শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দুদককে যা জানালেন টিউলিপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৫, ০২:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী ও শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক তার আইনজীবীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। 

এতে বলা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগগুলো 'মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক'। সেগুলো গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরা হয়েছে অথচ, তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে তাকে কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাকে 'লক্ষ্যবস্তু বানানো' এবং তার বিরুদ্ধে 'ভিত্তিহীন' প্রচারণার অভিযোগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। খবর বিবিসির।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে লেবার মন্ত্রিসভার ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে সরে দাঁড়ান টিউলিপ সিদ্দিক। ওই পদে তার কাজ ছিল যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া।

এদিকে দুদকের পক্ষ থেকেও টিউলিপের চিঠির একটি জবাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সেই চিঠিটি বলা হয়েছে- টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগের দুর্নীতি থেকে লাভবান হয়েছেন। সেখানে আরও বলা হয়, হাসিনার শাসনামল সম্পর্কে তার (টিউলিপ সিদ্দিকের) অজ্ঞতার দাবি বিশ্বাস করা কঠিন।

দুদকের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেইট আসনের এই এমপি তখন দাবি করেন, তিনি কোনো অনিয়ম করেননি। “স্বচ্ছতা” বজায় রেখে কাজ করেছেন। কিন্তু, তিনি সরকারের কর্মকাণ্ডে “বিতর্কের” কারণ হতে চাননি বলে পদত্যাগ করেছেন।


বিজ্ঞাপন


তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার জানান, টিউলিপের জন্য ফিরে আসার “দরজা খোলা থাকছে”। স্টারমারের নির্বাচনী আসন হবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাস টিউলিপের আসনের পার্শ্বর্বর্তী হওয়ায় তাদের মধ্যে সৌহার্দ্য রয়েছে।

যখন দুর্নীতির অভিযোগ প্রথম সামনে আসে, তখন টিউলিপ সিদ্দিক প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ম্যাগনাস তখন জানান, তিনি টিউলিপ সিদ্দিকের ক্ষেত্রে “অন্যায় কিছুর প্রমাণ পাননি”।

ম্যাগনাস আরও বলেন, কিন্তু এটা দুঃখজনক যে— টিউলিপ সিদ্দিক তার খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের জন্য ‘সম্ভাব্য দুর্নামের ঝুঁকি সম্পর্কে অতটা সতর্ক ছিলেন না।

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের ব্যয় থেকে প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন। হাসিনার বিরোধী রাজনীতিবিদ ববি হাজ্জাজের করা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে কমিশনের তদন্তটি চলছে।

আদালতে দাখিল করা দলিল থেকে বিবিসি জানতে পেরেছে, ববি হাজ্জাজ অভিযোগ করেছেন যে— ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নিয়ে রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যস্থতা করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। এখানে খরচ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল বলেও দাবি করা হয় অভিযোগে।

দুদকের কাছে লেখা চিঠিতে, টিউলিপের আইনজীবী স্টিফেনসন হারউড তার দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক কোনোভাবেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তিতে জড়িত ছিলেন না। 

যদিও ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে একটি চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একই ছবিতে তাকে দেখা গেছে।

কোনো আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে তার জানা নেই উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রীয় সফরে কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের পরিবারের সদস্যদেরও আমন্ত্রণ জানানো অস্বাভাবিক কিছু নয়।

বিষয়টি নিয়ে দুদকের পাল্টা চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে- তার (টিউলিপ সিদ্দিকের) মতো একজন রাজনীতিবিদ কীভাবে সরলতার কারণে নির্দোষ থাকার দাবি করেন।

টিউলিপ সিদ্দিকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ২০০৪ সালে লন্ডন কিংস ক্রস এলাকায় উপহার হিসেবে পাওয়া সাত লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাটটি “কোনো না কোনোভাবে আত্মসাতের ফল” বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা “অযৌক্তিক” এবং “সত্য নয়”, কারণ এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুক্তির ১০ বছর আগেকার ঘটনা।

স্যার লরি ম্যাগনাস অভিযোগের তদন্তে বলেছেন যে— “দীর্ঘ সময় ধরে, কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটে তার মালিকানার উৎস সম্পর্কে অবগত ছিলেন না টিউলিপ, যদিও সেই সময়ে উপহার সংক্রান্ত একটি ভূমি হস্তান্তর নিবন্ধন ফর্মে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি”।

স্যার লরি আরও বলেন, “তার ধারণা ছিল, তার বাবা-মা তার জন্য সম্পত্তিটি কিনেছেন,” কিন্তু সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পর তাকে রেকর্ডটি সংশোধন করা উচিত ছিল। তিনি এটিকে “দুর্ভাগ্যজনক ভুল বোঝাবুঝি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যার ফলে, জনসাধারণ “এই উপহারদাতার পরিচয় সম্পর্কে অসাবধানতাবশত বিভ্রান্ত হয়েছে”।

দুদকের কাছে চিঠিতে, টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী নিশ্চিত করেছেন যে— কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটটি তাকে দিয়েছিলেন আব্দুল মোতালিফ নামে এক ব্যক্তি। যাকে “খুব ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু এবং টিউলিপ সিদ্দিকের গডফাদারের মতো” বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকায় জমি দখলে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ দুদকের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে সে বিষয়েও বিস্তারিত জবাব রয়েছে চিঠিতে। গণমাধ্যমে দুদকের ব্রিফিংকে “যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অগ্রহণযোগ্য চেষ্টা” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, দুদক বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তার (টিউলিপ) কাছে কোনো অভিযোগ ন্যায্য, যথাযথ এবং স্বচ্ছভাবে, অথবা আদৌ কোনো পর্যায়েই তুলে ধরা হয়নি। আমরা চাই টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক অভিযোগ বানানো এবং তার সুনাম নষ্টের জন্য মিডিয়া ব্রিফিং ও প্রকাশ্য বক্তব্য প্রদান অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।

দুদককে “অবিলম্বে” এবং “২৫ মার্চ ২০২৫ এর মধ্যে” সিদ্দিকের কাছে তাদের জিজ্ঞাস্য তুলে ধরতে হবে। নইলে উত্তর দেওয়ার মতো কোনো বৈধ প্রশ্ন নেই বলে আমরা ধরে নেবো।

দুদক টিউলিপের আইনজীবীদের পাঠানো চিঠির জবাব দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, তিনি তার বড় হওয়ার পর জীবনের বেশিরভাগ সময় দুর্বৃত্তায়িত আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন বাড়িতে কাটিয়েছেন এবং এটিই প্রমাণ করে যে— তিনি এই দলের দুর্নীতি থেকে নিজেও লাভবান হয়েছেন।

এমপির পক্ষ থেকে করা হাসিনার শাসনামলের অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতার দাবি” বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেন দুদক মুখপাত্র। দুদক যথাসময়ে তার আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করবে বলেও জানানো হয়।

দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সাময়িকী দ্য টাইমসকে বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত অভিযোগ যুক্তরাজ্যের আদালতসহ যেকোনো আদালতেই প্রমাণ করা যাবে।

-এমএমএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর