ফের অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হয়েছেন লালন সম্রাজ্ঞী খ্যাত সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফরিদার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে মুঠোফনে গায়িকার বড় ছেলে ইমাম নিমেরি উপল সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আনলেন বিস্তর অভিযোগ। তার দাবি, পরিবারের সদস্যরা ফরিদা পারভীনের চিকিৎসার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন না। করা হচ্ছে অবহেলা। চিকিৎসার চেয়ে গায়িকার সম্পত্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেইলকে ফরিদাপুত্র বলেন, ‘তিনি (ফরিদা পারভীন) এখন আইসিইউতে আছেন। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। ডায়ালাইসিস চলছে। গতবার বাসায় নিয়ে আসাটা ভুল হয়েছে। কথাটা ডাক্তাররা আগেও বলেছিলেন, এখনও বলছেন।’

সরকারের কাছে ফরিদা পারভীনের চিকিৎসার আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে উপল বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা আবেদন জানাচ্ছি যেন তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে। তাহলে ভালো কিছু হবে আশা করি। গতবারও সরকার থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবারিক সমস্যা কারণে তখন যথাযত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া আমাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ ফেসবুকে একেক রকম মন্তব্য করছেন। সেটা দেখে সাংবাদিকরা লিখছেন। এটাও তাঁর অসুস্থতার কারণ।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে জানিয়েছি তার চিকিৎসার ব্যাপরটা দেখার জন্য। কিন্তু আমাদের পরিবারে কেউ কেউ আবার বলছেন তিনি টাকা-পয়সা চাচ্ছেন না। টাকা-পয়সা ছাড়া কোনটাকে সহযোগিতা হিসেবে বোঝাচ্ছেন আমার বোধগম্য না। ছেলে হিসেবে কিইবা বলব। তাঁকে মেরে ফেলার মতো অবস্থা করা হয়েছে। সরকারের থেকে আর্থিক সাহায্য সবাই নিতে পারে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্বের ভেতরে পড়ে। সরকার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করলে সবার জন্য সুবিধা। কেউ তো ব্যক্তিগত টাকার জন্য বলেনি। আর সব থেকে বড় কথা গাজী আব্দুল হাকিম (ফরিদা পারভীনের স্বামী) এখন সব দেখাশোনা করছেন।’

উপল মনে করছেন ফরিদা পারভীনের স্বাস্থ্যের চেয়ে তার সম্পদকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ফরিদা পারভীন বেশি সম্পদের অধিকারী নন। কিন্তু তার সম্পত্তি-ই এরা (পরিবারের সদস্যরা) বড় মনে করেছেন। তার স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ না দেওয়া-ই বারবার অসুস্থতার কারণ। আমরা আগেও বলেছি এখনও বলছি আমাদের এত অর্থ নেই। তার (ফরিদা পারভীন) নিজেস্ব অর্থেই চিকিৎসা চলছে। অন্য কেউ এই ব্যাপারে কিছু করেনি। কুষ্টিয়ায় তার নিজের একটা বাসা আছে। সেই বাসা ভাড়ার টাকা এবং ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা অর্থ দিয়ে চিকিৎসা হয়েছে।’
এরপর বলেন, ‘তার চিকিৎসার ব্যাপারে বিস্তারিত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় যাচাই বাছাই করেছে। ফরিদা পারভীনের তথ্য তারা ফেসবুক বা সাংবাদিকদের থেকে নেননি। কারণ তাঁরা জানেন বেশিরভাগই ভুল তথ্য। আমি অফিসিয়ালি বলছি, ফরিদা পারভীন কতটা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী তা এসে দেখে যান। তারপর বিচার করবেন।’
উপল মনে করছেন মায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিলে ভালো হয়। পরিবারের একেক সদস্যের একেক মন্তব্য ও সিদ্ধান্তে গায়িকার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। তিনি লাস্ট স্টেজের দিকে চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তার।

তিনি বলেন, ‘গত বার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ১৮ দিন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরেন ফরিদা পারভীন। গায়িকাকে এ অবস্থায় বাসায় নেওয়াটা অপরাধ হিসেবে দেখছেন উপল। তার কথায়, ‘হাসপাতাল থেকে তাঁকে বাসায় আনাটা ছিল একটি ক্রাইম। বাসায় এনে একটি কক্ষে আয়ার তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছিল। আয়া-বুয়ারা কাজ শেষ হলে চলে যান। ওনারা কিছু জানেন? না কি কিছু শিখেছেন? ওনাদেরকে দিয়ে যদি ফরিদা পারভীনের চিকিৎসা করায় তাহলে কীভাবে কী। যেটা সত্য সেটা তো ফেসবুক থেকে দেখা যায় না। দেখা যায় চোখ দিয়ে।’
উপল জানান, গতকাল বুধবার রাতে ফরিদা পারভীনকে ফের বাসায় আনার চেষ্টা চালায় পরিবার। তার কথায়, গতকাল তাঁকে বাসায় নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ ধরণের রোগীকে এই অবস্থায় কখনও বাসায় নেওয়া হয়? আমি ছেলে হিসেবে বলছি, এ ধরণের রোগীকে কেউ কখনও হাসপাতাল থেকে বাসায় নেয় না। এরপর বলবে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। কিন্তু এটা তো মার্ডার। এটা নিয়ে আমি দুদকসহ অন্যান্য জায়গায় জানাব। এটা অফিশিয়ালি মার্ডার ছাড়া কিছুই না।
কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন- জানতে চাইলে নির্দিষ্ট কারও দিকে আঙুল তোলেননি ফরিদাপুত্র। তবে ক্ষোভ পরিবারের সদস্যদের ওপর। বললেন, ‘এখানে আমাদের কেউ আছে। সেটা তদন্ত করে দেখুক। কারণ ডাক্তার বারবার বলছে এ ধরণের রোগীকে সরকারে পক্ষে থেকে বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করালে ভালো হতো। সরকারের পক্ষ থেকে দিতে চাওয়া চিকিৎসাকে যদি প্রত্যাখ্যান করা হয় তাহলে তো সরকারের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। আমি এটা বলতে পারব না। সরকার আমাকে সাহায্য করতে চাইলে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করতে হবে। সেটা এক টাকা হোক বা দুই টাকা সেটা ব্যাপার না। টাকাটা ব্যাপর না। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয়ভার বহন করতে চাইলে আমি বিরোধিতা করব কেন?’

সবশেষে গায়িকাপুত্র বলেন, ‘পারিবারিক কলহকে গুরুত্ব দিলে হবে না। তাঁর (ফরিদা পারভীন) স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। একমাসে আগে আইসিইউ থেকে আসার পর ফের আইসিইউতে চলে গেলেন। তার নিজের বাসা আছে। সেখানে না থেকে একবার মেয়ের বাসায় থাকছেন, একবার আরেক ছেলের বাসাতে থাকছেন। একটা রুমের ভেতরে থাকছেন। মানুষজনের সঙ্গে ভালোভাবে দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে না। এগুলো তো আমার বলতে হবে না। যখন তদন্ত করতে যাবে তখন ওখানকার বা বাসার আশপাশে যারা থাকেন তারাই বলে দেবেন। আমি যতই গোপন রাখতে চেষ্টা করি এগুলো গোপন রাখা যায় না। এগুলো লুকানোর চেষ্টা করে সফল হওয়া যায় না।’
গত কয়েক বছর যাবত কিডনি রোগে ভুগছেন ফরিদা পারভীন। গেল মাসে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থেকে বাসায় ফিরেছিলেন। এবার ফের হাসপাতালে গায়িকা।
ইএইচ/ আরআর

