টানা প্রায় সাড়ে তিন মাস পর ক্লাসে ফিরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে ক্যাম্পাস। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পারায় খুশি শিক্ষার্থীরা। এই সময়ে পড়াশোনায় যে গ্যাপ হয়েছে তা এবার পূরণ করে নিতে চান তারা।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। সব বিভাগে না হলেও কিছু কিছু বিভাগের শুরু হয়েছে ক্লাস। শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্লাস করতে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম অনিক বলেন, ইতিহাসের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার কাছে এই প্রায় সাড়ে তিন মাস ছিল যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনিভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দীর্ঘ এই বন্ধের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে বেশ পরিবর্তন এসেছে। আন্দোলন এবং বন্যাপরবর্তী সময়ে নতুন করে ক্লাস শুরু প্রশাসনের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জিং ছিল, ঠিক একইভাবে দীর্ঘ বিরতির পর ক্লাসে ফেরাও শিক্ষার্থীদের কাছে কিছুটা কঠিন। হয়ত আমাদের সহপাঠী কিংবা আত্মীয়রা এই সময়ের মাঝে মানসিক এবং শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছেন। দীর্ঘদিন পর সহপাঠীসহ সবার সাথে প্রিয় ক্যাম্পাসে দেখা হবে, এই ভেবে আলাদা আনন্দ কাজ করছে।
এই শিক্ষার্থী বলেন, আশা করি আন্দোলনপরবর্তী এই সময়ে শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাদের একাডেমিক রুটিনের সাথে মানিয়ে নেবে এবং যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন তারা দেখেছিল তার বহিঃপ্রকাশ তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশেও ঘটবে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরমান হোসাইন বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের দিনগুলোই ভালো ছিল। পড়াশোনা, ক্লাস এগুলো শুনলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও মানবকণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক সুলতানুল আরেফিন ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রায় সাড়ে তিন মাস পর ক্লাস খুলছে। এ নিয়ে আমি ব্যাপক খুশি। যদিও আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি। স্বাধীনতা নতুন করে অর্জন করেছি। বিগত দিনগুলো খুব বেশি সুখকর ছিল না কোনোমতেই। অনেক বেশি ট্রামার মধ্যে দিয়ে গেছি। এখনো ট্রামার মধ্যেই আছি। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার আনন্দ অনেক বেশি।
বিজ্ঞাপন
এই শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাস শুরু হওয়ার খুশির সাথে কিছুটা চিন্তিতও বটে। কারণ আমাদের জুলাই মাসে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার কোনো প্রস্তুতি আমাদের এই মুহূর্তে নেই। কিন্তু খুব শিগগির আমাদের পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হবে বলে শোনা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি মিলিয়ে গত ২ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। তবে এ সময়ে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১ জুলাই থেকে ক্লাস চালুর কথা থাকলেও প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়ে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ হয়ে যায় ১৭ জুলাই। বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেন। ২৭ আগস্ট নতুন উপাচার্য হন অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। এছাড়া পরিবর্তন আসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। ১২ সেপ্টেম্বর জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ক্লাস শুরুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
জেবি

