যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় নির্বিচারে বিমান হামলা বন্ধ করে সেখানে আটকে রাখা জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে ইসরায়েলে।
দেশটির রাজধানী জেরুজালেমে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে বুধবার (১৯ মার্চ) অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। খবর রয়টার্স, নিউইয়র্ক পোস্ট ও দ্যা গার্ডিয়ানের।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের আন্দোলনকারীরা বলেন, নিজের দুর্নীতি ঢাকতে এবং ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামলা শুরু করেছেন। ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইসরায়েলকে বিপদে ফেলছেন বলেও বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন।
নেতানিয়াহুবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছিল এই বিক্ষোভের আয়োজক। সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উদ্দেশে ‘আপনি সরকারপ্রধান, আপনিই দায়ী’, ‘আপনার হাতে রক্ত লেগে আছে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৬৭ বছর বয়সী নেহামা ক্রিসলার গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা শুধু নেতানিয়াহুকে স্মরণ করিয়ে দিতে এসেছি যে- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জিম্মিদের মুক্তি।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জেরুজালেমে বিগত বেশ কয়েক মাসের মধ্যে বুধবারের বিক্ষোভ ছিল সবচেয়ে বড়।
মাত্র ৩ দিন আগে ভয়াবহ বিমান হামলার পর এবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। বিশ্বের একমাত্র এই ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বুধবার এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উত্তর ও দক্ষিণ গাজার মধ্যে একটি নিরাপত্তা পরিধির সম্প্রসারণ এবং একটি আংশিক মুক্তাঞ্চল (বাফার জোন) তৈরি করতে মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় স্থল অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানে নির্দিষ্ট স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
গাজায় অবরুদ্ধ ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই সোমবার সেখানে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে আইডিএফ।
এতে নিহত হয়েছেন ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল দেড় শতাধিক। ব্যাপক এই হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা চলছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। এই সমালোচনার মধ্যেই গাজায় স্থল অভিযান শুরু করল আইডিএফ।
বুধবার রাতে গাজার বাসিন্দাদের ‘শেষবার সতর্ক করে’ একটি ভিডিওবার্তা দেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
ভিডিওবার্তায় কাৎজ বলেন, গাজাবাসীদের বলছি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেশ মেনে জিম্মিদের মুক্তি দিন এবং হামাসকে উচ্ছেদ করুন। যদি আপনারা এই উপদেশ মানেন, কেবল তাহলেই বেঁচে থাকার অন্য বিকল্প আপনাদের সামনে উন্মুক্ত হবে।
এদিকে আইডিএফ স্থল অভিযান শুরুর পর মধ্য ও দক্ষিণ গাজার ফিলিস্তিনিরা দলে দলে উত্তর গাজার দিকে যাওয়া শুরেু করেছেন। আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা রেডক্রসের গাজা শাখার দপ্তরটি গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায়।
রেডক্রস গাজা শাখার জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা ফ্রেড ওলা সাংবাদিকদের জানান, গত দু’মাস গাজায় যে আপাত শান্ত পরিস্থিতি ছিল— তা ফের নষ্ট করেছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক অভিযান।
নেতানিয়াহু গত রোববার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিষেবা শিনবেতের প্রধানকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরায়েলে রাজনৈতিক উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে, আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এ সিদ্ধান্ত বেআইনি হতে পারে।
ইসরায়েলের নৌবাহিনীর সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিক্ষোভের সংগঠক ওরা পেলেদ নাকাশ বলেন, গাজায় এই নতুন করে হামলা মূলত জাতিকে বিপদে ফেলে নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
-এম্এমএস