এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যেতে চান। বিদেশে পড়াশোনার জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। কেননা, স্নাতক পর্যায়ে প্রায় সব দেশেই স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ থাকে। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, জীবনযাত্রার মান, গবেষণার সুযোগ ও চাকরির সুবিধার কারণে অনেকেই বিদেশে পড়তে চান।
দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন
বিজ্ঞাপন
কোন দেশে পড়তে যাবেন তা প্রথমেই ঠিক করতে হবে। উচ্চশিক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, জাপানসহ ইউরোপের দেশগুলো শীর্ষে রয়েছে। বিভিন্ন দেশের জীবনযাত্রার ব্যয়, জীবনমান, পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ, নাগরিকত্ব, আবহাওয়া ও পরিবেশে ভিন্নতা আছে। একইসঙ্গে ওই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধাও দেখতে হবে। পড়াশোনার মান, টিউশন ফি, স্কলারশিপের সুযোগ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে।
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কোন দেশ ভালো?
যেকোনো একটি দেশে আবেদন না করে একাধিক দেশের ৪ থেকে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবেন। তবে সামর্থ্য এবং যোগ্যতা অনুযায়ী সহজেই ভিসা পাওয়া যায় এমন দেশে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, মাল্টা, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড, পর্তুগালে যাওয়া সহজ।
ভাষাগত দক্ষতা
বিজ্ঞাপন
উচ্চশিক্ষার একটি অন্যতম শর্ত ভাষাগত দক্ষতা। অধিকাংশ দেশে ইংরেজি ভাষা প্রচলনের কারণে আইইএলটিএস বা টোফেলে ভালো স্কোর করতে হবে।
বিষয় নির্ধারণ
কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবেন সেটি আগে ঠিক করতে হবে। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ওই বিষয়ের চাহিদা, চাকরির বাজার, সুযোগ-সুবিধা, বর্তমান যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।
বিদেশে পড়তে যেসব কাগজপত্র লাগবে
কোন দেশে যাবেন সেটি ঠিক করার পর আপনার প্রথম কাজ হবে স্কলারশিপ এবং উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা।
১. পাসপোর্ট
২. জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট
৩. জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে)
৪. এসএসসি'র সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট এবং টেস্টিমোনিয়াল
৫. এইচএসসি'র সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট ও টেস্টিমোনিয়াল
৬. পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমাণপত্র বা অফার লেটার।
৮. অর্থনৈতিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র
৯. স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি) লেটার
১০. লেটার অব মোটিভেশন
১১. লেটার অব রিকমেন্ডেশন
১২. পুলিশ ছাড়পত্র
১৩. স্বাস্থ্যবিমার প্রমাণপত্র
১৪. আইইএলটিএস/টোফেল/ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট (আপনার স্নাতকের ভাষা যদি ইংরেজি হয় তাহলে স্নাতকোত্তর করতে যেতে চাইলে আপনার পড়াশোনার মাধ্যম যে ইংরেজি ছিল সেটির একটি সার্টিফিকেট আপনার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিতে হবে। এটিকে মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন বা এমওআই বলে)
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ শাখা থেকে সকল কাগজপত্র বিনামূল্যে সত্যায়িত করতে হবে। এছাড়া নোটারি পাবলিক থেকেও সত্যায়িত করা যায়। ভর্তির কার্যক্রম অনলাইনে হলেও অনেকক্ষেত্রে ডকুমেন্টের হার্ডকপি কুরিয়ারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে।
স্কলারশিপ
এইচএসসির পর উচ্চশিক্ষায় জার্মানি, ভারত, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, রাশিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, তুরস্ক সরকারিভাবে স্কলারশিপ দেয়। এমন কয়েকটি বৃত্তি হলো— জার্মানির ডিএএডি, জাপানের মনবুশো বৃত্তি ও মনবুকাগাকুশো বা মেক্সট বৃত্তি, এমএইচটিটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, অস্ট্রেলিয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ, শেভেনিং স্কলারশিপ ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ওয়েবসাইটে বিভিন্ন দেশের স্কলারশিপের নোটিশ পাওয়া যায়। সেখানে সব প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়। এরপর অনলাইনে কাগজপত্র জমা দিয়ে স্কলারশিপের আবেদন করতে পারেন।
কখন আবেদন করবেন
সাধারণ ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে বৃত্তিগুলোতে আবেদনের জন্য আহ্বান করা হয়। অধিকাংশ দেশে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে স্নাতকের সেমিস্টার শুরু হয়। তাই ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকেই মূলত ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়।
আরও পড়ুন: চমৎকার কর্মক্ষেত্রের সেরা ২০ দেশ
খরচ
স্কলারশিপ পেলে খুব বেশি খরচ হয়না। কিন্তু যদি স্কলারশিপ না পান বা আংশিক পান, তখন আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টি বড় হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পর্যায়ে প্রতি বছর বিশ লাখ টাকা খরচ হয়। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যে পনেরো থেকে আঠারো লাখ টাকা লাগে। মালয়েশিয়া, চীন ও ভারতে মোটামুটি বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতোই খরচ হয়।
স্কলারশিপ না পেলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে। যদি টিউশন ফি ১০ লাখ টাকা এবং থাকা-খাওয়ার খরচ ১০ লাখ টাকা হয়, তাহলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট হিসেবে অন্তত ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা দেখাতে হবে। অর্থাৎ ওই দেশে পড়াশোনাকালীন যাবতীয় খরচ যেমন— থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, হাতখরচ, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্যও প্রয়োজনীয় টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেখাতে হবে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। কিন্তু সঠিক নির্দেশনার অভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় না। তাই প্রথমেই এই বিষয়ে যাবতীয় তথ্য খুব ভালোভাবে জানতে হবে। তাহলে খুব সহজেই পৌঁছানো যাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
এমএইচটি/এজেড