ইতালিতে প্রতি বছর ভূমধ্যসাগর ও বলকান রুট পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর বিভিন্ন দেশে আট হাজার ৯০০ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব লাভ করেছে, যার অর্ধেকেরও বেশি ইতালির নাগরিকত্ব পেয়ছেন। দেশটির আশ্রয়কেন্দ্রে অভিবাসীদের প্রবেশ ও আবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু ভিন্নতা রয়েছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে উপকূলে আসা আশ্রয়প্রার্থী এবং বলকান রুট অথবা বিমানযোগে আসা অভিবাসীদের জন্য রয়েছে আলাদা পদ্ধতি।
বলকান সীমান্তের কাছাকাছি এবং ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত দেশটিতে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী সংঘাত, যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচতে প্রবেশ করেন। কিন্তু তারা সহজেই আশ্রয় ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারেন না। কারণ, মানবপাচার চক্র, দালাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভুল তথ্যের কারণে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে অনেকেই ইতালির অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত সঠিক তথ্য জানেন না।
ইতালিতে দুটি সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী প্রবেশ করেন। একটি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা উপকূল থেকে সমুদ্র পথে, অপরটি বলকান অঞ্চল ও স্লোভেনিয়া পথে। এছাড়াও বিভিন্ন ফ্লাইট ও বিমানযোগেও অনেকেই আসেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিবাসনের লক্ষ্যে ইতালির আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পাওয়ার উদ্দেশ্যে আসেন তারা। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন শর্ত ও আইনি জটিলতা। পাঠকদের জন্য সেই পদ্ধতিগুলো তুলে ধরা হলো।
বলকান রুটে আসা অভিবাসীদের ‘ঠিকানা’ জটিলতা
ছয় মাস আগে বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রোমানিয়া যান বাংলাদেশি অভিবাসী আবদুল হালিম। ২৬ বছর বয়সী এই যুবক বুখারেস্টে এসে দেখেন যেই কোম্পানিতে তাকে আনা হয়েছে সেখানে কাজ নেই। এরপর এজেন্সি তাকে অন্য কোথাও চাকরি করার প্রস্তাব দেয়, যা বেআইনি। এরপর তিনি ইতালির আশ্রয় প্রক্রিয়া সহজ ভেবে বলকান রুট হয়ে দেশটির রাজধানী রোমে প্রবেশ করেন। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ মাস সেখানে অবস্থানের পর এখনও ‘ঠিকানা’ জটিলতায় আশ্রয় আবেদন জমা করতে পারেননি তিনি।
ইতালির সর্ববৃহৎ অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তা গায়া পিয়েত্রাভালে বলেন, “ইটালিতে ভূমধ্যসাগর হয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আশ্রয় ব্যবস্থায় প্রবেশ অনেকটাই সহজ। কারণ সমুদ্র থেকে আসার পর তাদেরকে ইমার্জেন্সি জোন থেকে পরবর্তীতে সরাসরি সরকারি পরিষেবায় পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে ঠিকানা জটিলতার বিষয়টি তেমন সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায় না।”
তিনি আরও বলেন, “কিন্তু ফ্লাইটে ও স্থলপথে বলকান রুটে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আশ্রয় ব্যবস্থায় প্রবেশ বেশ জটিল। কারণ স্থানীয় ইমিগ্রেশন দপ্তর ও প্রশাসনের কাছে একজন আশ্রয়প্রার্থীকে একটি বাসার ঠিকানা জমা দিতে হয়। যার ফলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অনেক আশ্রয়প্রার্থীকে রাস্তায়, অস্থায়ী ক্যাম্পে কিংবা কোন এনজিওর সহায়তায় রাত্রি যাপন করতে হয়।”
যেখানে যোগাযোগ করবেন
ইতালিতে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদন, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য দিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ইউএনএইচসিআর এর সহায়তায় একটি হটলাইন চালু করেছে অভিবাসন সংস্থা আরচি (ARCI)। হটলাইনের নাম্বারটিতে ইতালিয়ান, ইংরেজি, আরবি ও বাংলাসহ ৩৬টি ভাষায় আশ্রয়প্রার্থীদের তথ্য ও সেবা প্রদান করা হয়।
ইতালির যেকোন স্থান থেকে এই +39 800 905 570 নাম্বারে কল দিয়ে সহায়তা চাওয়া যাবে। তবে কোন আশ্রয়প্রার্থীর স্থায়ী নাম্বার না থাকলে সেক্ষেত্রে বিনামূল্যে লাইকা অথবা যেকোন অস্থায়ী সিমকার্ড থেকে এই +39 3511376335 নাম্বারে ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপেও যোগাযোগ করতে পারবেন।
ইমেইলেও আরচি অথবা ইউএনএইচসিআররে সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ইমেইল করতে হবে এই ঠিকানায়— [email protected]
ইটালির আশ্রয় আবেদন নিয়ে বিস্তারিত জানতে ইউএনএইচসিআর ইতালির ওয়েবসাইটে https://help.unhcr.org/italy/asylum-italy প্রবেশ করেও তথ্য জানা যাবে।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
এমএইচটি