শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

গাজায় ইসরায়েলের হামলা

স্ত্রী-সন্তান হারানোর পরদিনই কাজে ফিরলেন আল জাজিরার সাংবাদিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৪৯ এএম

শেয়ার করুন:

স্ত্রী-সন্তান হারানোর পরদিনই কাজে ফিরলেন আল জাজিরার সাংবাদিক
আল জাজিরার প্রধান সাংবাদিক ওয়ায়েল আল দাহদুহ। ছবি: আল জাজিরা

ইসরায়েলের হামলায় স্ত্রী, দুই সন্তানসহ পরিবারের ১২ সদস্যকে হারিয়েছেন গাজার আল জাজিরার প্রধান সাংবাদিক ওয়ায়েল আল দাহদুহ।পরিবারের সদস্যদের সমাহিত করার একদিন পরই কাজে ফিরেছেন ওয়ায়েল দাহদুহ। এক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে হাফিংটন পোস্ট।

গত বুধবার দক্ষিণ গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হন ওয়ায়েলের স্ত্রী আমনা (৪৪), ছেলে মাহমুদ (১৬), মেয়ে শাম (৭) ও অপ্রাপ্তবয়স্ক নাতি অ্যাডাম। তার পরিবারের আরও আটজন সদস্যও এই হামলায় প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে আছেন তার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে হাদির ও তার চার সন্তান। তারা সবাই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্দেশ মেনে উত্তর গাজা ছেড়ে দক্ষিণে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।


বিজ্ঞাপন


আল জাজিরার ডিজিটাল চ্যানেল এজে প্লাসে পোস্ট করা এক ভিডিওতে ওয়ায়েল দাহদুহ জানান, তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য মারা গেলেও দ্রুত কাজে ফেরা তার দায়িত্ব ছিল। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, এখনো সবখানে হামলা চলছে।

আরও পড়ুন: ‘৪৯ শতাংশ ইসরায়েলি গাজায় কোনো হামলা চায় না’

ভিডিওতে দেখা যায়, কাছাকাছি একটি জায়গা থেকে ধোঁয়া উঠছে। সেদিকে আঙ্গুল দেখিয়ে ওয়ায়েল যোগ করেন, 'এটা হচ্ছে বিমান হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণের পরবর্তী দৃশ্য এবং হামলা থামছে না।'

পরিবারের সব সদস্যকে হারানোর পরেও ওয়ায়েল গাজার মানবিক সংকটের সংবাদ পরিবেশনের কাজ দেওয়া চালিয়ে যেতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়েছে অবর্ণনীয় বেদনা ও যাতনার মধ্য দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যত দ্রুত সম্ভব ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আপনাদের কাছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসাটা আমার দায়িত্ব'।


বিজ্ঞাপন


ওয়ালের বড় মেয়ে বিসান (২৭) সে সময় শিবিরে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। তার আরও চার ভাই-বোন সোনদোস, খোলুদ, বাতুল ও ইয়াহিয়া আহত অবস্থায় আল-আকসা মারটায়ার্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ওয়ায়েলের শাশুড়ি হানান (৮১) হামলায় বেঁচে গেলেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। তার শ্যালক আলি বৃহস্পতিবার আল জাজিরাকে এই তথ্য জানান।

ওয়ায়েলের পরিবার উত্তর গাজার তাল আল-হাওয়া মহল্লায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি তারা নুসিরাত শিবিরে আসেন। বেশ কয়েক বছর ধরে সাংবাদিক ওয়ায়েল গাজা ও অন্যান্য অধিকৃত অঞ্চলে সাংবাদিকতা করছেন। যে হামলায় তার পরিবারের সদস্যরা প্রাণ হারিয়েছেন, তিনি সেটারই লাইভ কভারেজ দিচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ন্যাশনাল প্রেস ক্লাব।

গাজায় ওয়ায়েলের সহকর্মী ও অন্যান্য সাংবাদিকদের তোলা ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায় তিনি হাসপাতালে এসে সন্তানদের কাপড়ে মোড়ানো রক্তাক্ত লাশ জড়িয়ে ধরে বসে আছেন। এছাড়া তাকে দুই নারীর সহায়তায় নাতির লাশ বহন করে এগিয়ে যেতেও দেখা যায়।

আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৭,০০০ ছাড়িয়েছে

এজে প্লাস নেটওয়ার্কের ভিডিওতে ওয়ায়েল জানান, তিনি অনেকের কাছ থেকে শোকবার্তা ও সান্ত্বনার বাণী পেয়েছেন, যার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।

দাহদুহকে গাজার ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর বলে উল্লেখ করেছেন তার সহকর্মীরা। তারা বলেন, আপনি সেখানে রাস্তায় ঘুরে বেড়ান তখন কাউকে জিজ্ঞাসা করুন।

আল জাজিরার তারেক আবু আজজুম বলেন, আত্মীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে যান। যখন খবর পান দাহদুহ তখন বিশ্বের কাছে গাজার বাস্তব চিত্র তুলে ধরছিলেন।

আল জাজিরার আরবি প্রযোজক সাফওয়াত আল-কাহলুত গাজার দের এল-বালাহ বলেন, 'আমি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওয়ায়েলকে চিনি। তার পরিবার গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বিখ্যাত পরিবারগুলোর মধ্যে একটি। এটি একটি পরিচিত পরিবার। সত্য রিপোর্ট করার জন্য তাকে মূল্য দিতে হয়েছে।

হামাস গত ৭ অক্টোবরের হামলায় চালিয়ে ১ হাজার ৪০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২২৪ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। এরপর ইসরায়েল গাজায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে। নারী, শিশুসহ সাধারণ মানুষকে অকাতরে হত্যা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত গাজায় ৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর