ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ সামাল দিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটির ডানপন্থী সরকার।
রোববার ৬০০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধারের পর সোমবার সিসিলির বন্দরে নিয়ে আসে ইতালির উপকূলরক্ষীরা। আর এই ঘটনার পর অভিবাসন ইস্যুতে আলোচনা কয়েকগুণ বেড়েছে।
বিজ্ঞাপন
চলতি সপ্তাহেই সিনেটে প্রস্তাবিত একটি আইন পাসের উদ্যোগ নিতে পারে ইতালির অতি-ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির সরকার। এর ফলে ইতালিতে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া কঠিন হতে পারে।
ইতালির উপপ্রধানমন্ত্রী এবং জোট সরকারের মিত্র অভিবাসী বিরোধী লীগ পার্টির নেতা মাত্তেও সালভিনি চান, বছরের পর বছর ধরে ইতালির উপকূলে যেসব অভিবাসী মানবপাচারকারীদের নৌকায় চড়ে লিবিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্ক এবং অন্যান্য জায়গা থেকে ইতালিতে এসেছেন, তাদের জন্য ‘বিশেষ সুরক্ষা’ নামে পরিচিত সুযোগটি বাদ দিতে।
এই ‘বিশেষ সুরক্ষা’ এর আওতায় শরণার্থী মর্যাদা না পেলেও অন্তত দুই বছর ইতালিতে থাকার সুযোগ পান অনিয়মিত অভিবাসীরা। এই মেয়াদ পরবর্তীতে আরও বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে। এই সময়ে অভিবাসীরা বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ যেমন পান, তেমনি বাসা ভাড়া করে থাকতেও পারেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ইতালিতে অভিবাসনের নিয়ম জানুন
সালভিনি মনে করেন, এই ‘বিশেষ সুরক্ষা’ এর সুযোগ নিয়ে অভিবাসীরা ‘ইতালি আসতে পারলেই থাকা যাবে’ ভেবে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষ নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে আসতে উৎসাহিত হন।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের একটি বড় অংশই দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে কিংবা উপযুক্ত চাকরির অভাবে সাব-সাহারান এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং মিশর থেকে ইতালি প্রবেশ করে।
প্রধানমন্ত্রী মেলোনিও ‘বিশেষ সুরক্ষা’ বাদ দেওয়ার পক্ষে। তবে তার জোটের অন্য শরিক সিলভিও বার্লুসকোনির রক্ষণশীল ফোরজা ইতালিয়া এর আইনপ্রণেতারা ‘বিশেষ সুরক্ষা’ নামে পরিচিত সুযোগটি পুরোপুরি বাদ দিতে চান না। এটির সময়সীমা দুই বছর থেকে কমিয়ে ছয় মাসে নিয়ে আসার জন্য চাপ দিতে পারেন তারা।
সোমবার ফোরজা ইতালিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সিনেটর মাউরিজিও গাসপারি দেশটির গণমাধ্যম কোরিয়ারে ডেলা সেরাকে বলেছেন, ‘সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে আমরা কঠোরতার একটা বার্তা দিতে চাই।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি নাগরিকত্ব পেয়েছে ইতালিতে
এদিকে, অভিবাসন ইস্যুতে সরকারের জরুরি অবস্থা ঘোষণার সমালোচনা করেছে ইতালির যাজকদের সংগঠন ইতালিয়ান এপিস্কোপাল কনফারেন্স। দেশটির ছোট্ট দ্বীপ লাম্পেদুসার পরিস্থিতি আরও সহজ করার দিকে মনোনিবেশে সরকারের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
৪০০ অভিবাসীকে আশ্রয় দেয়ার সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে সেখানে হাজার হাজার অভিবাসীকে রাখা হয়েছে।
এর আগে, ভূমধ্যসাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন ‘তীব্রভাবে বেড়ে’ যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ১১ এপ্রিল জরুরি অবস্থা জারি করে ইতালি।
এই জরুরি অবস্থা অন্তত ছয় মাস দীর্ঘ হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির নাগরিক সুরক্ষা ও সমুদ্র নীতি বিষয়ক মন্ত্রী নেলো মুসুমেসি। ইতিমধ্যে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় পাঁচ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
এমএইচটি