জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ পেলেন সাত জন। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এ বছর সাত জন বিশিষ্ট ব্যক্তি দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এরমধ্যে ছয় জনকে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়া হয়। তাদের পক্ষে পরিবারের সদস্যরা পুরস্কার গ্রহণ করেন।
বিজ্ঞাপন
এরকম একটা ঘরে হয়তো আমার বন্ধুকে আটকে রাখা হয়েছিল, আয়নাঘর নিয়ে ফারুকী
বিশিষ্ট ছয় ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম একজন ব্যান্ড শিল্পী আজম খান। ২০২১ সালের ৫ জুন দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান। এ বছর তার মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণ করলেন তার মেয়ে।
আজম খানকে স্মরণ করে দীর্ঘ এক পোস্টে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘আমরা জীবিত মানুষদের বেশীদিন নিতে পারি না। প্রথম প্রথম আমরা কাউকে গ্রহণ করি তার কবিতা, গান, বা অন্য যে কোনো কর্মের জন্য। তারপর আমরা ভালোবেসে তাকে কিংবন্দতি বানাই। বানানোর পরপরই তার উপস্থিতি আমাদের পীড়া দিতে থাকে। তখন আমরা চেষ্টা করি তাকে অবজ্ঞা দিয়ে কিংবা কখনও কখনও নিন্দা দিয়ে টেনে নীচে নামাতে।’
বিজ্ঞাপন
মানুষ অন্যের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। তার কথায়, ‘আমাদের মতো দেখতে একটা মানুষ আমাদের চেয়ে বিশাল কি করে হয়ে যাচ্ছে? এই বেদনার ভার অভিভূত করে দেয়। তারপর ঐ মানুষটার মৃত্যু এসে আমাদের মুক্তি দেয়। একটা সময় আমরা আমাদের ক্ষুদ্রতা থেকে বড় হয়ে তাঁকে আবার গ্রহণ করি।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আজকে আজম খানের পক্ষে তার মেয়ের স্বাধীনতা পুরস্কার নেওয়ার দৃশ্য দেখছিলাম টিভিতে। কিছু জটিলতায় সশরীরে থাকতে পারেননি তিনি। পুরস্কার অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে আমার এইসব কথা মাথায় আসলো। কেন আসলো সেটা কোনো একদিন বলা যাবে।’
ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতি নিয়ে আর বিভাজন নয় : ফারুকী
দীর্ঘদিন গানের বাইরে চলে গেলে তাকে ট্রিবিউট দিয়ে একটা বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছিলেন উপদেষ্টা। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজম ভাই যখন প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে তখন তাকে ট্রিবিউট দিয়ে বাংলালিংকের জন্য একটা বিজ্ঞাপন বানাই। নড়াইলে শুটিংয়ের ফাঁকে অনেক গোপন ক্ষতের কথা বলে কেঁদেছিলেন আজম ভাই। আজকে তার মেয়ে অরণীর স্বাধীনতা পুরস্কার নেয়া দেখে আমার চোখ ভিজে উঠেছে অজান্তেই। বাংলাদেশ লাভস ইউ, আজম ভাই।’
ছয় গুণী ব্যক্তিদের পুরস্কার দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে আজম ভাই, আল মাহমুদ, নভেরা আহমেদ, ফজলে হাসান আবেদ, জামাল নজরুল ইসলাম, বদরুদ্দীন উমরের মতো মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পেরেছি। তবে এর মাঝে পাঁচজনই জানলেন না বাংলাদেশ তাদের প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ!’
জামিল আহমেদের পদত্যাগকে ‘নাটকীয়’ বললেন ফারুকী
সবশেষে, উপদেষ্টা বুয়েটের ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আবরার ফাহাদকে নিয়ে আগেও বলেছি। আবারও বলি। আবরারের প্রাপ্য ছিলো একটা দীর্ঘ জীবন। স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৫ তার প্রয়োজন ছিলো না।’
আবরার দেশের জন্য কত বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা লিখেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্বের কথা বলতে গিয়ে প্রাণ হারায় বুয়েট ছাত্র আবরার। যার মৃত্যু হাজারো তরুণকে মৃত্যূভয় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে শেখায়। শেখায় ফ্যাসিবাদের শেকড় উপড়ে ফেলে সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে। তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে পুরস্কার নিজেই বড় হয়ে উঠেছে।’