শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রাজশাহীতে ব্রেকআপ টেবিল : বসলেই বিপদ!

আবু সাঈদ রনি
প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২২, ০১:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

রাজশাহীতে ব্রেকআপ টেবিল : বসলেই বিপদ!
ছবি: ঢাকা মেইল

জীবন বড়ই বিচিত্র। আরও বিচিত্র তার কারবার। বিচিত্র এইসব কাণ্ডকারখানায় সব ঘটনার ব্যাখ্যাও মেলে না। এমন একটি ব্যাপার ঘটেছে উত্তরের জেলা রাজশাহীতে। নগরীর একটি ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টের টেবিল বিখ্যাত হয়ে গেছে ‘দ্যা ব্রেকআপ টেবিল’ নামে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে— এই টেবিলে কোনো জুটি বসলেই তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। শোনা গেছে, টেবিলটিতে বসে খাবার খেয়ে অনেকের প্রেমের সম্পর্ক ইতি ঘটেছে, আবার নড়বড়ে অবস্থার দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরেছে অনেকের সম্পর্ক। 

ঘটনা সম্পর্কে বিশদ জানতে সরেজমিনে যায় ঢাকা মেইল। দেখা গেল, টেস্টি টাইম নামের ওই রেস্টুরেন্টে টেবিলটির বিষয়ে একরকম ঘটা করেই গ্রাহকদের জানান দিচ্ছেন মালিকপক্ষ। টানানো হয়েছে ব্যানারও।


বিজ্ঞাপন


রেস্টুরেন্টটিতে ঢুকে ডান দিকে চোখ তুলতেই দেখা যায়— 'The Break-up Table' এবং ‘Table No- 007' লেখা ব্যানারটি।  ইংরেজিতে তারা আরও লিখে রেখেছেন— ‘There have been 99+ break-ups'. 

জানা গেল, অনেকে ইচ্ছে করেই বসেন ওই টেবিলে। আবার বিষয়টি জানার পর টেবিল ছেড়েও যান অনেকেই। তবে ওই টেবিলে বসার পরই সতর্ক করে দেন রেস্টুরেন্টের স্টাফরা। তবু অনেকে চ্যালেঞ্জ নিয়েই বসে যান ওই টেবিলে। ওই টেবিলে বসা জুটিদের প্রায় শতাধিকের প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। 

টেবিলটি নিয়ে এতই প্রচারণা যে, এখানে ভিজিটরস ডায়রিও রাখা হয়েছে। যারা এখানে আসেন, লিখে রেখে যান তাদের বিভিন্ন মন্তব্য। ডায়রিটির পাতা উল্টিয়ে দেখা যায়, অনেকে লিখেছেন তাদের বিচ্ছেদের করুণ ঘটনা। আবার কেউ চ্যালেঞ্জ নিয়ে বসে সফলতার কথাও লিখেছেন। নিজেকে সিঙ্গেল দাবি করাসহ লিখেছেন হরেকরকম কথা।
break up tableএকজন লিখেছেন— ‘বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা করে বেস্টফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে আসলাম মনটা ভালো করার জন্য। কিন্তু... বেস্টফ্রেন্ডের  সাথে ঘুরতে আসায় বয়ফ্রেন্ড রাগ করেছে। এখন মনটা ভালো হয়েও খারাপ হয়ে গেল। বি: দ্র: বেস্টফ্রেন্ড ছেলে ছিল।’

Break up... দিয়ে শুরু করে একজন লিখেছেন, ‘আমার দুই বছরের রিলেশনের অবসান ঘটে এখানে আসার ঠিক কিছুদিন পরেই। আমার বার্থডে ট্রিট দিতে এসেছিলাম। ওইটাই লাস্ট দেখা ছিল। বর্তমানে ভালো থাকলেও, এখানে আসলে ওই দিনটা একটু হলেও মনে পড়ে। Stay Happy, Stay Single...’


বিজ্ঞাপন


‘ছ্যাকা খাওয়া প্রেমিক’ নাম দিয়ে একজন লিখেছেন, ‘ব্রেকআপ খুব মজার, প্রেম করার শুরুতে ব্রেকআপ টেবিলে বসেছিলাম এমনিতে। আর এখন ব্রেকআপ হয়ে গেছে।’

এক ‘সিঙ্গেল যুবক’ লিখেছেন, ‘সবার যখন ব্রেকআপ হয় এই টেবিলে, সিঙ্গেল আমি তখন প্রেমের আশায় এ টেবিলে বসি।’ 

আরেকজন লিখেছেন, ‘আমি রাবিতে পড়ি। কিন্তু রাবিতে পড়লে নাকি সবার প্রেম হয়। তাহলে আমি কেন সিঙ্গেল!! আমাকে কেউ কেন ভালোবাসে না? কেন? কেন?’ 

পুরনো প্রেমিকের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে এক মেয়ে লিখেছেন, ‘এখন আমার সামনে একটা চামার বসে আছে। সে নাকি এখানে অনেক মেয়ে নিয়ে এসছে। আসুক, তাতে আমার কি! আমিও এসছি অনেকের সাথে। ...নেক্সট টাইম কাউকে নিয়ে আসলে কুপাবো।’  

আরেকজন লিখেছেন, ‘ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা জীবনে বারবার আসে না। এই ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে রাখতে হবে। আমাদের পথচলা আজ ১১ বছর। ইনশাআল্লাহ বাকি জীবনটা তোমার সাথে থাকবো।’ 

টেস্টি টাইমকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক জুটি লিখেছেন, ‘ব্রেকআপ টেবিলে বসেও ব্রেকআপ না করা কাপল আমরা দুজন। জোশ ফিলিংস’।
break up tableএকজন আক্ষেপ করে লিখেছেন— ‘এত সুন্দর করে সাজুগুজু করলাম, কিন্তু বর দেখেইনি নয়ন ভরে। যে প্রেমিক মুগ্ধ দৃষ্টিতে প্রেমিককে দেখে না সে প্রেমিকই না।’

তার নিচেই (হয়তো ওই নারীর স্বামী) লিখেছেন— ‘কে বললো দেখেনি? আমি আমার মতো ঠিকই দেখে নিয়েছি। তোমার লাল লিপস্টিক, গাঢ় করে দিয়ে এসেছিলে আমি পছন্দ করি বলে। চোখের কাজলও দেখেছি। আর চুলের গন্ধ! সব নিয়েছি।’ 

টেবিলটিতে খেয়েছেন বা বসেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে ঢাকা মেইল। তবে এ নিয়ে সরাসরি তাদের অনুভূতি বা মন্তব্য জানাতে রাজি হননি কেউ।  

কথা হয় টেস্টি টাইম রেস্টুরেন্টের ইনচার্জ শাওন সাইয়ানের সঙ্গে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রেস্টুরেন্টটি শুরু করা হয়। শুরুর মাস তিনেকের মধ্যেই দেখা যায় ওই টেবিলে যারা বসে একটু পরেই ঝগড়াঝাটি, তর্ক বা রাগারাগি করে চলে যায়। 

একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিন একটা ছেলে ও একটা মেয়ে আসলো। পুরো টেবিল ভর্তি খাবারের অর্ডার করলো। প্রথম দিকে তারা ভালোভাবেই বসে গল্প করছিল। কিন্তু হঠাৎ ছেলেটার মোবাইলে একটা কল আসতেই বেধে গেল ঝামেলা। কিছুক্ষণ ঝগড়া করে খাবার না খেয়েই বেরিয়ে চলে গেল মেয়েটি।’ 

‘আবার অনেকেই টেবিলটা এড়িয়ে চলেন। অন্য টেবিল ফাঁকা না পেয়ে অপেক্ষাও করেন, তবুও রিস্ক নিতে চান না। শুধু যে কাপলরা বসে সেটাও না। সিঙ্গেলরাও বসে আর ডায়েরিতে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে। আবার কেউ কেউ মনে করেন বসেই দেখি। চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা বসেন।’

তিনি আরও জানান, আমরা প্রায়ই দেখতাম টেবিলটাতে বিশেষ কিছু হচ্ছে। কথা-কাটাকাটি, রাগারাগি, তর্ক  বা ঝগড়া থেকে হাতাহাতি পর্যন্ত দেখেছি। এছাড়াও প্রায়ই এখানে ব্রেক-আপের ঘটনা ঘটতে থাকে। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই এসব ঘটে। যে কারোর মনে হতে পারে যেন এই টেবিলের সাথেই এসব ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে!
break up table
 ‘টেবিলে একের পর এক এরকম বিব্রতকর ঘটনা দেখার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরেই নোটিশ লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর ওই টেবিলের একপাশে নোটবুক রাখি, অনেকেই নিজেদের অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি লিখেন।’ 

তবে টেবিলে এমন নোটিশ লাগানোই ক্ষতি তো নয়ই বরং ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও জানান শাওন। তিনি বলেন, এতে সাধারণদের মাঝে এক রকম আগ্রহ তৈরি হয়। তারা ওই টেবিলে না বসলেও রেস্টুরেন্টে এসে কিছুটা পুলকিত হয়। আর ভ্যালেন্টাইন ডে বিভিন্ন স্পেশাল ডে ঘিরে ওই টেবিলে ভীড় লেগেই থাকে। 

টেবিল ঘিরে বিশেষ কিছু পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তিনি। আগামীতে ওই টেবিলের গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার চালু করতে চান তারা। ওখানে বসে খেয়েও যদি গণ্ডগোল না হয় তবে বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে। এছাড়াও ডায়েরির লেখাগুলো ম্যাগাজিন আকারে বের করতে চান তারা।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর