শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩২ এএম

শেয়ার করুন:

দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক
দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক

বিশ্ব স্ট্রোক দিবস আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর)। স্ট্রোক সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে স্ট্রোক দিবস পালন করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বছরে বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ৩৭ লাখেরও বেশি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মৃত্যু হার ৬০ শতাংশ। যারা বেঁচে থাকেন তারা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন।


বিজ্ঞাপন


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই ধরণের স্ট্রোক হয়ে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি, কায়িক পরিশ্রম না করা, মদ্যপান ও ধূমপানসহ নানা কারণেই স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। 

দেশের প্রতিথযশা নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, একশ জনের মধ্যে ৮৫ জনই মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে স্ট্রোক করেন। আর বাকি ১৫ জনের ক্ষেত্রে  রক্তনালী ছিড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। রক্তক্ষরণ হলে হঠাৎ তীব্র মাথা ব্যাথা এবং বমি হয়। আর রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যে স্ট্রোক হয় তাতে কথা বলার জড়তা সৃষ্টি হতে পারে, শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে এবং মুখ বাঁকা হয়ে যেতে পারে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, স্ট্রোক মস্তিষ্কের রক্তনালির রোগ। স্ট্রোক ২ ধরনের হয়; যথা ইসকেমিক ও হেমোরেজিক। ইসকেমিক স্ট্রোকে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাধলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যায়। ফলে মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হয়ে যায়। শুরুতে কোষে রক্ত চলাচল কমে গেলেও বেঁচে থাকতে পারে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর কোষগুলো মারা যায়। একে বলে কোর। কোরের চার পাশে মস্তিষ্কের বেশ কিছু অংশেও রক্ত কমে যায়। একে বলে প্যানামব্রা। যদি প্যানামব্রা অংশে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা যায়, তাহলে স্ট্রোকের ভয়াবহতা অনেকটা কমানো যায়। অন্যদিকে হেমোরেজিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।

এদিকে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে মৃত্যু হয় এই রোগে। দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। বর্তমানে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৫ লাখ লোক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে ভুগছে।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স বিভাগের গবেষণায় জানা গেছে, প্রতি ছয়জনের একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসায় ২১২ জন নিউরোসার্জন রয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজন ১ হাজার ৬০০ জন নিউরোসার্জন।

সচেতনতার ঘাটতি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবনের প্রবণতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসহ নানা কারণে স্ট্রোকে মৃত্যু বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বেশি লক্ষ্য করা গেলেও যে কোন বয়সেই তা হতে পারে। ৫০ বছর বয়সের পর প্রতি ১০ বছরে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। ফাস্টফুডে আসক্তদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। শিশু ও তরুণদের অনেকে খাদ্যাভ্যাসের কারণে স্ট্রোক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন।

২০০৭ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশানের অধীনে প্রতিবছর স্ট্রোক সচেতনতা বাড়াতে ‘বিশ্ব স্ট্রোক দিবস’ পালন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ ও নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল এবং পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া আট বিভাগে আটটি স্ট্রোক সেন্টার চালু করার কথা থাকলেও এখনও কার্যকর হয়নি। দেশে স্ট্রোকের চিকিৎসা অপ্রতুল হওয়ায় মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ঝুঁকি বাড়ছে।

এসএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর