খুন, ক্ষমতা, রহস্য, ধোঁকা এবং আবেগ-অনুভূতির গল্প নিয়ে নির্মিত ক্রাইম থ্রিলার ওয়েব সিরিজ ‘গিরগিটি’। সিরিজের গুরত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইরফান সাজ্জাদ। এটি আগামী ১৬ অক্টোবর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গ’তে মুক্তি পাচ্ছে। সিরিজের নানা বিষয় নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে ফোন আলাপ জমেছিল অভিনেতার।
কীভাবে যুক্ত হলেন?
গেল কোরবানি ঈদের ছবি ‘জংলি’-এর চিত্রগ্রাহক রিপন চৌধুরী আমাকে এই গল্পটা দেন। স্ক্রিপ্ট দেখে আমার খুব ভালো লাগে। আমি কাজটা করতে রাজি হই। আমার কাছে মনে হয়েছিল বাংলাদেশে অনেক ধরনের ক্রাইম থ্রিলার হয়েছে কিন্তু এটার মধ্যে আলাদা একটা ব্যাপার আছে। সিনেমা সংশ্লিষ্টরা আমাকে যেভাবে শুটিং পরিকল্পনা দিয়েছিল আমরা কাছে মনে হয়েছিল নেটফ্লিক্স এবং অ্যামাজন প্রাইমের সিরিজগুলোর মতো। আমার কাছে মনেই হইনি এটা বাংলাদেশের সিরিজ। সবকিছু মিলে আমার মনে হলো এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত। তারপর আমরা রিহার্সাল করি। চরিত্রটা নিজের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করি। মানুষ যাতে বিশ্বাস করে চরিত্রটা আমি ঠিকঠাক ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। সে জন্য অনেক শ্রম দিতে হয়। পর্দায় চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলার জন্য চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। এখন দেখা যাক মানুষ কতটা পছন্দ করে।

চরিত্র
বিজ্ঞাপন
‘গিরগিটি’ হলো ক্রাইম থ্রিলার সিরিজ। আমি এই সিরিজে ডিবি মারুফের চরিত্রে অভিনয় করেছি। বিশ্বে ক্রাইম থ্রিলার জনরার সিরিজগুলো বেশি জনপ্রিয়। আমরাও এই ধরনের কাজের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা যে থ্রিলারগুলো দেখি সেখানে অনেক ঘটনা প্রবাহ গুরুতর হয়ে যায়। ‘গিরগিটি’ সিরিজ অনেক বড় একটা তদন্তকে খুব হালকাভাবে দেখানো হয়েছে। আমরা অতি মানবীয় কিছু দেখাইনি। এ কারণে আমার কাছে মনে হয় দর্শক একটা ভিন্ন ধারার ক্রাইম থ্রিলার ওয়েব সিরিজ দেখতে পারবেন।
চরিত্র ফুটিয়ে তোলা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
আমি তো একজন অভিনেতা, অভিনয় করা আমার কাজ। ‘গিরগিটি’ সিরিজের চরিত্রের জন্য বাড়তি কোনো চ্যালেঞ্জের মুখমুখি হতে হয়নি। যেকোনো চরিত্রকে ধারণ করা একজন অভিনেতার কাজ। তাছাড়া আমি রহস্যময় চরিত্রগুলোতে কাজ করতে চাই। সবসময় একই চরিত্রে অভিনয় করতে ভালো লাগে না। নাটকে এক্সপেরিমেন্টাল কাজ খুব কম হয়। কারণ, নাটক ভিউ নির্ভর হয়ে গেছে। পরীক্ষামূলকভাবে কোনো কাজ করতে গিয়ে যদি ভিউ কম হয় তাহলে প্রযোজকের ক্ষতি হবে। সে কারণে নাটকে রোমান্টিক গল্প বা ট্রেন্ডিং গল্পের প্রাধান্যতা বেশি। একবারে নাই তা বলব না, তুলনামূলক কম। পক্ষান্তরে ওটিটির দর্শক আলাদা। ওটিটিতে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ থাকে। একজন অভিনেতা হিসেবে আমি অবশ্যই চাইব ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র দিয়ে আমার দর্শকদের মন জয় করতে। সেই জায়গা থেকে আমার জন্য ‘গিরগিটি’-এর মারুফ চরিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন অভিনেতা হিসেবে রোমান্টিক চরিত্রের বাহিরে অন্যান্য চরিত্রে কতটুকু সাবলীল তা আমার দর্শকদের দেখাতে চাই। কতটুকু ভালো করতে পারলাম তা দর্শক বিচার করবে। তবে চেষ্টা তো করতেই পারি।

‘গিরগিটি’ নিয়ে প্রত্যাশা
সব অভিনেতার-ই প্রত্যাশা থাকে তার কাজ মানুষ দেখবে, ভালোবাসা দেবে। একটা কাজ করার আগে আমি ভাবলাম আল্লাহ এটা কেউ দেখবে কি? না, দেখবে? তার থেকে কাজটাই না করি। আমি যদি ঝুঁকি নিয়ে দর্শকদের ভিন্ন ভিন্ন জনরার কাজ উপহার না দেই তাহলে কীভাবে হবে। ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কন্টেন্ট নির্মাণ করে দর্শকদের উপহার দিতে হবে। চরিত্র বা গল্পের মধ্যে ভিন্নতা না থাকলে দর্শক বিরক্ত হয়ে যাবে। ইন্ডাস্ট্রিও বড় হবে না। ‘গিরগিটি’-এর ট্রেলার দেখে অনেকেই আমাকে ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে প্রশংসা করেছে। আশা করি কাজটা যে কয়জন দেখুক তাঁরা পছন্দ করবে। দর্শক আমার কাজ পছন্দ করা মানে ভিন্ন একটা চরিত্রে আমাকে গ্রহণ করে নেওয়া। দর্শক যদি পছন্দ করে তাহলে এটা ‘সিজন ২’ হতে পারে।
বর্তমান ব্যস্ততা
মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘এটা আমাদের গল্প’ ধারাবাহিকে কাজ কারছি। খুব বড় পরিসরে শুটিং হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় নিকট অতীতে বাংলাদেশে এত বড় পরিসরে কোনো ধারাবাহিকের কাজ হয়নি। এ বছর তো শেষের দিকে সামনে কিছু একক নাটকে কাজ করব। পাশাপাশি একটা ওয়েব সিরিজ ও ওয়েব সিনেমার বিষয়ে কথা হচ্ছে। একটা সিনেমাও প্রায় নিশ্চিত। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে শুটিং শুরু করব। দর্শক আমাকে টিভিতে, নাটকে বেশিবার দেখার থেকে ভালো কাজে দেখুক। সত্য কথা বলতে ক্যারিয়ারের এমন একটা জায়গায় আছি অনেক অনেক কাজ করে নিজের পকেটটা ভারী করতে চাই না। আমি চাই কাজের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকি।
ইএইচ/

