রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা দায়ে ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই হুমকিকে ‘অন্যায্য’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে আখ্যায়িত করেছে ভারত। একই সঙ্গে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ক্রয় অব্যাহত রাখারও ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি।
সোমবার (০৪ আগস্ট) নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত শুধু বিপুল পরিমাণে রাশিয়ান তেল কিনছে না, বড় লাভের আশায় তারা এই তেলের বেশিরভাগই খোলা বাজারে বিক্রি করছে।’
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘তাদের (ভারত) এমন পদক্ষেপে ইউক্রেনের কত মানুষ রাশিয়ান যুদ্ধযন্ত্রের হাতে মারা যাচ্ছে, এটি তারা পরোয়া করে না। এই কারণে, আমি ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে আরোপিত শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করব।’ তবে অতিরিক্ত শুল্কের পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
ট্রাম্পের এই পোস্ট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ ইস্যুতে বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনে শুরুর পর রাশিয়ার জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কিন্তু সে সময় জ্বালানির বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারতকে রাশিয়াার কাছ থেকে তেল কিনতে উৎসাহ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করছে বলে উল্লেখ করে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সঙ্গে এই দেশগুলোর বাণিজ্য একটি পরিসংখ্যানও দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইইউ ২০২৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ৬ হাজার ৭৫০ কোটি ইউরোর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করেছে। ২০২৩ সালেও রাশিয়ার সঙ্গে জোটটি প্রায় ১ হাজার ৭২০ কোটি ইউরোর বাণিজ্য করেছে। এটি সেই বছর বা পরবর্তীকালে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের মোট বাণিজ্যের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়াও ২০২৪ সালে রাশিয়া থেকে ইইউ এলএনজি আমদানি রেকর্ড ১৬.৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালে ১৫.২১ মিলিয়ন টনের সর্বশেষ রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
এতে আরও বলা হয়, ইউরোপ শুধু রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নয়, বরং সার, খনির যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য, লোহা, ইস্পাত, মেশিনারি এবং পরিবহন সংক্রান্ত পণ্যের জন্য রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধজ্ঞা জারির পরও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে তার পরমাণু শিল্পের জন্য হেক্সাফ্লোরাইড, বৈদ্যুতিক যানবাহনে ব্যবহারের জন্য পাল্লাডিয়াম, সার ও রাসায়নিক পণ্য আমদানি করছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এই সব পরিসংখ্যান ভারতকে রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার ন্যায্যতা দেয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ নিজেরাই যেখানে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যে লিপ্ত, সেখানে ভারতের ওপর এই আক্রমণ অন্যায্য, অযৌক্তিক।
বিবৃতি আরও বলা হয়, ‘যেকোন বৃহৎ অর্থনীতির মতো, ভারতও তার জাতীয় স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
উল্লেখ্য, এরআগে গত সপ্তাহে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র আমদানির অভিযোগে অতিরিক্ত জরিমানাও আরোপ করেছেন তিনি। আগামী ৭ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা।
সূত্র: এনডিটিভি
এমএইচআর

