাজশাহী রিভারভিউ স্কুলের ছাত্র সামিন (ছদ্মনাম)। সে ওই স্কুলের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
হঠাৎ সিলেবাস পরিবর্তন হওয়ায় শুধু সামিন নয়, লাখ লাখ শিক্ষার্থী নানা ধরনের মানসিক চাপে ভুগছে। দেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম এসএসসি ব্যাচ, যারা এক বছর একটি সিলেবাসে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে।
এসএসসি পরীক্ষার্থী সামিন আরও বলে, ‘আমাদের বই পেতে দেরি, সিলেবাস পেতে দেরি, কিন্তু পরীক্ষা হবে সঠিক সময়ে। এত অল্প সময়ে এত বড় সিলেবাস পড়তে হচ্ছে। হঠাৎ করে সিলেবাস পরিবর্তন হওয়ায় অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আসলে আমরা যা পড়ছি সেগুলো কি আসলেই সিলেবাসে আছে কি না সেটা নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। সবশেষ জুন মাসে আমাদের সিলেবাস প্রকাশ করা হয়।’
>> আরও পড়তে পারেন
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, সাধারণত দুই বছর পড়াশোনার পর এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ২০২৬ সালের এই এসএসসি ব্যাচ দেশের সবচেয়ে ব্যতিক্রম। কারণ তারা নতুন একটি সিলেবাস মাত্র এক বছর পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিচ্ছে। হঠাৎ নতুন সিলেবাস এবং সময় স্বল্পতা শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কারিকুলাম পরিবর্তন করা হলে যথেষ্ট সময় দেওয়া উচিত বলে মনে করেন অভিভাবকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চালু করা ‘নতুন শিক্ষাক্রমে’ নবম-দশম শ্রেণির বিভাগ বিভাজন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর ২০২৫ সাল থেকে আবার বিভাগ বিভাজন ফিরেছে। সে ঘোষণা অনুযায়ী, বিভাগ বিভাজন ফিরিয়ে এনে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, প্রশ্নের ধরন ও নম্বর বণ্টন প্রকাশ করে এনসিটিবি। ওই পরীক্ষার নম্বর বিভাজনে দেখা গেছে, ব্যবহারিক না থাকা বিষয়গুলোর রচনামূলক অংশে ৭০ নম্বর এবং বহুনির্বাচনি অংশে ৩০ নম্বর থাকবে।
>> আরও পড়তে পারেন
আরও জানা যায়, ব্যবহারিক থাকা বিষয়গুলোতে তত্ত্বীয় অংশে ৭৫ ও ব্যবহারিক অংশে ২৫ নম্বর থাকবে। তত্ত্বীয় অংশে ৪০ নম্বর ও বহুনির্বাচনি অংশে ২৫ নম্বর থাকবে। ফলে ২০২৪ সালে যারা নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছিল, ২০২৫ সালে দশম শ্রেণিতে ওঠার পর সিলেবাস ও নম্বর বিভাজনে ব্যাপক পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে তারা।
ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ নিয়াজ ঢাকা মেইলকে বলে, ‘আমি নবম শ্রেণিতে এক ধরনের পড়াশোনা শুরু করেছিলাম। কিন্তু দশম শ্রেণিতে ওঠার পর দেখি অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেল সিলেবাস। কিন্তু আমরা শুরুতে নম্বর বিভাজন পাচ্ছিলাম না। ফলে আমরা তালগোল পাচ্ছিলাম না যে, আসলে কী পড়তে হবে। কিছুদিন আগে আমাদের সব বিষয়ের নম্বর বিভাজন প্রকাশ করা হয়েছে।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলে, ‘আগামী দুই মাস পর থেকে টেস্ট পরীক্ষা শুরু। তার আগে আমরা নম্বর বিভাজন পেলাম। সেখানেও আগের থেকে বেশ পরিবর্তন রয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা একটা সমস্যায় পড়ে গেলাম।’
ফারুখ আহমেদ নামের একজন অভিভাবক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার মেয়ে এমনিতেই একটু ধীরে সবকিছু বুঝে। তার এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে আমি ও তার মা সব সময় চিন্তা করতাম। তার মধ্যে আগামী বছরের এসএসসিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। মাত্র এক বছর পড়ে পরীক্ষা দিতে হবে। শুরুতে পরীক্ষার সিলেবাস ও নম্বর বিভাজন ছিল না। সব মিলিয়ে অল্প সময়ে এমন বড় পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলময় নয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘২০২৬ সালের এএসসি পরীক্ষা নিয়ে আমরা চিন্তিত। হঠাৎ করে সিলেবাস পরির্তন, আবার সেই বই পেতেও দেরি হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষার প্রস্তুতির ব্যাপারে কিছুটা ঘাটতি রয়েই গেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব অধ্যাপক মো. সাহতাব উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এই এসএসসি ব্যাচ কিছুটা ব্যতিক্রম। তাদের সিলেবাস হঠাৎ পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিক বিবেচনার জন্য বোর্ডকে পরামর্শ দেব। কারণ পরীক্ষার পুরো বিষয় বোর্ডের অধীনে।’
>> আরও পড়তে পারে
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা শুধু পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকি। তবে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি যখন সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তখনই পরীক্ষা নেব। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’
এএসএল/জেবি

