রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

চীনের বড় চুক্তি, নেপালে ব্যয়বহুল বিমানবন্দর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

চীনের বড় চুক্তি, নেপালের ব্যয়বহুল বিমানবন্দর
পোখারা বিমানবন্দর। ছবি: দ্য কাঠমাণ্ডু পোস্ট

গত জুনে নেপালের নতুন পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম কোনো ফ্লাইট অবতরণ করে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পোখারায় এই বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়েছে চীনা অর্থে। উদ্বোধনের ছয় মাস পর প্রথম এর রানওয়েতে কোনো বিমান অবতরণ করে। সেটিও এসেছে চীন থেকেই। সিচুয়ান এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ৩১৯ মডেলের বিমানটি প্রথম নামে। বিমানে থাকা যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানাতে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছিল বিমানবন্দরে।

ফ্লাইটটিতে ছিলেন চীনের ক্রীড়াবিদ এবং কর্মকর্তারা। তারা একটি প্রীতি ড্রাগন বোট প্রতিযোগিতার জন্য নেপাল এসেছিলেন। চীনা কোম্পানির হাতে এবং চীনের অর্থায়নেই এই ব্যয়বহুল বিমানবন্দর তৈরি করেছে নেপাল। এর মাধ্যমে চীন বড় চুক্তি পেলেও নেপাল বিশাল ঋণে পড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।


বিজ্ঞাপন


মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি, এর মধ্য দিয়ে নেপাল চীনের ঋণে আরও জড়িয়ে পড়েছে। নেপাল ১৯৭০ এর দশক থেকেই পোখারায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের চেষ্টা করছিল। দেশটির আশা ছিল যে, এই বিমানবন্দর শহরটিকে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলবে। কিন্তু এই প্রকল্পটি গত কয়েক দশক ধরে স্থবির ছিল। রাজনৈতিক অস্থিরতা, আমলাতন্ত্র এবং অর্থের সমস্যার কারণে আলোর মুখ দেখছিল না পোখারা বিমানবন্দর প্রকল্প। অবশেষে এটি নির্মাণে এগিয়ে আসে চীন।

আরও পড়ুন: বিতর্কিত মার্কিন সাহায্য অনুমোদন করল নেপাল

বিশ্বজুড়ে মার্কিন আধিপত্যকে টেক্কা দিতে চীন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে নেপালের বিমানবন্দরও তার একটি। নেপালের দক্ষিণেই রয়েছে ভারত, যেটি চীনের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের অন্যতম। বিমানবন্দর নির্মাণের পর বেইজিং জানায় যে, এই বিমানবন্দরটি তাদের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের’ অংশ। 

এই প্রকল্পের শুরু করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান শি জিনপিং। বিশ্বজুড়ে এই প্রকল্পের অধীনে আনুমানিক এক ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ ও অনুদান প্রদান করেছে চীন। নেপাল যদিও অস্বীকার করেছে যে, এই বিমানবন্দর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ। তারপরেও এই বিমানবন্দরটি নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক যুদ্ধ শুরু হয়।


বিজ্ঞাপন


নিউইয়র্ক টামইস জানিয়েছে, চীন ঋণগ্রহীতা দেশগুলিকে ঋণের মধ্যে ডুবিয়ে রাখছে। পোখারা বিমানবন্দরের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে সেই একই মডেল। যাতে প্রায়শই উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রজেক্টগুলো থেকে চীনা সংস্থাগুলো বিপুল অর্থ পেয়ে থাকে।

নেপালে চীনের রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং’ চীন থেকে নির্মাণ সামগ্রী এবং যন্ত্রপাতি আমদানি করে। পোখারা বিমানবন্দরটি চীনা নকশায় নির্মিত। আবার এর মধ্যে থাকা নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগুলোও চীনের।

আরও পড়ুন: নেপালে বিমান নিখোঁজ হলে কেন খুঁজে পাওয়া কঠিন?

মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি তদন্তের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছে, এই প্রকল্প থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করেছে চীনা কোম্পানিটি। এই প্রকল্পের কারণে নেপাল একটি অপ্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পেয়েছে। চীনা কোম্পানি সিএএমসি ৩০৫ মিলিয়ন ডলার বিড করে এই বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ জিতে নেয়। ২০১৭ সাল থেকে বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু হয়।

যদিও পরে কোম্পানিটি খরচ ৩০ শতাংশ কমিয়ে ২১৬ মিলিয়ন ডলারে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এটি নির্মাণে চীন ও নেপাল ২০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করে। চীন বিমানবন্দর নির্মাণের অর্থ দেবে নেপালকে। এই অর্থের এক চতুর্থাংশ হবে আবার সুদমুক্ত ঋণ। নেপাল বাকি অর্থ চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক থেকে ধার করে। এর সুদ ধরা হয় ২ শতাংশ। ২০২৬ সাল থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু করবে নেপাল।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর