বুধবার প্রকাশিত হলো ২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫। সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ ঝুলিতে পুরেছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ শিক্ষার্থী। তবে ২০২১ সালের তুলনায় কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫ ধারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসেই (আইসিটি ব্যতিত) পরীক্ষা দেন শিক্ষার্থীরা। বরাবরের মতো এগিয়ে রয়েছেন নারী শিক্ষার্থীরা।
সব মিলে কেমন হলো এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল? এ বিষয়ে জানতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের সাথে কথা বলে ঢাকা মেইল। রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের শিক্ষার্থী আদনান আহমেদ পেয়েছেন জিপিএ-৫। তিনি বলেন, পরীক্ষা ভালো দিয়েছি। ভালো ফল করেছি। আমি অনেক খুশি। প্রশ্নপত্র মানসম্মত ছিল।
বিজ্ঞাপন
হলিক্রস স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের শিক্ষার্থী আরমিনা হামজা আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, আমি জানতাম আমি জিপিএ-৫ পাব। কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই পরীক্ষা দিয়েছি। আমি পরিশ্রম করেছি, আল্লাহ সেই ফল দিয়েছেন।
এ বছর ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পেয়েছেন জিপিএ-৪, যা ৩৮.১৯ শতাংশ।
মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৪.৭০ পেয়েছেন ওয়াজিফা সানি। বগুড়া ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের এই শিক্ষার্থী বলেন, আশা করেছিলাম জিপিএ-৫ পাব। কিন্তু কেন এমন হলো না জানি না। খাতা চ্যালেঞ্জ করব। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, আমার পারফর্মেন্স বরাবরই ভালো ছিল। কিন্তু আমার থেকে পিছিয়ে থাকা সহপাঠীরা ভালো করল, আমি কেন খারাপ করলাম জানি না।
বিজ্ঞাপন
গাইবান্ধার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থী আলিমুল ইসলাম পেয়েছেন ৩.৭০। তিনি মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি বলেন, আমি প্রাইভেট পড়তে পারিনি। কয়েকদিন একজন স্যারের কাছে ইংরেজি পড়তে গেলাম দেখি স্যার নিজেই পারে না। কোনোরকম প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষা দেই। আমার চিন্তা ছিল শুধু পাস করব কিনা। আল্লাহর রহমতে পাস করেছি। তবে জিপিএ-৪ পেলে ভালো লাগতো।
এদিকে ফলাফল নিয়ে শিক্ষকদের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। রংপুর জেলা মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি কলেজের শিক্ষক আল মামুন বলেন, শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করেছে। তবে যেসব শিক্ষার্থী ভালো ফল করতে পারেনি তাদের বলব ভেঙ্গে না পড়তে। এটা জীবনের একটা বড় ধাপ কিন্তু শেষ সুযোগ নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার্থীদের বড় চ্যালেঞ্জ পড়ালেখা নিয়ে সময় পার করা। আমার শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই লেখাপড়ার বাইরে বড় একটা সময় ভিন্ন কাজে যুক্ত থাকতে হয়। আর শহরের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া নিয়েই সময় কাটায়।
খুলনার এক প্রধান শিক্ষক বলেন বলেন, সামগ্রিকভাবে ফলাফল ভালো বলা যায়। এখন জিপিএ-৫ পাওয়া মানেই যে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া তা না। আমরা চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে সহযোগিতা করতে। আমি শিক্ষার্থীদের বলব, ফল যাই হোক এটা ভুলে গিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে।
এবারের ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বরাবরের মতোই এগিয়ে আছে নারী শিক্ষার্থীরা। তাদের পাসের হার ৮৭.৪৮ শতাংশ। তারা জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৭২১ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৮৪.৫৩। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮০ হাজার ৫৬১ জন। ২০২১ সালে ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৯৪.১৪ শতাংশ, ছাত্রীদের ৯৬.৪৯। ছাত্রীরা জিপিএ-৫ পায় ১ লাখ ২ হাজার ৪০৬ জন, যেখানে ছাত্র ৮৬ হাজার ৭৬৩ জন। গত বছর একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫টি। এ বছর এই সংখ্যা ৫০টি। ২০২১ সালে শতভাগ পাস করে ১ হাজার ৯৩৪ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, ২০২২-এ তা দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৩০টি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এক বছরের ফল বিশ্লেষণ না করে সার্বিক ফল আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে। এত সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাচ্ছে। তারা কি প্রকৃত শিক্ষা পেয়েছে। শুধুমাত্র জিপিএ-৫ পাওয়া মানেই তো গুণগত শিক্ষা নয়। আমাদের শিক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
শিক্ষার্থীদের শুভকামনা জানিয়ে তিনি বলেন, এই ফল জীবনের শেষ ফল নয়। নিজেকে সমৃদ্ধ করতে প্রস্তুত রাখতে হবে।
ভালো ফলের পরও ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, তাহলে কি আমরা জিপিএ-৫ দেয়া বন্ধ করে দেব? আমাদের শিক্ষার্থীদের মেধাকে ছোট করা হয়। তারা ভালো ফল করেছে বিধায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।
পিএস/এএস