বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

তামাক আইন সংশোধনসহ কর বাড়ানোর দাবি ১৫০ চিকিৎসকের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৩, ০৩:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

তামাক আইন সংশোধনসহ কর বাড়ানোর দাবি ১৫০ চিকিৎসকের

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ছাড়াও তামাকজাত দ্রব্যের কর বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে দেশের প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ জন চিকিৎসক।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি জানান ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা।


বিজ্ঞাপন


বিবৃতিতে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ৬টির সঙ্গেই তামাক জড়িত। তামাক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট ও পায়ে পচন এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক জর্দা ও সাদাপাতা ব্যবহারের ফলে খাদ্যনালীতে ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতা সম্পর্কে এখন আর কারও অজানা নয়।

>> আরও পড়ুন: ৬ মাস পরও চালু হয়নি সব সেবা

এতে বলা হয়, গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের (গ্যাটস) রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও ৩৫ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন। এছাড়া ধূমপান না করেও প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও গণ পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যানসার হবার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ধরনের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে। 

এ অবস্থায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপের মাধ্যমে মূল্য বাড়িয়ে তামাকের ব্যবহার হ্রাসে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ। এতে করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনেও তা সহায়ক হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন: শিশুদের অতি চঞ্চলতা কি মানসিক বিকাশে বাধা দেয়?

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২০-২১ সালের তুলনায় ২০২১-২২ সালে মাথাপিছু জাতীয় আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলার। অথচ এই সময়ে বেশিরভাগ সিগারেটের দাম হয় প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে অথবা সামান্য বেড়েছে। ফলে বর্তমানে সিগারেট অধিক সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। এ জন্য করারোপের মাধ্যমে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করা জরুরি।

বর্তামান করে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে সর্বোপরি জনস্বার্থে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ এবং তামাকের কর বৃদ্ধি জরুরি। বাংলাদেশে বর্তমান তামাক কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল হওয়ায় তামাকের ব্যবহার ও ক্রয়-ক্ষমতা হ্রাসে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। বর্তমানে সিগারেট খুবই সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। ফলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে ধূমপায়ীরা তুলনামূলক কমদামী সিগারেট বেছে নিতে পারছে। তাই তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে ধূমপায়ীদের নিরুৎসাহিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি আরও শক্তিশালী করে প্রয়োজন। একই সঙ্গে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা শিগগিরই জরুরি বলেও অভিমত দেন চিকিৎসকরা।

>> আরও পড়ুন: ‘করোনাকালে টাকা নয়, মানুষের জীবনের কথা ভেবেছেন প্রধানমন্ত্রী’

প্রধানমন্ত্রীর ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের’ ঘোষণাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও কঠোর করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের কর কাঠামোর সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।

যৌথ বিবৃতি দেওয়া ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হলেন- বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতাল ও ওয়েলফেয়ার হোমের পরিচারক অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসেস ও বিভাগীয় প্রধান রেডিয়েশন অনকোলজির পরিচালক অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান চৌধুরী, স্কয়ার হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি এবং রেডিওথেরাপি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান ক্লিনিক্যাল অনকোলজির অধ্যাপক ডা. এ এম এম শরিফুল আলম প্রমুখ।

এমএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর