রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাবরি মসজিদের জন্য মাথায় করে ইট আনেন স্থানীয়রা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

বাবরি মসজিদের জন্য মাথায় করে ইট আনেন স্থানীয়রা

ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩ বছর পর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙায় আজ (শনিবার) একই নামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। 

এ অনুষ্ঠানে আসার জন্য রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে অংশ নিতে অনেকে মাথায় করে ইট নিয়ে আসছেন।


বিজ্ঞাপন


এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো হয় এবং ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে অনুষ্ঠানের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বেলডাঙ্গা থানা ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ সদস্যরা জড়ো হন। 

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্থানীয় ও রাজ্য পুলিশসহ বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো।

সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। উত্তর বারাসাতের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলামকে প্রস্তাবিত কাঠামোর জন্য তার অবদানের অংশ হিসেবে মাথায় ইট বহন করতে দেখা যায়। 

সংবাদমাধ্যম এএনআইকে তিনি বলেন, হুমায়ুন কবির যেখানে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন আমি সেখানে যাচ্ছি। আমি বাবরি মসজিদের জন্য ইট নিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মুর্শিদাবাদের বাসভবন থেকে রওনা দেওয়ার সময় তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এএনআইকে বলেন, আমি আজ বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করব। আমি কিছু বলব না। পুলিশ আমাকে সমর্থন করছে। আমি তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যেই কথা বলেছি। 

শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর পুলিশ আমাকে সমর্থন করছে। তারা আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসন আয়োজকদের পুরোপুরি সহযোগিতা করছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদে যেন কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা না ছড়ায়, সেজন্য যা যা করা দরকার তা করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট।

সরকারকে বলা হয়েছে, এই সম্ভাব্য উত্তেজনা থামাতে এবং শান্তি বজায় রাখতে যা যা করা দরকার, তার সবই করতে হবে।

এ বিষয়ে ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার বলেছেন, সিআইএসএফের ১৯টি কোম্পানি ইতোমধ্যে এই অঞ্চলে উপস্থিত রয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে র‌্যাফের ইউনিট সহ ৩৫০০ জনের একটি দল রেজিনগর এবং আশেপাশের অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের সুরক্ষার জন্য বিএসএফের দুটি কোম্পানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি পার্থ সারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়ে দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, রাজ্য সরকারকে তাদের অবস্থান অনুযায়ী কাজ করতে হবে। মুর্শিদাবাদে আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে এবং নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। হুমায়ুন কবীরের এই কর্মসূচিকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে হুমায়ুন কবীর বলেন, মূল ইভেন্টটি দুপুর ১২টায় শুরু হবে। দুই ঘণ্টা কোরান পাঠ করা হবে। অনুষ্ঠানে কোনো বক্তৃতা থাকবে না, কোনো রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে না, কোনো দলীয় পতাকা থাকবে না। আমি ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে উপস্থিত থাকব। এই মসজিদ তৈরি করতে তিন বছর সময় লাগবে। অর্থ জোগাবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। একই সঙ্গে তিনি এ অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে রাজ্য পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন।

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পুরো ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। তার অভিযোগ, রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলো তৃণমূলকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। হাইকোর্টের নির্দেশের পর রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো সতর্ক রয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৯২ সালের আজকের দিনেই অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও হয়। 

হুমায়ুনের এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান হওয়ার আট মাস আগে ওয়াক্‌ফ (সংশোধনী) আইনের প্রতিবাদে এই মুর্শিদাবাদেই ছড়িয়ে পড়েছিল সাম্প্রদায়িক সহিংসতা।

-এমএমএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর