বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

কাউকে পাত্তা দেন না ‘হানিফের আশীর্বাদপুষ্ট’ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ!

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম

শেয়ার করুন:

কাউকে পাত্তা দেন না ‘হানিফের আশীর্বাদপুষ্ট’ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ!
ছবি: ঢাকা মেইল

কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া উপাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিনকে পুনর্বহালে দফায় দফায় সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি উচ্চ আদালত থেকেও তাকে পদে বসার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই দফায় আট বছর কলেজ ছাড়া থাকতে হয়েছে এই শিক্ষককে। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হাবিবুল ইসলাম ও গভর্নিং বডির সদস্যদের কারণে তিনি কাজে যোগ দিতে পারেননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকের। এমন অবস্থায় মন্ত্রণালয়, মাউশি ও আদালতের আদেশকে আমলে না নেওয়া অধ্যক্ষের বেতনভাতা বন্ধ করে দিয়েছে মাউশি।

গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বেতন বন্ধ ও গভর্নিং বডির সভাপতির পদ শূন্য ঘোষণা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে মাউশি সূত্রে জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


ভুক্তভোগী শিক্ষক সাবিনার অভিযোগ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি প্রতিষ্ঠানের তহবিলের অর্থ টাকা আত্মসাৎ, জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু কেউ মুখ খুলতে পারত না। মাউশির পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) তদন্তেও এর প্রমাণ মিলেছে।

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে অধ্যক্ষ হাবিবুল ইসলামও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ এই শিক্ষকের।

আরও পড়ুন

নিয়মের ধার ধারেন না আ.লীগ নেতা উপাধ্যক্ষ সাইক্লোন!

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ বৈধ নয় এমন অভিযোগ তুলে কলেজটির উপাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিনকে ২০১৪ সালে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির নির্দেশে তাকে ২০১৬ সালে পুনর্বহাল করা হয়। এই তিন বছর বন্ধ থাকে বেতন-ভাতাও। এর মধ্যে আবার ২০১৯ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয়। সেই সময় থেকে কলেজে আর যেতে পারছেন না তিনি।


বিজ্ঞাপন


Kustia2
দায়িত্ব নিতে গেলে উপাধ্যক্ষকে করা হয় হেনস্তা। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে দ্বিতীয়বার বরখাস্ত হওয়ার আদেশ প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশিতে আবেদন করেন উপাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিন। পরে ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে পুনর্বহালের জন্য চিঠি দেওয়া হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে। পরবর্তী সময়ে একই বছরের ৬ জুলাই ও ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ আবার চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশনা না মানায় একই বছরের ২ মার্চ সাবিনা ইয়াছমিনকে পুনর্বহালের জন্য ফের চিঠি দেয় মাউশি। কিন্তু তাকে পুনর্বহালের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

পরে ভুক্তভোগী শিক্ষক তার পুনর্বহাল চেয়ে আবেদন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে স্বপদে পুনর্বহালের জন্য ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কিন্তু এখন পর্যন্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. হাবিবুল ইসলাম এবং ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষের পদে আছেন আতাহার আলি। চেয়ারে বসতে পারেননি সাবিনা।

এদিকে মন্ত্রণালয়-মাউশি ঘুরে পুনর্বহাল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। রিটের শুনানি শেষে গত ২৬ মে তাকে পুনর্বহালের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে আদালতের আদেশকে আমলে নিয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মিজানুর রহমান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিনকে পুনর্বহালের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেন।

আরও পড়ুন

কোনো নিয়মই মানেন না শিক্ষার ‘ম্যানেজ খালেক’!

সাবিনা ইয়াছমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অন্যায়ভাবে আমাকে কলেজ থেকে দুই দফায় আট বছর আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফের প্রত্যক্ষ মদদে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমাকে ঢুকতে দেয়নি। অথচ বর্তমান অধ্যক্ষ স্পষ্টভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে এই পদে আছেন। তার চেয়েও কলেজে চারজন সিনিয়র শিক্ষক আছেন। সবার মধ্যে আমি জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। এত বছর পর মন্ত্রণালয়, মাউশি ও আদালত থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছি। কিন্তু গত ১৪ আগস্ট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের চিঠি নিয়ে কলেজে গেলে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ আরও কয়েকজন মিলে টেনে-হেঁচড়ে কলেজ থেকে বের করে দেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই।’

Kustia3
আওয়ামী লীগ নেতা হানিফের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হাবিবুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সাবিনা ইয়াছমিনের উপাধ্যক্ষ হওয়ার কাম্য অভিজ্ঞতা নেই। আর মামলা চলমান আছে। আদালত থেকে নির্দেশনা পেলে তা মেনে নেব। তিনি তো সেদিন এসে জোর করে আমার চেয়ারে বসতে যাচ্ছিলেন। তখন তাকে অন্যরা উঠিয়ে দিয়েছে।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের এমন বক্তব্যের জবাবে সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, ‘অভিজ্ঞতা বিবেচনা করেই কলেজ আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। আমার কাম্য অভিজ্ঞতা আছে। আর কাগজপত্র যদি ঠিক না থাকে তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি আমাকে স্বপদে পুনর্বহালের আদেশ কীভাবে দিচ্ছে? আমার সকল কাগজপত্র ঠিক আছে দেখেই তো তারা নির্দেশ দিচ্ছে- কিন্তু কলেজ তা মানছে না।’

আরও পড়ুন

অবসরের টাকা পেতে শিক্ষকদের চোখে জল!

মন্ত্রণালয়-মাউশির দফায় দফায় চিঠি দেওয়ার পরও তাকে যোগদান করতে না দেওয়ার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘সাবিনা ইয়াছমিন কলেজে আসেন না, তাকে বরখাস্ত করা হলেও তার তো কলেজে আসার কথা।’

জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অধ্যক্ষে পদে বসা নিয়ে জানতে চাইলে হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটি আমাকে বাছাই করেছে। এটা না করি কীভাবে?’

মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) তপন কুমার দাস ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা যাচাই বাছাই শেষে সাবিনা ইয়াছমিনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহাল করতে চিঠি দিয়েছি। তাকে এই পদে বসতে দিলেই কলেজের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর