শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ইরান-সৌদি সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা: বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ইরান-সৌদি সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা: বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড়

দীর্ঘ সাত বছরের অচলাবস্থার পর চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে সম্মত হয়। এ বিষয়টি শুধু মুসলিম বিশ্ব নয়, সামগ্রিক বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আশা, আকাংখা ও শান্তির বাতায়ন খুলে দিয়েছে। মোট কথা সংঘাতের পথ ছেড়ে উভয় দেশই এখন কূটনৈতিক উপায়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রয়াস পেয়েছে। এ সম্পর্ক পুনঃস্থাপন হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের মধ্যস্থতায়। এ কারণে এটা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড় বা নয়া দিগন্তের সূচনা করেছে।

২০১৬ সালে রিয়াদ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য রিয়াদের পক্ষ থেকে অজুহাত ছিল তেহরান এবং মাশহাদে অবস্থিত দেশটির দূতাবাস এবং কনস্যুলেটে হামলা। তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছিল। এরপর ইরান এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে সৌদি সরকার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছে। তারা ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সর্বোচ্চ চাপ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক ছিল।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চায় ইরান

২০২১ সাল থেকেই রিয়াদ এবং তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং সাবেক ইরাকি সরকার দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে আসছিল। বাগদাদে ইরান ও সৌদি আরবের প্রতিনিধিদের মধ্যে পাঁচ দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দেশের কর্মকর্তারা সুস্পষ্টভাবে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন এবং অবশেষে চীনের মধ্যস্থতায় তারা সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌছাতে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে।

e29238e0-d471-11ed-aa8e-31a
সৌদি রাষ্ট্রীয় টিভিতে দেখানো হয়েছে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেইজিংএ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সৌদিপররাষ্ট্র মন্ত্রীকে হাত মেলাতে উৎসাহিত করছেন। ছবি: বিবিসি, ইভিএন

রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বহাল করা আমেরিকা ও ইসরাইলের অন্যতম মাথাব্যাথার কারণ। একদিকে, এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি বিশ্ব ব্যবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের মধ্যস্থতায় হয়েছে। অন্যদিকে এই চুক্তি সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ব্যবধান ও বিভেদ সৃষ্টির ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের প্রচেষ্টার ব্যর্থতার দিকটি তুলে ধরছে। একইসঙ্গে এই চুক্তিকে এ অঞ্চলে বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে আমেরিকা ও ইসরায়েলের ইরানভীতি সৃষ্টি করার অপকৌশলের পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। 


বিজ্ঞাপন


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্বহালে চুক্তি পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে গঠনমূলক প্রভাব ফেলবে। ফলে এই চুক্তির ঘোষণা এ অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ এটাকে স্বাগত জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান একটি টুইটে লিখেছেন, ‘ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রত্যাবর্তন দুই দেশ, অঞ্চল এবং ইসলামিক বিশ্বের জন্য দুর্দান্ত সক্ষমতা বয়ে আনবে।’

আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক হোসেইন বেহেশতিপুরও বিশ্বাস করেন যে রিয়াদ এবং তেহরান উভয়ই মহান আঞ্চলিক শক্তি। যারা তাদের জাতীয় স্বার্থে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে। এছাড়া এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা কমানোর পাশাপাশি এই অঞ্চলে বিশেষ করে ইয়েমেনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারে।

সৌদি-ইরান সংঘাত যেসব কারণে

সৌদি আরব নিজেকে মনে করে সুন্নি মুসলিম দুনিয়ার নেতৃত্বদানকারী শক্তি। আর ইরান হলো শিয়া মুসলিমদের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র। গত কয়েক দশক ধরে আঞ্চলিকভাবে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে দু’টি দেশ পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দুই দেশ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধে মদত জোগানোর কারণে তাদের মধ্যে বৈরিতা আরও প্রকট হয়েছে।

আরও পড়ুন: খাশোগির স্ত্রীর আশ্রয় আবেদন গ্রহণ করল যুক্তরাষ্ট্র

সৌদি আরব ২০১৫ সাল থেকে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইয়েমেনের সরকারি বাহিনীকে সমর্থন জুগিয়ে আসছে। ওদিকে হুথিরা সৌদি শহর এবং সৌদি তেল স্থাপনাগুলোর ওপর যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে তার জন্য ইরান হুথিদের গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করেছে এমন অভিযোগ ইরান অস্বীকার করে এসেছে।

d1a74000-d473-11ed-aa8e-31a
২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ করে। ছবি: এএফপি, বিবিসি

সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে লেবানন আর ইরাকে নাক গলানোরও অভিযোগ করেছে। সেখানে ইরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়ারা বিপুলভাবে সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে; উপসাগরে মালবাহী এবং তেলবাহী জাহাজগুলোর ওপর তারা হামলা করেছে এবং ২০১৯ সালে বড় সৌদি তেল স্থাপনাগুলোর ওপর মিসাইল ও ড্রোন হামলার পেছনে এই মিলিশিয়াদের হাত আছে বলে সৌদিদের অভিযোগ।

তবে, জাহাজ ও তেল স্থাপনার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ইরান অস্বীকার করেছে।

এছাড়াও ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলেছিল সৌদি আরব এবং পাঁচ বছর আগে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই চুক্তি খারিজ করে ইরানের ওপর আবার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, তখন তাতে সমর্থন দিয়েছিল সৌদিরা।

সৌদি আরব কেন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজি হলো?

মধ্যপ্রাচ্যের দুই বৈরি দেশ ইরান আর সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ২০১৬ সালের পর ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো সরকারি পর্যায়ে বৈঠক করেছে চীনের মধ্যস্থতায়। এরপর দুই দেশ তাদের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে রাজি হয়।

সৌদি আরব আর ইরানের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ বেশ ঘনিষ্ঠ। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন সৌদি সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। আর ইরানের সঙ্গে গত চার দশক ধরে আমেরিকার কোনো কূটনৈতিক সম্পর্কই নেই।

বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যখন সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে গোপনে জোট গঠন করে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের গুঁড়িয়ে দেবার লক্ষ্যে বিশাল এক আক্রমণ চালান। আট বছর পর সেই যুদ্ধের বাস্তব প্রভাব সৌদি কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করতে শুরু করেছে।

তার মতে, সৌদি নেতৃত্ব দু’টি অপ্রিয় সত্য না চাইলেও মানতে বাধ্য হয়েছেন।

আরও পড়ুন: হিটলার ও নেতানিয়াহুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই: এরদোয়ান

প্রথমটি হলো ইরান এখন সামরিক দিক দিয়ে শক্তিধর একটি রাষ্ট্র এবং তাদের হাতে রয়েছে বিশাল ক্ষেপণাস্ত্রের সম্ভার। এছাড়াও গোটা এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রয়োজনে লড়াই করার জন্য তাদের সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনী। সৌদি আরব এবং তার মিত্র দেশগুলো এই মিলিশিয়া বাহিনীগুলোকে কখনও পরাজিত করতে পারবে এমন সম্ভাবনা নেই।

দ্বিতীয়ত, রিয়াদ এখন আর ওয়াশিংটনের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না, যদিও দুই দেশের মধ্যে একটা নূন্যতম কৌশলগত জোট এখনও বিদ্যমান।

বর্তমানে জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন হোয়াইট হাউসের সঙ্গেও সৌদিদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এর কারণ সৌদিরা তেল উৎপাদন কমিয়েছে এবং এ কারণে আমেরিকায় তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সৌদিদের নজরে আনার পরেও সৌদি আরব তেলের উৎপাদন বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, ফলে সৌদি-ইরান চুক্তি এখন রিয়াদের জন্য নতুন কূটনীতির পথ খুলে দেবে বলে সৌদি আরব মনে করছে। এমনকি যেসব দেশকে আমেরিকা তাদের জন্য কৌশলগত কারণে ঝুঁকি বলে মনে করে তাদের সঙ্গে নতুন জোট গঠনেও তারা উৎসাহী হয়ে উঠছে।

ইরান ও সৌদির সুসম্পর্কে বিঘ্ন ঘটাতে চায় ইসরায়েল

ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাতে বিঘ্ন ঘটাতে চাইছে ইসরায়েল। সৌদির রাজধানী রিয়াদে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত আলি রেজা এনায়েতি এ মন্তব্য করেছেন।

আলি রেজা এনায়েতি বলেন, “ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে আমাদের অনেক বন্ধু ও ভাই স্বাগত জানিয়েছেন। তবে ইসরায়েলের মতো অনেক রাষ্ট্র তেহরান-রিয়াদের কূটনীতিক সম্পর্কে হতাশ। তাদের জন্য এটা অসহ্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তারা এই সম্পর্ক ব্যাহত করতে চায়।”

11468c07-b5ef-488e-94c9-34e-20230608191745
ইরানি রাষ্ট্রদূত আলি রেজা এনায়েতি

তিনি বলেন, তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো দুই দেশের মধ্যে গঠনমূলক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এছাড়া অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনাবলীর ওপর ভিত্তি করে আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ।

ইরানি রাষ্ট্রদূত বলেন, এভাবে যদি আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। তাহলে আঞ্চলিক নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে বিদেশি সেনারা এ অঞ্চলে থাকতে পারবে না। তবে এসব বিদেশি সেনাদেরকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করতে হবে। যখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার হবে, তখন কেউ আর এখানকার আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ব্যাহত করতে পারবে না।

42e1ff10-d476-11ed-a0f9-bfe
মধ্যপ্রাচ্যে চীনের সক্রিয় কূটনীতি বাড়ছে।ছবি: গেটি ইমেজেস, বিবিসি

চীনের জন্য কূটনৈতিক বিজয়

বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, বেইজিংয়ে মাত্র চার দিনের এক সমঝোতা আলোচনায় গত সাত বছরের হিমশীতল কূটনৈতিক সম্পর্কের বরফ গলানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে চীন সরকার। মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ ঘটনাবলীর মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং একইসঙ্গে “এটা চীনের জন্য একটা কূটনৈতিক বিজয়”। দু’টি দেশই এক্ষেত্রে বেইজিং-এর ভূমিকার প্রশংসা করেছে।

যৌথ নৌবাহিনী গড়ছে ইরান, সৌদি, আমিরাত ও ওমান

ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমান পারস্য উপসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য একটি যৌথ নৌবাহিনী গঠন করছে। এতে সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করেছে চীন।

কাতারি সংবাদ ওয়েবসাইট আল-জাদিদের মতে, পারস্য উপসাগরে নৌ চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চার দেশের মধ্যে এ বিষয়ে কথোপকথন হয়েছে।

ইরান চিরকালের প্রতিবেশী : সৌদি যুবরাজ

প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের বৈরিতা দূর করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘‘ইরান চিরকালের প্রতিবেশী, আমরা তাদের থেকে মুক্তি পেতে পারি না এবং তারা আমাদের থেকে মুক্তি পেতে পারে না।’’ 

prince-salman-dm-20220303220003
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

সৌদি যুবরাজ আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের আশা ব্যক্ত করেন। উভয় দেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চিহ্নিত করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একই দিন যুক্তরাষ্ট্রকে সৌদি রাজতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারেও সতর্ক করেন তিনি। ইরানের সঙ্গে চুক্তির ফলে সম্ভাব্য মার্কিন প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন সালমান। মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিক্রিয়ার পরোয়া করেন না তিনি। এমনকি তিনি বলেন ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের সমাধান হলে ইসরায়েল সৌদি আরবের ‘সম্ভাব্য মিত্র’ হয়ে উঠতে পারে।

অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়াবে সৌদি আরব ও ইরান 

অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে ইরান ও সৌদি আরব। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা এখন আর নিছক ‘কৌশলগত চুক্তির’ মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন অন্য ইস্যুগুলোতেও গুরুত্ব দিচ্ছে দু’দেশ।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, ইরানের বর্তমান প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই ইরান কয়েক মাস ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে বাগদাদ ও ওমানে নিরাপত্তা আলোচনা চালিয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সৌদি আরব সফরে একটি শক্তিশালী রোডম্যাপ উত্থাপিত হয়। এর ফলে চীনা মধ্যস্থতায় তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ চূড়ান্ত হয়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা এই উদ্যোগকে নিছক কৌশলগত চুক্তি বলে মনে করছি না। এ কারণে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এছাড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তা, ভ্রমণ এবং অন্য ইস্যুগুলোতেও গুরুত্ব দিচ্ছে দু’দেশ।

গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন, সৌদি আরব ও ইরান

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন, সৌদি আরব ও ইরান। তারা ফিলিস্তিনের এ অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসন দ্রুত বন্ধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি যৌথভাবে আহ্বান জানিয়েছে। এর পাশাপাশি গাজাবাসীর জন্য যাতে টেকসইভাবে ত্রাণ সরবরাহ করা যায় তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলেছে এই তিন দেশ।

শুক্রবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেং লি, ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাকেরি কানি এবং সৌদি আরবের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ বিন আব্দুল কারিম আল-খেরেইজি যৌথ বৈঠকের পর এই আহ্বান জানান।

thumbs_b_c_72e2efc5558ed5e7f272dd136a9ede46_20231216_200534259
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন, সৌদি আরব ও ইরান। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি

বিবৃতিতে ওই তিন মন্ত্রী গাজার জনগণকে স্থানান্তরের কঠোর বিরোধিতা করেছেন। তারা জোর দিয়ে বলেন, গাজাবাসীর জন্য ভবিষ্যতে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে হলে তাদের মতামত ও সমর্থন নিয়েই তা করতে হবে। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সেখানকার জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যে আগ্রাসন চলছে তাতে তিন কূটনৈতিক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করা হয়। তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে চীনের প্রভাবশালী ভূমিকার প্রশংসা করেন ইরান ও সৌদি আরবের দুই মন্ত্রী। আগামী জুন মাসে এই তিন দেশের যৌথ বৈঠক সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকার নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের ওপর প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল পাশবিকতা চালিয়ে গেলেও কোনো পশ্চিমা দেশ বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত তেল আবিবকে আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান পর্যন্ত জানায়নি।

সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, প্রেস টিভি, আনাদোলু এজেন্সি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর