শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

পাকিস্তানে সরকার গঠন কতদূর?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২৬ এএম

শেয়ার করুন:

পাকিস্তানে সরকার গঠনের কতদূর?
ফের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন শাহবাজ শরিফ। ছবি: ডন

পাকিস্তানের ভোটের ফলাফল ও এরপর নানা জটিল সমীকরণ মিলিয়ে অবশেষে জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলীম লীগ-পিএমএল-এন ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পিএমএল-এন বলছে, দলীয় প্রধান নওয়াজ শরিফ নয়, এই সরকারের প্রধান হিসেবে থাকবেন তার ভাই শাহবাজ শরিফ।

পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফলের পর সরকার গঠনে তাদের সাথে যোগ দিচ্ছে ছোট ছোট আরও কয়েকটি দল। খবর ডন ও জিও টিভির


বিজ্ঞাপন


ইমরান বিরোধী দুই দল ভোটে খুব বেশি সুবিধা করতে না পারলেও তারা নিজেদের স্বার্থে সরকার গঠনে এক হয়েছেন ভোটের পর। ফলাফলের পর নানা নাটকীয়তার পর মঙ্গলবার অবশেষে সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে দল দুটি। সরকার গঠনে পুরোপুরি সহযোগিতা করলেও সরকারের কোনো মন্ত্রিত্ব পদে থাকতে রাজী নয় পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো।

ভোটের ফলাফলের পর তাদের সাথে জোটভুক্ত বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি বলেছে, তাদের এই চুক্তি নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এনকে সরকার গঠনে সহযোগিতা করবে। তবে, তারা কোনো মন্ত্রিত্বপদ নেবে না।

আরও পড়ুন: মন্ত্রণালয়ে আগ্রহী নই, জানালেন বিলাওয়াল

মঙ্গলবার রাতে ইসলামাবাদে দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি নতুন জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। এ সময় শাহবাজ শরিফও একই কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


এই দলগুলোই দুই বছর আগে ২০২২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন করেছিল।

এবার ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) দলের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চমক দেখিয়ে সবচেয়ে বেশি আসেন জয়ী হয়েছে।

পিপিপি নেতা আসিফ আলী জারদারি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, যদিও তার দল এবং পিএমএল-এন একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলো তারপরও জাতির স্বার্থে তারা এক হয়েছিলো। জারদারি বলেন, এটা প্রত্যাশিত নয় যে আমরা সারাজীবন একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করবো।

আর পিএমএল-এন এক বিবৃতিতে বলেছে, উভয় দল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। এই নির্বাচনের ফলাফলে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ২৬৬টি আসনের মধ্যে ৯৩টি আসনে জয় পেয়েছিলো। যেহেতু তারা স্বতন্ত্রভাবে জয়ী হয়েছিলো সে কারণে কোনো দলের সহযোগিতা ছাড়া সরকার গঠন করাও সম্ভব ছিল না তাদের পক্ষে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে সরকার গঠন নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ

পাকিস্তানে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ১৩৪টি আসন। অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন ৭৫টি আসনে জয় লাভ করেছে এবং মি. ভুট্টোর পিপিপি ৫৪টি আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে। এছাড়াও দলগুলোকে মহিলা ও অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত ৭০টি আসন থেকে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে। এসব অতিরিক্ত আসন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য নেই।

পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন এর কর্মকর্তা মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, দলের নেতা মি. শরিফ তার ভাই শেহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনীত করার পরিকল্পনা করেছেন। তারা দুই জনই এর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

যদিও বিলাওয়াল ভুট্টো বলেছেন তার দল শুধুমাত্র মুসলিম লীগকে সরকার গঠনে সহযোগিতা করবে তবে সরকারের মন্ত্রিসভার কোনো পদ তারা নেবে না। তবে ইমরান খান ও তার দল পিটিআই জোর দিয়ে বলছে, তারা এখনো বিশ্বাস করে যে এই নির্বাচনে তাদের বিরুদ্ধে কারচুপি হয়েছে। সে কারণে ভোটের এই ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করার কথা বলছে পিটিআই।

তাই একে চুরির ভোট হিসেবে আখ্যা দিয়ে আবারো সর্তক করেছে ইমরান খান। 'দিনে দুপুরে এই ধরনের ডাকাতি শুধুমাত্র জনগণের জন্যই অসম্মানের না, বরং দেশের অর্থনীতিকে আরও নিম্নমুখী করবে', বলেছিলেন ইমরান খান। তবে, পিটিআইয়ের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন।

সরকার গঠন নিয়ে যা যা হলো
শুক্রবার এই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হলেও এককভাবে কোনো দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় গত রোববার লাহোরে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির বাসায় দুই দলের নেতাদের বৈঠক হয়।

সেখানে দুই দলই জানায়, পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছেছে তারা। তবে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে চলছিল আলোচনা। প্রথমদিকে পিপিপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে বিলাওয়ালকে চাওয়া হচ্ছিল।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে নির্বাচনে প্রকৃত বিজয়ীকে ফল ফিরিয়ে দিলেন জামায়াত নেতা

এর পরের দিন সোমবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে পিপিপির কেন্দ্রীয় কমিটি। পরে গতকাল বিলাওয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিনি নিজেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থিতা থেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। কেন্দ্রে পিএমএল-এনের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন তারা। তবে সরকারে থাকবেন না।

সেই সাথে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়ও না থাকার থাকার কথা জানান তিনি। তার ওই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই রাতে বৈঠকে বসেন পিএমএল-এন, পিপিপি, এমকিউএম-পি ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদের (পিএমএল-কিউ) নেতারা। ওই বৈঠক শেষে জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পর ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিতদেরও জোট সরকার গঠনের সুযোগ ছিল। সেক্ষেত্রে তাদের একাধিক দলের সাথে জোট গঠন করতে হতো।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর