শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

হাসপাতাল এলাকায় শব্দ দূষণ তুঙ্গে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪২ এএম

শেয়ার করুন:

হাসপাতাল এলাকায় শব্দ দূষণ তুঙ্গে

নগর জীবনে এক যন্ত্রণার নাম শব্দ দূষণ। রাজধানী ঢাকায় এই শব্দ দূষণের মাত্রা সারা বিশ্বকে হার মানিয়েছে। এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাচ্ছে না হাসপাতাল এলাকাও। হাসপাতাল বা সরকার ঘোষিত নীরব এলাকায়ও অধিক মাত্রার শব্দ দূষণ রেকর্ড করা হয়েছে।

তথ্য বলছে, রাজধানীর হাসপাতালগুলোর সামনের রাস্তায় শব্দ দূষণের মাত্রা সর্বনিম্ন ৬৯ দশমিক ৭ ডেসিবল এবং সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৯ ডেসিবল পর্যন্ত পাওয়া গেছে। যেখানে নীরব এলাকার জন্য আদর্শ মান দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবলের বেশি নয়।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) ১০ সদস্যের একটি গবেষক দল চলতি বছরের মার্চ মাসে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ব্যবহারের ভিত্তিতে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে। সেখানে মিলেছে এমন তথ্য।

আমেরিকান স্পিস অ্যান্ড হেয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন (আশা) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ৭১ থেকে ৯০ ডেসিবল মাত্রায় শব্দ তীব্রতর শব্দ দূষণ হিসেবে ধরা হয়।

নীরব ঘাতক এই দূষণ সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নয়। বেশিরভাগ মানুষ না বুঝেই তা করছেন। রাস্তায় অযথা হর্ন বা মাইক বাজিয়ে ক্যাম্পেইন, ভিক্ষা, জোর করে আওয়াজ দিয়ে গান শোনা, শব্দ করে হাঁটা এবং অতি বিশেষ ব্যক্তিদের জন্মদিনে মাইকে গান ও বক্তৃতা রেকর্ড বাজানো এসবের দ্বারা শব্দ দূষণ হচ্ছে, যা সহজেই ত্যাগ করা যেতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, নাগরিক স্বাস্থ্যের যখন এই অবস্থা, তখন ঝুঁকি বাড়ছে জীবনে। কমছে গড় আয়ু। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দ দূষণ এক মহামারিতে রূপ নিয়েছে। এই নীরব ঘাতকের কবলে নগরবাসী। যার প্রভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়। পরিবারে নেমে আসছে বিপর্যয়।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) গবেষণার অংশ হিসেবে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ১৭টি হাসপাতালের সামনে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে। সেখানে শব্দের মাত্রার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৭টি স্থানেই আদর্শ মান (৫৫ ডেসিবল) অতিক্রান্ত হয়েছে, যেখানে আদর্শমান অতিক্রান্তের পরিমাণ বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সামনে ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ (৬৯ দশমিক ৭ ডেসিবল) যা ১৭টি স্থানের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে ৬৩ শতাংশ (৮৯ দশমিক ৯ ডেসিবল) যা ১৭টি স্থানের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আরও পড়ুন: শব্দ দূষণে যে কারণে শীর্ষে ঢাকা

hospital

গবেষণা দলে নেতৃত্ব দেওয়া বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সামনে ন্যূনতম ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে সর্বোচ্চ ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ শব্দ দূষণ পাওয়া গিয়েছে। ১৭টি স্থানের মধ্যে শব্দের মাত্রা গড়ে ৮১ দশমিক ৭ ডেসিবল। যার মধ্যে নয়টি স্থানেই ৮০ ডেসিবলের উপরে শব্দের মাত্রা রয়েছে। যা US EPA অত্যাধিক বিপজ্জনক মাত্রার শব্দ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

শ্রবণ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর শব্দ দূষণের বিশেষ প্রভাবটি হলো শ্রবণশক্তি হ্রাস। স্কুলগামী শিশুদের ওপর শব্দ দূষণের প্রভাব বেশি, অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে ক্লাস করার জন্য তারা ইয়ারফোন ব্যবহার করে পাশাপাশি অতিরিক্ত গান-বাজনা ইত্যাদি শোনার ফলে পড়াশোনায় অমনোযোগিতা দেখা দিচ্ছে এবং তাদের খাবারে অরুচি সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’

নাগরিক জীবনে শব্দ দূষণের প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দূষণের সাথে স্বাস্থ্যঝুঁকি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতি বছর প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। থাইরয়েড রোগী বাড়ছে। যাদের অধিকাংশ ৪০ বছরের নারী। এছাড়াও বন্ধ্যাত্ব বাড়ছে, যার মূলে পরিবেশ দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ। এছাড়াও সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে ঝুঁকি বাড়ছে।’

এবিষয়ে বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘শব্দ দূষণের ফলে জলজ প্রাণীর ক্ষতি হয়, একেক ধরনের প্রাণীর শ্রাব্যতা সীমা একেক রকম। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের ফলে তারা দিশেহারা হয়ে যায়। সবাইকে এক ছাদের নিচে এসে সম্বলিতভাবে এই শব্দ দূষণ রোধে কাজ করতে হবে। এর মাধ্যমে মানুষ ও প্রাণীর নিরাপদ শ্রবণ নিশ্চিত করতে হবে।’

ডিএইচডি/জেবি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর