দিনটি ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি। উত্তরপ্রদেশের বান্দা জেলায় গোয়েরা মুঘলি গ্রামে বেজে ওঠে শামশের খানের মোবাইল। প্রথমে ক্ষণিকের নিস্তব্ধতা। তারপর মোবাইলের ওপার থেকে মহিলা কণ্ঠে ভেসে এল, ‘এটাই আমার শেষ ফোন।’ সেই কণ্ঠস্বর চিনতে দেরি হয়নি শামশেরের। তার বোনের গলা। শাহজাদী খানের। সেই দিনই সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফাঁসি হয়ে যায় শাহজাদীর। কিন্তু ৩৩ বছর বয়সী তরুণীর পরিবারের কেউ সেদিন জানতেই পারেননি যে ওই দিনই শাহজাদীর জীবনের শেষ দিন।
বোনের ফোন পেয়ে মোবাইলটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছিলেন অসহায় শামশের। শাহজাদী তাকে বলেন, ‘ওরা আমার শেষ ইচ্ছা জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম আম্মি-আব্বুর সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ সেই সময়ে শামশেরের পাশেই ছিলেন তার মা। মেয়ের কথা ভেসে গিয়েছিল তার কানেও। শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলেন তিনি। ওটাই ছিল শাহজাদীর শেষ ফোন। শামশের জানান, তারপর থেকে বোনের সঙ্গে আর কোনও কথা হয়নি তাদের।
বিজ্ঞাপন
মেয়ে বেঁচে আছে, নাকি ফাঁসি দেওয়া হয়ে গেছে, তাও জানতে পারছিলেন না পরিবারের লোকেরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ না হওয়ায় দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শাহজাদীর বাবা সাবির খান। সোমবার (৩ মার্চ) আদালতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফাঁসি হয়ে গিয়েছে শাহজাদীর। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সে দেশের প্রশাসন ভারতীয় দূতাবাসকে সরকারি ভাবে এই তথ্য জানায়। বুধবার (৫ মার্চ) আবুধাবিতে শেষকৃত্য হবে তরুণীর।
সাবিরের বক্তব্য, তাদের সঙ্গে ‘অবিচার’ হয়েছে। মেয়ের শেষকৃত্যে থাকতে চান তারা। শাহজাদীর বাবার দাবি, সরকার যেন তাদের সংযুক্ত আরব আমিরাতে মেয়ের শেষকৃত্যে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে অবিচার হয়েছে। তারা (সরকার) আমার মেয়েকে জীবিত ফিরিয়ে দিতে পারেনি। অন্তত মেয়ের দেহটুকু আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
উত্তরপ্রদেশের শাহজাদীকে ২০২১ সালে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। তরুণীর মুখে ছোটবেলা থেকে কিছু দগ্ধের ক্ষত ছিল। কীভাবে মুখকে আগের অবস্থায় ফেরানো যায়, তা নিয়ে সব সময় ভাবতেন শাহজাদী। এই সূত্রেই উজাইর নামে আগ্রার এক ব্যক্তির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় তরুণীর। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তরুণীর প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই কথায় ভরসা করে বৈধ ভিসায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আবুধাবি পৌঁছান তিনি। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। শাহজাদী বুঝতে পারেন তাকে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আবুধাবিতে এক দম্পতির বাড়িতে কাজ করতেন তিনি। দম্পতির চার মাসের সন্তানকে দেখভালের দায়িত্ব ছিল তার। শিশুটির হঠাৎই মৃত্যু হয়। ওই দম্পতি শাহজাদীর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেন। এর পরে আবুধাবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে সেখানকার আদালত ওই শিশুর মৃত্যুতে খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে শাহজাদীকে ফাঁসির নির্দেশ দেয়।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন
এমএইচটি

