শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রাবিতে ‘সিস্টেম’ খাওয়া যায় ২০ টাকায়

কামরুল হাসান অভি
প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২২, ০৫:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

রাবিতে ‘সিস্টেম’ খাওয়া যায় ২০ টাকায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এক বেলার খাবার। থাকছে বেগুন ভাজি, ডাল ভর্তা, আলু ভাজি, আলু ভর্তা, শাক ভাজি ও অর্ধেক সিদ্ধ ডিমসহ ছয়টি আইটেম। শুনতে অবাক লাগলেও ব্যতিক্রমী এই আয়োজন করেছে রাবির স্টেশন বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী মানিক মিঞা। দামে কম ও মানে ভালো হওয়ায় দোকানে থাকে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ‘সিস্টেম’ নামে বহুল পরিচিত এই খাবারের দোকানটির নাম ‘হোটেল মাদারীপুর’। জানা গেছে, ‘সিস্টেম’-এর উদ্যোক্তা মানিক মিঞা। তিনি খুব ছোটবেলায় জীবিকার সন্ধানে কুমিল্লার লাকসাম থেকে চলে আসেন রাজশাহীতে। এরপর স্থায়ীভাবে থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকায়। তার বয়স এখন প্রায় পঞ্চান্নের কোঠায়। আগে রিকশা চালালেও প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি এই হোটেলের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।


বিজ্ঞাপন


খাবারটি ছয়টি আইটেম (সিক্স আইটেম) দিয়ে পরিবেশন করা হয় বলে শিক্ষার্থীদের কাছে এটি ‘সিস্টেম’ নামে প্রচলিত। দামে কম বলে অবহেলা করারও সুযোগ নেই দোকানটিকে। ক্যাম্পাসে ‘সিস্টেম’ বেশ জনপ্রিয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসল নাম ‘সিক্স আইটেম’। মুখে মুখে ডাকনাম হয়ে গেছে সিস্টেম।
ru systemখাবারটি নিয়ে মানিক মিয়ার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। গল্পের ছলে তিনি বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে হোটেল মাদারীপুরে সিস্টেম চালু আছে। ১০ বছর আগে সিস্টেম মিলত মাত্র ৬ টাকায়। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে ৬ টাকা থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে। ছয় পদের খাবারের মধ্যে রয়েছে এক প্লেট ভাত, অর্ধেক ডিম, বেগুনভাজি, আলুভর্তা, শিমভর্তা ও আলুভাজি। ডাল অবশ্য সবার জন্য ফ্রি। দোকানে মাছ-মাংস থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় সিস্টেমের কদরই সবচেয়ে বেশি বলেও জানান তিনি।’

হোটেলটির নামকরণ নিয়ে জানতে চাইলে মানিক মিঞা বলেন, আগে এই দোকানের যিনি মালিক ছিলেন তার বাড়ি ছিল মাদারীপুর জেলায়। তিনি জেলার নামেই খাবারের দোকানের নাম রেখেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এ দোকান চালু করা হয় বলেও জানান তিনি।

ক্যাম্পাসের স্টেশন বাজারে হোটেল মাদারীপুরে সকাল ও দুপুরবেলা পাওয়া যায় এ খাবার। এর পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আবাসিক হল মাদার বখ্শ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী। কিছুটা দূরে রয়েছে শহীদ শামসুজ্জোহা ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো এই দোকানটির পাশে হওয়ায় তারা স্বাচ্ছন্দ্যে আসেন খাবার খেতে।

আরও পড়ুন: রাজশাহীর ‘ব্রেকআপ টেবিলে’ যত কারবার

আগে শুধু রাতে এই খাবার তৈরি করা হলেও গত প্রায় এক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের চাহিদার কারণে দুপুরেও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান মানিক মিঞা।


বিজ্ঞাপন


খাবারের মান নিয়েও সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রুকাইয়া খানম রিক্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘খাবারের মান তুলনামূলক যথেষ্ট ভালো আছে। দামও ছাত্র-ছাত্রীদের সাধ্যের মধ্যেই। আর সিস্টেম এ যেহেতু শাক, ভাজি, ডিম, ডাল আইটেমগুলো আছে— এতে পুষ্টিও ভালো পাওয়া যায়। পদের বৈচিত্রময়তার কারণে খেতেও একঘেয়েমি আসে না।
ru-systemএই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে চলে গেছেন অথচ হোটেল মাদারীপুরের সিস্টেম খাননি এমন শিক্ষার্থী খুব কমই আছেন বলে জানালেন সাবেক ছাত্র ও বর্তমানে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. জামিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার আগে বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে এ খাবার খাওয়া হত। তবে এখন আর স্টেশনবাজারে তেমন যাওয়া হয় না। তাই ছাত্র জীবনের সেই স্বাদের খাবার আর খাওয়া হয় না।’

দামের বিষয়ে মালিকের মানবিক দিক উল্লেখ তারিকুল ইসলাম তৌফিক নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সিস্টেম মিল যেন অমাবস্যায় এক আলোর মশাল। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির ফলে সবকিছু জনসাধারণের ক্রয়সীমা অতিক্রম করেছে। ঠিক এ সময় ২০-২৫ টাকায় তৃপ্তিমত খাওয়া যায়! এটি তো আমাদের কাছে মানবিক বটেই হোটেল মালিকদের জন্য অনুকরণীয়। রাবি শিক্ষার্থীদের গল্প-কথায় হোটেলটি যুগ যুগ ধরে স্মরিত হবে এবং হচ্ছেও।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলে থাকেন আমিনুর রহমান। তিনি মাঝেমধ্যেই খেতে যান ওই হোটেলে। বলেন, ‘এত কম দামে এমন খাবার রাজশাহীর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। কম দাম হলেও খাবারটি বেশ তৃপ্তিদায়ক। তাই আমরা সবাই মিলে খাই।’ 

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর