কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বাসিন্দা ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ হিসেবে পরিচিত গোরখোদক মনু মিয়া গতকাল শনিবার (২৮ জুন) সকালে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মনু মিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে গতকাল শনিবার অ্যাওয়ার্ড শোতে অংশ না নিয়ে কিশোরগঞ্জে ছুটে গিয়েছিলেন ছোটপর্দার অভিনেতা খায়রুল বাসার।
শনিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ থেকে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আত্মীয় না হলেও খুব অল্পদিন মনু কাকার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমি তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। তার জীবনবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আজ তার মৃত্যুর খবরে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। খবর শুনে একটুও দেরি না করে কিশোরগঞ্জে চলে এসেছি।’
বিজ্ঞাপন
তিনি যোগ করেন, ‘আজ (শনিবার) একটি অ্যাওয়ার্ড শোতে অংশ নিয়ে পুরস্কার গ্রহণ করার কথা ছিল। আমার মনে হয়েছে অ্যাওয়ার্ড শোতে গিয়ে পুরস্কার নেওয়ার চেয়ে এখানে আসা জরুরি। অ্যাওয়ার্ড জীবনে অনেক পাওয়া যাবে কিন্তু শেষবার এই নায়ককে না দেখার আফসোস সারাজীবন থেকে যেতো।’

অভিনেতা জানিয়েছেন, গত তিন দিন আগে মনু মিয়ার সঙ্গে কথাও হয়। তিনদিন পর মনু মিয়ার মৃত্যুর খবরে শোকাহত হয়েছেন বাসার। মৃত্যুর খবর শুনে সকল ব্যস্ততা ফেলে ছুটে গিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জে। এর আগে গতকাল শনিবার গোরখোদক মনু মিয়ার মৃত্যুর খবরটি সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলেন খায়রুল বাসার।
বিজ্ঞাপন
গোরখোদক হিসেবে কিশোরগঞ্জে বেশ পরিচিত। এর অন্যতম কারণ, কবর খননের কাজ করে কোনো পারিশ্রমিক বা বকশিশ নেন না। কারও মৃত্যুসংবাদ কানে আসামাত্রই খুন্তি, কোদালসহ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘোড়ায় করে ছুটে যান কবরস্থানে। দূর-দূরান্তে কবর খনন করতে যাওয়ার জন্য তার একমাত্র সঙ্গী লাল রঙের ঘোড়া।
কদিন আগে মনু মিয়া অসুস্থ হয়ে ঢাকায় এলে দুষ্কৃতিকারীরা তার ঘোড়াটি হত্যা করে। এরপরই আলোচনায় আসেন মনু মিয়া। সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল হয় বিষয়টি। নজরে আসে খায়রুল বাসারেরও। তিনি মনু মিয়াকে ঘোড়া কিনে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

মনু মিয়ার সঙ্গে দেখাও করেন অভিনেতা। কিন্তু মনু মিয়া ঘোড়ার পরিবর্তে দোয়া চান খায়রুল বাসারের কাছে। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অভিনেতা লিখেছিলেন, মনু চাচা দোয়া ছাড়া কিছু চান না আপনাদের কাছে। উনি আপনাদের জন্য দোয়া করেন আপনারা ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। এ ঘটনার মাস যেতেই অভিনেতার লেখায় উঠে এলো মনু মিয়ার মৃত্যুর খবর।
কবর খননের কাজ করে জীবনের সুদীর্ঘ ৪৯টি বছর পার করে দিয়েছেন মনু মিয়া। কোনো ধরনের পারিশ্রমিক কিংবা বকশিস নিতেন না এজন্য। জীবদ্দশায় খনন করেছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর।
ইএইচ/

