শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রিজার্ভ ৪৫৭ বিলিয়ন, সংবিধান কোরআন: কতটা শক্তিশালী সৌদি আরব?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:০১ এএম

শেয়ার করুন:

রিজার্ভ ৪৫৭ বিলিয়ন, সংবিধান কোরআন: কতটা শক্তিশালী সৌদি আরব?
রেহালে রাখা পবিত্র কোরআনের আদলে তৈরি মক্কা গেট

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র সৌদি আরব। সাড়ে ২১ লাখ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় আরব দেশ এবং আলজেরিয়ার পরে আরব বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। পবিত্র কোরআনকে দেশটির সংবিধান হিসেবে গণ্য করা হয়। সৌদি আরবের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সৌদি আরবের উত্তরে জর্দান ও ইরাক, উত্তরপূর্বে কুয়েত ,পূর্বে কাতার, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত অবস্থিত, দক্ষিণ-পূর্বে ওমান ও দক্ষিণে ইয়েমেন অবস্থিত। সৌদি আরবের নাগরিকদের শতভাগ মুসলিম। এছাড়া দেশটিতে প্রায় এক কোটি লোক বিদেশি কর্মী হিসেবে কাজ করে। তাদের মধ্যে ভিন্ন ধর্মের অনেক লোক রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


saudi

সৌদি আরব মূলত ৫টি আমিরাত বা রাজ্য বিভক্ত। সেগুলো হলো- নজদ, আরার, আসির, আহসা ও হেজাজ। আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ১৯৩২ সালে ৫টি রাজ্য নিয়ে সৌদি আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০২ সালে নজদ, ১৯১৩ সালে আহসা, ১৯২১ সালে আরার, ১৯২৫ সালে হেজাজ ও ১৯৩০ সালে আসির নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি।

সৌদি পুরোপুরি রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় এবং আইনের ক্ষেত্রে ইসলামি আইনের অনুসরণ করা হয়। ইসলামের দুই পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর কারণে সৌদি আরবকে দুই পবিত্র মসজিদের দেশ বলা হয়। 

দেশটির জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এর মধ্যে আড়াই কোটির বেশি সৌদিয়ান। বাকিরা বিদেশি। পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সর্বোচ্চ তেল উৎপাদন ও রফতানিকারক এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম হাইড্রোকার্বন মজুদকারি দেশ সৌদি আরব। তেলের কারণেই দেশটির অর্থনীতি যেমন বেড়েছে, তেমনই এর মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকও উপরের দিকে। একমাত্র আরব দেশ হিসেবে জি-২০ প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির সদস্য সৌদি।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: সৌদি আরবে গিয়ে যে ১৫ কাজ করা যাবে না

পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক খরচ বহনকারী দেশ সৌদি আরব। দেশটিকে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে ধরা হয়। সৌদি আরব জিসিসি, ওআইসি ও ওপেক এর সদস্য।

রাজতান্ত্রিক দেশ হওয়ায় সৌদিতে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন কিংবা জাতীয় নির্বাচন নিষিদ্ধ। ১৯৯২ সালে রাজকীয় ফরমান জারির মাধ্যমে গৃহীত মৌলিক আইন অনুযায়ী রাজাকে অবশ্যই শরিয়া (ইসলামি আইন) এবং পবিত্র কোরআন মেনে শাসন করতে হবে। কোরআন এবং সুন্নাহকে সৌদি আরবের সংবিধান হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

saudi arabia

সৌদি নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত। শিক্ষার হার প্রায় ৮০.৫ শতাংশ। নাগরিকরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সৌদি আরবে অপরাধের হার প্রায় শূন্য। পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়া মেনে চলা হয়।

সৌদি আরবের বেশির ভাগ অঞ্চলই মরুভূমি। দেশের সবচেয়ে বড় মরুভূমির নাম 'রুব আল-খালী'। যার পশ্চিমাংশ উর্বর।

আরও পড়ুন: সৌদি আরবে ভিন্ন ধর্মের মানুষের সংখ্যা কত?

উইকিপিডিয়া ও ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় উল্লেখ রয়েছে যে, সৌদি আরবের মোট নাগরিকের ৮০-৮৫ শতাংশ সুন্নি মুসলিম। এছাড়া ১৫-২০ শতাংশ শিয়া। এছাড়া দেশটিতে অন্তত ১৮ লাখ খ্রিষ্টান বাস করে, তারা সবাই বিদেশি কর্মী। এছাড়া সৌদি আরবে ১৫ লাখ ভারতীয় কাজ করেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মুসলিম হলেও অনেক হিন্দুও রয়েছে।

আরব বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ সৌদি আরবে মোট ৩৪.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে।

সৌদি আরবে প্রকাশ্যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনও ধর্মপালনকে উৎসাহিত করা হয় না। এছাড়া অন্যান্য ধর্মের প্রচারের ওপরও কঠোরতা রয়েছে। দেশটিতে অন্য কোনও ধর্মের উপাসনালয় নেই।

সৌদি আরবের মূল অর্থনীতি পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক; বাজেটে রাজস্ব মোটামুটি ৭৫% এবং রফতানি আয়ের ৯০% তেল শিল্প থেকে আসে। সৌদি আরবে সমগ্র বিশ্বের ভূ-ভাগের ২০% খনিজ তেলের মজুদ রয়েছে। পরিমাণে এটি ২৬ হাজার কোটি ব্যারেল। তেল ছাড়াও গ্যাস ও স্বর্ণ খনি রয়েছে সৌদিতে। জিএনপি অনুসারে, সৌদি আরব বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশের একটি।

আরও পড়ুন: মক্কায় খুঁজে পাওয়া গেল মহানবীর সময়কার বাজার

জাপান, চীন , দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত থেকে দেশটি প্রধানত আমদানি করে থাকে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও আমিরাতে বেশি রফতানি করে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সৌদি আরবের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৭৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে এটি ছিল ৫১৪ বিলিয়ন ডলার।

নিউইয়র্ক-ভিত্তিক ডেটা প্রযুক্তি কোম্পানি নোয়িমা কর্পোরেশন জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরবের রিজার্ভ ছিল ৪৫৭ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

saudi arabia economy

সৌদি আরবের অর্থনীতি বিশ্বের শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির মধ্যে একটি। এর অর্থনীতি তেলের উপর নির্ভরশীল, কারণ দেশটিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেট্রোলিয়াম মজুদ রয়েছে এবং দেশটি বিশ্বের পেট্রোলিয়ামের বৃহত্তম রফতানিকারক। গ্যাস মজুদের দিক দিয়ে সৌদি আরব বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম। এজন্য সৌদি আরবে 'জ্বালানি শক্তির মহাশক্তি' বলা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: সবচেয়ে প্রভাবশালী আরব নেতা মোহাম্মদ বিন সালমান

সৌদি আরবে খনিজ তেল ছাড়াও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যার মধ্যে স্বর্ণ, রৌপ্য, আয়রন, তামা, দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন, সিসা, সালফার, ফসফেট, সাবান স্টোন এবং ফেল্ডস্পার উল্লেখযোগ্য।

২০১৬ সালে সৌদির ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে তেলের উপর সৌদি আরবের নির্ভরতা হ্রাস করা, অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনা এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, বিনোদন ও পর্যটনসহ বিভিন জনসেবা খাতগুলোর বিকাশের পরিকল্পনা করা হয়।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর