মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চাইনিজ আখা দিয়ে চাকমা শিক্ষার্থীকে হত্যা ভারতের জন্য লজ্জার: শশী থারুর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

চাইনিজ আখা দিয়ে চাকমা শিক্ষার্থীকে হত্যা ভারতের জন্য লজ্জার: শশী থারুর

ভারতের উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে এক চাকমা শিক্ষার্থীকে ‘চাইনিজ’ আখ্যা দিয়ে বলে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধীদল- কংগ্রেসের নেতা ও সংসদ সদস্য শশী থারুর। এই হত্যাকাণ্ডকে ভারতের ‘জাতীয় লজ্জা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি। 

গত ৯ ডিসেম্বর ত্রিপুরার উনাকোটি জেলার বাসিন্দা ২৪ বছর বয়সী অ্যাঞ্জেল চাকমা নামের এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তার ভাই মাইকেলের সঙ্গে দেরাদুনের সেলাকুই বাজারে বেড়াতে যায়, সেখানে এক দল দুর্বৃত্ত তাদের বর্ণবিদ্বেষমূলক গালিগালাজ এবং ‘চাইনিজ’ বা চীনা নাগরিক আখ্যা দেয়। এক পর্যায়ে অ্যাঞ্জেল চাকমাকে ছুরিকাঘাত করে তারা। এতে গুরুতর আহত হন অ্যাঞ্জেল এবং গত ২৬ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।


বিজ্ঞাপন


সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেয়া এক দীর্ঘ পোস্টে অ্যাঞ্জেল চাকমার মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

তিনি লিখেছেন, ‘এটি শুধু একটি ট্র্যাজেডি নয়, এটি জাতীয় লজ্জা। ত্রিপুরার একজন গর্বিত ভারতীয় তরুণ, বর্ণবিদ্বেষমূলক গালিগালাজের শিকার হয়েছেন। চাইনিজ ও মোমোর মতো শব্দ ব্যবহার করে তাকে অমানবিক আঘাত করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হয়।’

image
নিহত অ্যাঞ্জেল চাকমা

থারুরের মতে, এই হত্যাকাণ্ড কোনও বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনা নয় বরং ‘আমাদের সমাজের নিজস্ব বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি ও সম্মান করতে ব্যর্থতার চূড়ান্ত পরিণতি’।


বিজ্ঞাপন


তিনি নাগরিকদের প্রতি এমন একটি সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান যেখানে ‘কোনো ভারতীয়কে নিজের দেশেই বিদেশি বলে মনে করানো হবে না’।

অ্যাঞ্জেল চাকমার মৃত্যুকে কেবল একটি পরিসংখ্যান বা ক্ষণস্থায়ী শিরোনামে সীমাবদ্ধ না রাখার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এটিকে ‘শিক্ষা, সহানুভূতি এবং সংস্কারের জন্য একটি আন্দোলন জাগিয়ে তুলতে হবে।’

এই কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘স্কুলগুলোকে সকল ভারতীয় সম্প্রদায়ের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি শেখানো উচিত। মিডিয়াকে উত্তর-পূর্ব ভারতীয়দের মর্যাদার সাথে চিত্রিত করতে হবে এবং সমাজকে তাদের পক্ষপাত ত্যাগ করতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলতে হবে। ধর্মীয় নেতাদের কথা বলতে হবে। নীরবতা হল এই ধরণের হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করা।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘যারা ধর্মকে সমর্থন করার দাবি করেন তাদের আমি মনে রাখার আহ্বান জানাই যে হিন্দুধর্ম, এর মূলে, বহুত্ববাদ এবং অন্তর্ভুক্তির একটি ঐতিহ্য। এটি এমন একটি সভ্যতা যা সহস্রাব্দ ধরে ভিন্নতাকে আলিঙ্গন করে আসছে... হিন্দু হওয়া মানে প্রতিটি মানুষের পবিত্রতাকে সম্মান করা, চেহারা বা উৎপত্তি নির্বিশেষে।’ 

এনডিটিভি জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মামলার অন্যতম আসামি নেপালের কাঞ্চনপুর জেলার বাসিন্দা যজ্ঞরাজ অবস্থি এখনও পলাতক। কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতারের জন্য তথ্য দিতে ২৫ হাজার রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনরোষ বাড়তে থাকায় উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দোষীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এমন মর্মান্তিক ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে, বিশেষ করে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা আখ্যা দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিহার, ওড়িশা ও কেরালায় ভারতীয় নাগরিকদেই গণপিটুনি ও নির্যাতন করে হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যাকাণ্ডের প্রায় সবগুলোর পেছনেই দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সমর্থিত উগ্র-হিন্দুত্ববাসী সংগঠন জড়িত। তবে এ বিষয়ে নিশ্চুপ মোদি সরকার।

সূত্র: এনডিটিভি

 

এমএইচআর

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর