সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাশার পরবর্তী সিরিয়া ও নতুন চ্যালেঞ্জ

মুহাম্মাদ শোয়াইব আস সফাদী
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

বাশার পরবর্তী সিরিয়া ও নতুন চ্যালেঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বাশার আল-আসাদের পতন শুধু একজন ব্যক্তির ক্ষমতা হারানো নয়, বরং একটি সাম্প্রদায়িক এবং নাশকতামূলক প্রকল্পের অবসান। এই প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা উচিত এবং এর পুনর্গঠন সম্পর্কে ভাবতে হবে।

সাদ্দাম হোসেনের পতনের সাথে বাশার আল-আসাদের পতনের তুলনা করা ভুল। ইরাকে একটি দলের শাসনের অবসান ঘটেছিল মাত্র। কিন্তু সিরিয়ায় আসাদ এমন একটি শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা সামাজিক কাঠামোকে ধ্বংস করে এবং দেশকে ষড়যন্ত্রের একটি আস্তানায় পরিণত করেছিল। তার শাসনের সময় সিরিয়াকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। সাধারণ জনগণের স্বাধীনতাকে দমন করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

কতটুকু মুক্ত হলো সিরিয়া?

বিপ্লবের আগেও সিরিয়ার মানুষকে শোষণ করা হতো। সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করা, ইরাকের সংঘাতে ইন্ধন জোগানো, সন্ত্রাসীদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও জাল নথি সরবরাহের ব্যবস্থা করা, উপসাগরীয় সন্ত্রাসীদের জন্য দামেস্ককে মিটিং ও বিতরণ পয়েন্টে রূপান্তর করা, লেবাননের প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, হিজবুল্লাহর সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডের প্রকৌশল, লেবাননের সামাজিক কাঠামো ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পঙ্গু করাসহ হাজারও অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাশার আল-আসাদ।

নতুন সিরিয়ার চ্যালেঞ্জ

বাশার আল-আসাদের পতনের পর একটি রাজনৈতিক ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে, যা পুরো অঞ্চলকে প্রভাবিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বকে ঘিরে সংশয় ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষত, আহমেদ আশ-শারা ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই জাতীয় সমালোচনা এখন খুব অপ্রয়োজনীয়। সিরিয়ার পুনর্গঠনে এখন প্রয়োজন একটি গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল পদ্ধতি।


বিজ্ঞাপন


Syria3_2

সিরিয়ানদের করণীয় হলো, আলোচনার মাধ্যমে পথ খোঁজা, সংঘাত নয়; বরং আলোচনা ও আইডিয়া বিনিময়ের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য কাজ করা। অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া, অতীতের ভুলগুলো বিবেচনায় রেখে নতুন পথ নির্ধারণ করা। স্বৈরাচারী শাসনের অভিজ্ঞতা থেকে সতর্ক থাকা।

আরব বিশ্বের ভূমিকা

প্রথমত, সমর্থন ও পরামর্শ দেওয়া, সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় দেশগুলোকে সিরিয়ার এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। নতুন সিরিয়ারকে আদর্শগত হাইজ্যাকিং বা নাশকতা থেকে রক্ষা করা।

আরও পড়ুন

‘মানব কসাইখানা’ থেকে মুক্ত লাখো বন্দী, জানালেন রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতা করা, সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য কাজ করা, সিরিয়ার শাসনব্যবস্থার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করা।

বর্তমানে সিরিয়ার নতুন শাসকদের সমালোচনা করা উচিত নয়, কারণ তারা অস্থায়ী। বরং তাদের কার্যক্রম নিরীক্ষা করা, পরামর্শ প্রদান করা ও সহায়তা করা উচিত। মিডিয়ায় গঠনমূলক সমালোচনার চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। তবে তা যেন নতুন সিরিয়াকে দুর্বল না করে।

Damaska2_

একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। ক্রান্তিকালীন সময়সীমা নির্ধারণ, সংবিধান প্রণয়ন ও আইনি চুক্তি স্থাপন, একটি স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে ‘আয়নাঘর’, সিরিয়ায় ‘মানব কসাইখানা’

সিরিয়ার পুনর্গঠনে একটি দীর্ঘ ও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। এটি শুধু সিরিয়ার জনগণের জন্য নয়, পুরো আরব বিশ্বের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। সতর্কতা, সহযোগিতা ও গঠনমূলক সমালোচনা নতুন সিরিয়াকে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে নিয়ে যেতে পারে।

লেখক: কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর