বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ধুলার রাজ্যে ফুটপাতে খাবার বিক্রি, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ধুলার রাজ্যে ফুটপাতে খাবার বিক্রি, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

টানা কয়েক সপ্তাহে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করছে রাজধানী ঢাকা। শীতকালের শুরু থেকে শহরের সড়কগুলোতে ধুলোর রাজত্ব চলছে। প্রতিনিয়ত নাকমুখ ঢেকে চলতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। তবে মারাত্মক দূষণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি মেনে নিয়ে সকল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চালাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। এমনকি ধুলোর চাদরে ঢেকে থাকা সড়কেই চলছে খাবারের দোকান। দেদারছে চলছে খাবার তৈরি ও বিক্রয়। 

রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কের একটি মালিবাগ থেকে বাংলামোটরগামী সেলিনা পারভীন সড়ক। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের মগবাজার মোড় থেকে বাংলামোটর অংশে দীর্ঘদিন যাবৎ উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে সড়কটিতে প্রচণ্ড ধুলোবালিতে চলাচল করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাকমুখ বেঁধে চললেও ধুলো থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না। তবে এ অবস্থার মধ্যেও সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে চলছে খাবার ক্রয়-বিক্রয়। ফুটপাতেই তেলের স্টোভ বা সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা বসিয়ে ভাজা হচ্ছে পুরি, সিঙ্গারা। আবার অনেকে রুটি ভেজে বিক্রয় করছেন। আর ক্রেতারা ফুটপাতে পাতা বেঞ্চে বসে গ্রহণ করছেন এসব মুখরোচক খাবার।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন: স্কুলপাড়ায় ধুলার রাজত্ব

ধুলোবালির মধ্যে খাবার তৈরি ও গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতাদের সরল উত্তর, ধুলো তো সবসময়ই থাকে। এটির জন্য তো আর ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না। তাছাড়া ভাজার পরপরই এসব খাবার কাঁচের বক্সে রাখা হচ্ছে। আর ক্রেতারা তো সব দেখে শুনেই খাবার খাচ্ছেন।

অপরদিকে ক্রেতাদের মতে, ধুলোবালির মধ্যে খাবার খাওয়াটা বিপদজনক তারা জানেন। তবে সাময়িক ক্ষুধা ও খাবারগুলো মুখরোচক হওয়ায় তারা তা গ্রহণ করছেন। একইসঙ্গে তারা নিয়মিত খাচ্ছেন না বলেও জানান অনেকে।

dm


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক এলাকা ঘুরে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। এমনকি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালগুলোর সামনেও লক্ষ্য করা গেছে একই চিত্র। বরং অন্য যেকোনো এলাকার তুলনায় হাসপাতাল এলাকায় দোকানের সংখ্যা বেশি। অন্যান্য এলাকার তুলনায় হাসপাতাল এলাকায় রোগী ও স্বজনসহ সাধারণ মানুষের পদচারণা বেশি থাকায় অধিক দোকান-পাট গড়ে উঠেছে। 

শাহবাগ মোড়ে দেশের দুইটি বড় হাসপাতাল অবস্থিত। একটি দেশের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং অপরটি বারডেম জেনারেল হাসপাতাল। এই দুই হাসপাতালকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের সামনে ও আশেপাশে একাধিক হালকা খাবার ও সরবতের দোকান গড়ে উঠেছে। এদিকে ওই এলাকায় মেট্রোরেলের একটি স্টেশনে কাজ চলমান থাকায় এলাকার বায়ুমানের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। এলাকাটি সর্বদায় ধুলোর চাদরে ঢাকা থাকে। এর মধ্যেই এসব সরবত ও খাবারের দোকানে বেচা-বিক্রি চলমান আছে।

>> আরও পড়ুন: ধুলার রাজ্যে অসহায় রাজধানীবাসী

একই চিত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রতিষ্ঠানটির জরুরি বিভাগের সামনের খোলা স্থানেই চলছে ভাতসহ সকল ধরনের খাবার বিক্রি। এসব খাবারের মূল ক্রেতা রোগীর স্বজনরা। ফলে সেবা নিতে এসে তারাও নানাবিধ রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রাস্তার পাশের প্রায় সব দোকানের খাবার খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত অবস্থায় তৈরি, বিক্রি ও সাজিয়ে রাখা হয়। এর ফলে এসব খাবারে প্রতিনিয়ত পোকামাকড়, মাছি দ্বারা দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। একইসঙ্গে এসব খাবার যেভাবে উম্মুক্ত স্থানে পরিবেশন ও তৈরি করা হয়। এর পাশ দিয়েই যানবাহন চলাচলের সময় বাতাসের ময়লা ধূলিকণাগুলো সেইসব খাবারে পড়ে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।

এসব খাবারের প্রায় দোকানেই নেই খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। এর ফলে এসব দোকানের খাবার তৈরিতে প্রায়ই ব্যবহার করা হয় দূষিত পানি। ফিল্টার করা পানি ব্যবহার করা হয় না বলে পানিতে Escherichia coli ও Proteus basilas জাতীয় জীবাণু থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। এ ছাড়া যেসব গ্লাস বা পাত্রে এসব জুস বা রস দেওয়া হয় তা ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয় না। সেক্ষেত্রে গ্লাস বা পাত্রের মাধ্যমেও মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

এছাড়া রাস্তার ফুটপাতের এই দোকানগুলোতে পরিত্যক্ত বই, খাতা বা পেপারের কাগজে খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। এসব ব্যবহৃত কাগজে কত ময়লা-আবর্জনার সংস্পর্শ থাকে তা চিন্তা করলেই এর ক্ষতিকর দিকটি বুঝতে পারা যায়। এসব খাবার গ্রহণে ডায়রিয়াসহ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে এসব খাবার গ্রহণ থেকে সকলকে বিরত থাকার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

এমএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর