পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩তম বার্ষিকীর দিনেই, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় একই নামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর।
এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। এই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে হুমায়ুন কবীর ঘোষণা দেন যে, পবিত্র এ মসজিদ নির্মাণের জন্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি ৮০ কোটি টাকা অনুদান দেবেন।
বিজ্ঞাপন
বাবরি মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হলে বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। হাইকোর্ট থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর শনিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মহা সমারোহে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সম্পন্ন করা হয়।
হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, বাবরি মসজিদ তৈরি করতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে, যা সম্পূর্ণভাবে সংখ্যালঘু মুসলমানদের অনুদানে নির্মিত হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি সরকারের কাছ থেকে কোনো টাকা নেবেন না, কারণ এতে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হবে।
অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করেন, এক শিল্পপতি তার নাম ঘোষণা করতে বারণ করেছেন। আগামী ১ মাসের মধ্যে তিনি ৮০ কোটি টাকা মসজিদ নির্মাণের কাজে দেবেন। টাকার কোনও অভাব হবে না।
বর্তমানে ২৫ বিঘার জমি হাতে রয়েছে হুমায়ুনের। এই বিশাল জায়গার মধ্যে কেবল মসজিদই নয়, তিনি ইসলামিক হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, হেলিপ্যাড এবং মুসাফিরখানা নির্মাণেরও পরিকল্পনা করেছেন।
বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ায় এবং দলীয় মতের বাইরে যাওয়ায় হুমায়ুন কবীরকে আগেই তৃণমূল কংগ্রেস থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে হুমায়ুনের এই উদ্যোগ তৃণমূলকে তীব্র বিড়ম্বনায় ফেলেছে।
১৯৯২ সালে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় অযোধ্যা শহরে হামলা চালিয়ে ষোড়শ শতকে নির্মিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয় দেশটির উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদীরা।
তাদের দাবি, হিন্দু দেবতা রামের জন্মস্থানে নির্মিত প্রাচীন একটি মন্দিরের ওপর বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।
মন্দিরের স্থানে মসজিদ নির্মাণের এই অভিযোগ নিয়ে দেশটিতে কয়েক দশক ধরে হিন্দু-মুসলিম বিবাদ চলে। পরে উগ্রপন্থী হিন্দুরা মসজিদটি ধ্বংস করে দেওয়ায় ভারতজুড়ে ভয়াবহ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গায় দেশটিতে ২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম।
ঐতিহাসিক সেই বাবরি মসজিদ ভাঙার বর্ষপূর্তির দিন (৬ ডিসেম্বর) মুর্শিদাবাদে নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় বিধায়ক হুমায়ূন কবির। পরে এ নিয়ে রাজ্যে উত্তেজনা তৈরি ও বিভিন্ন ধরনের সমালোচনার মুখে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
শনিবার বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ঘিরে মুর্শিদাবাদে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যে কোনও ধরনের উত্তেজনা এড়াতে রাজ্য পুলিশ, র্যাফ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের রেজিনগর ও পাশের বেলডাঙা এলাকায় মোতায়েন করা হয়।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’র অভিযোগে হুমায়ূন কবিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এর মধ্যেই শনিবার রাজ্যের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে অনাড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন তিনি।
ফিতা কেটে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন হুমায়ূন কবির। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত মুসলিমরা ‘‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’’ স্লোগান দেন।
ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, বাংলায় মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। বক্তৃতায় তার বিরুদ্ধে তোলা সাম্প্রদায়িক সংঘাতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি রাম মন্দিরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর জন্য নয়, বরং সমালোচকরাই পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছেন।
হুমায়ূন কবির বলেন, আমরা সব ধর্মকে সম্মান করি। কিন্তু বাংলার বাইরে থেকে কেউ এসে এখানে শর্ত চাপিয়ে দিলে আমরা সহ্য করব না। বাবরি মসজিদের নির্মাণ কেউ থামাতে পারবে না বলে ঘোষণা দেন তিনি।
তৃণমূল এ নেতা বলেন, যতই রাজনৈতিক চাপ থাকুক, মসজিদ নির্মাণ কাজ এগোবে।
-এমএমএস

