মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বরগুনা ও দাউদকান্দি কেন ডেঙ্গুর ‘হটজোন’?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২৫, ০৮:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

dengue
ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎ করে দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলা এবং কুমিল্লার দাউদকান্দি ডেঙ্গুর ‘হটজোন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দেশের মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সিংহভাগই এই দুই জায়গার।  

বিভাগওয়ারি হিসাবে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী এখন বরিশাল বিভাগে। সেখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৯৮০ জন, মারা গেছেন আট জন।


বিজ্ঞাপন


স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ১০ জেলায় সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে। এই ১১ জেলায় রোগী পাওয়া গেছে ৫ হাজার ৩৯৮ জন। দুই মাস আগে গত ১৫ এপ্রিল এসব জায়গায় রোগী ছিল এক হাজার ৪৩৪ জন। সে হিসেবে এই দুই মাসে রোগী বেড়েছে চার গুণের বেশি।

জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়, এডিস মশার অবস্থা বুঝতে দেশে সাধারণত তিন দফা জরিপ চালানো হয়। বর্ষার আগে, বর্ষার সময় এবং পরে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় এ জরিপ শেষ করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনির্ণয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি)।

এ বছরের মধ্য জানুয়ারিতে হওয়া জরিপে দেখা যায়, দেশের ডেঙ্গুর প্রধান বিস্তারস্থল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার চেয়ে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি। ওই বিভাগের বরগুনা অঞ্চলে ঘনত্ব ছিল ২০ শতাংশের বেশি। এটা ছিল সর্বোচ্চ। বরগুনায় তাই ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব নিশ্চিতভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়।


বিজ্ঞাপন


বরগুনায় এডিস মশার বিস্তারের কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়, বরগুনায় সুপেয় পানির সংকট থাকায় পানি ধরে রাখা হয়। ওই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে পানি ধরে রাখার বড় বড় মটকা বা প্ল্যাস্টিকের তৈরি পাত্রগুলোতে। এসব পানি বৃষ্টির সময় ধরে রাখা হয়।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আব্দুল ফাত্তাহ ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘বরগুনায় সুপেয় পানির অভাব থাকায় খাবার পানি ও রান্নাবান্নার জন্য পানি সংরক্ষণ করা হয়। বিশেষ করে বৃষ্টির পানি চৌবাচ্চা অথবা প্ল্যাস্টিকের ড্রামে রাখা হয়। এখানে যে উচ্চ মাত্রায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে তা ওই সংরক্ষণ করা পানিতেই। এছাড়া এখানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ।’

আরও পড়ুন

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ২১২ জন, বেশির ভাগই বরিশাল বিভাগের

বরিশালে তিন হাজার ছাড়িয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা

সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমার এখানে হাসপাতালে বেড আছে ২৫০টি। কিন্তু তার চারগুণ রোগী ভর্তি আছে। তার সাথে আছেন তাদের আত্মীয়-স্বজন। আমরা চেষ্টা করেই তাদের মশারি ব্যবহারে বাধ্য করতে পারছি না। ফলে এখন হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে তাদের স্বজনরাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা আবার বাইরে গিয়ে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছেন।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার টিম এরই মধ্যে বরগুনায় এসেছিল। তারাও পানি জমিয়ে রাখাকে প্রধান কারণ বলেছেন। এখানে সুপেয় পানির আলাদা ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। আর আমার হাসপাতালে আইসিইউ নাই। ফলে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে বরিশাল পাঠাতে হয়।’

এদিকে বরগুনার পর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা ডেঙ্গুর রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই একটি উপজেলার কারণেই এখন পুরো কুমিল্লা জেলা ডেঙ্গুর শীর্ষ জেলাগুলোর মধ্যে একটি। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ছয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। এনিয়ে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত একটি উপজেলায়ই আক্রান্তের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে পৌরসভা এলাকায়। আক্রান্তের হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে হটস্পট ঘোষণা করা হয়েছে। রেড জোন চিহ্নিত করা এলাকার তিন নারী ডেঙ্গুতে মারা গেছেন।

Borgona
বরগুনায় হাসপাতালে ঠাঁই নেই। ছবি: সংগৃহীত

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার ৫০ বেডের হাসপাতালে আর রোগী ভর্তি করার জয়াগা নাই। বেডের বাইরেও ফ্লোরিং করে কিছু রোগী রাখা হয়েছে।’

তার কথা, ‘এই এলাকায় আসলে গবেষণা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিম এলে ভালো হয়। তবে আমাদের যেটা মনে হয়েছে এই পৌর এলাকায় অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে। ময়লা আবর্জনায় ভরা। আর কাছে হওয়ায় এখানে অনেকেই প্রতিদিন ঢাকায় গিয়ে অফিস করেন। আবার ফিরে আসেন। সেই কারণেও হতে পারে।’

আরও পড়ুন

ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে ঢাকার দুই সিটির ১৩ ওয়ার্ড

একসঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু ও করোনা, সচেতনতার তাগিদ

এবার জানুয়ারি থেকেই দেশের ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। জানুয়ারি মাসে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল এক হাজার ১৬১ জন। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে কিছুটা কমলেও এপ্রিল থেকে আবার বাড়তে থাকে। মে মাসে  এক হাজার ৭৭৩ জন আর জুনের ১৭ দিনে দুই হাজার ১২১ জন। সামনে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর তীব্রতা আরও বাড়বে বলে জানান আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন।

এই বিশেষজ্ঞ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা এত দিন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকাকেন্দ্রিক কাজ করেছি। কিন্তু বাংলাদেশে সব জায়গায়ই এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। ফলে এখন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। আর এডিস মশার প্রজননের জন্য ঢাকার বাইরেও দালান কোঠা, ভবন আছে। আমরা সেগুলোকে গুরুত্ব দিইনি। আর জেলা বা উপজেলার হাসপাতালগুলোর এত রোগী সামাল দেওয়ার সক্ষমতা নেই। অনেক হাসপাতালে আইসিইউ নাই।’

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর