বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

কানে কম শোনেন ৪২ শতাংশ রিকশাচালক!

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর ২০২২, ০৩:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ফাইল ছবি

দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শব্দ দূষণ। ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাসসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন সাধারণ জনগণ। এর মধ্যে সর্বাধিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন রিকশাচালকেরা। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে প্রায় ৪২ ভাগ রিকশাচলকই শব্দ দূষণের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এরপরই রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ ও লেগুনা চালকেরা।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইয়েন্সের 'বাংলাদেশের রাজপথে শব্দদূষণ এবং শব্দদূষণের কারণে রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণ সমস্যা' সংক্রান্ত এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে।


বিজ্ঞাপন


চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই গবেষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইয়েন্সের ইব্রাহিম অডিটোরিয়ামে প্রধান গবেষক ড. সাইকা নিজাম গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন: যন্ত্রণার নাম হাইড্রোলিক হর্ন, বিকট শব্দে কান ঝালাপালা

গবেষণায় ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজশাহী, কুমিল্লা  এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের  শব্দদূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এ সময় এসব সিটি করপোরেশন রাজপথে কর্মরত ৬৪৭ জন ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট, বাসচালক ও হেলপার, পিকআপ চালক, সিএনজি চালক, লেগুনাচালক, দোকানদার, মোটরসাইকেল, রিকশাচালক এবং প্রাইভেটকার চালকের শ্রবণশক্তি পরিমাপ করা হয়।

এতে দেখা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি চারজনে একজন কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছেন।   


বিজ্ঞাপন


এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪২ শতাংশই রিকশাচালক। এছাড়া প্রায় ৩১ ট্রাফিক পুলিশ, ২৪ শতাংশ সিএনজি চালক, ২৪ শতাংশ দোকানদার, ১৬ শতাংশ বাস, ১৫ শতাংশ প্রাইভেটকার এবং ১৩ শতাংশ মোটরসাইকেল।

এসব সমস্যায় ভোগাদের ৭ শতাংশের শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার জরুরি বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন: শব্দ দূষণ রোধে আইন আছে, প্রয়োগ নেই

সমস্যায় ভোগা এসব মানুষ সবচেয়ে বেশি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের।  ঢাকার কাছের এই বিভাগের ৫৫ শতাংশ মানুষ শব্দদূষণের শিকার। এছাড়া সিলেটে প্রায় ৩১ শতাংশ,  ঢাকায় ২২ দশমিক ৩ শতাংশ, রাজশাহীতে প্রায় ১৪ শতাংশ রাজপথে কর্মরত পেশাজীবী শব্দদূষণে ভুগছেন।

RR

এই অবস্থায় গবেষণায় সমস্যা প্রতিকারে শব্দদূষণের উৎস এবং মাত্রা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়াসহ বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, রাজপথে পেশাজীবীদের কর্মঘণ্টা কমানো, যেখানে প্রয়োজন সেখানে উপযুক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করা, রিকশাচালক ও ট্রাফিক পুলিশের প্রতি বিশেষ নজর, নিয়মিত শ্রবণ পরীক্ষার তাগিদ দেওয়া ইত্যাদি।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, 'অসংক্রামক রোগের কারণ হিসেবে শব্দদূষণকে আমরা তেমনটা গুরুত্ব দিতাম না। কিন্তু এটি বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। গবেষণায় এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে আসবে তা ভাবিনি। বয়স বাড়লেই মানুষ ধীরে ধীরে কানে কম শুনতে শুরু করে। কানে না শোনার নানা কারণও থাকতে পারে। শুধু রাস্তায় নয়, এর জন্য বাসা-বাড়ির আশপাশে গড়ে ওঠা ভবনের দায় রয়েছে।'

এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগকেও দায়িত্ব নিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: হাসপাতাল এলাকায় শব্দ দূষণ তুঙ্গে

এদিকে গবেষণার উদ্দেশ্য তুলে ধরে ড. সাইকা নিজাম বলেন, 'রাজপথে শব্দদূষণের মাত্রা নির্ণয় এবং রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণশক্তির ওপর সেই শব্দদূষণের প্রভাব নির্ণয় করার উদ্দেশ্যে এই গবেষণা চালানে হয়েছে।'

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে দিন দিন যা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ৪৩২ মিলিয়ন বা ৪৩ কোটি ২০ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ পেশাগত কারণে শব্দদূষণজনিত নানাবিধ সমস্যায় ভুগছেন।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন