শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বাড়তি দামেও মিলছে না কাগজ, বিপাকে প্রকাশনা শিল্প

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৮:১৩ এএম

শেয়ার করুন:

বাড়তি দামেও মিলছে না কাগজ, বিপাকে প্রকাশনা শিল্প

হু হু করে বাড়ছে কাগজের দাম। বই ছাপাতে পারছে না অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে প্রকাশনা শিল্প। এমনকি নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের বই পাওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। যার প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়। বিশেষ করে ঝরে পড়তে পারে অনেক গরিব শিক্ষার্থী। এছাড়া এই সংকটের প্রভাব পড়বে আগামী বইমেলাতেও।

কাগজের দাম বাড়তে শুরু করে চলতি বছরের শুরু থেকেই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ছয় মাস আগে যে হোয়াইটপ্রিন্ট কাগজের দাম প্রতি টন ৯০ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে ছিল, সেই কাগজের দাম এখন এক লাখ ২৮ হাজার থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। ভালো মানের নিউজপ্রিন্ট প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। চার মাস আগেও এ মানের কাগজের টন বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। সেই হিসাবে এ ধরনের কাগজের দাম টনে বেড়েছে ১৫ হাজার টাকা।

শুধু কাগজের দামই নয়। পাইকারি বাজারে বেড়েছে মলাটের কাগজের দামও। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি ১০০টি মলাটের কাগজের দাম এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে। একই পরিমাণ আর্ট কার্ডের দামও এখন ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি। ১০০টি আর্ট কার্ড মিলছে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। এক রিম রঙিন কাগজের দাম ৮৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।

11

স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে খুচরা দোকানগুলোতেও। খুচরা পর্যায়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লেখার কাগজ প্রতি রিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, যা চার থেকে পাঁচ মাস আগেও কেনা গেছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।

রাজধানীর বিভিন্ন স্টেশনারি দোকানগুলোতে দেখা গেছে, ৩৫-৪০ টাকার খাতা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক মাস ধরে কাগজের দাম বাড়ছে। আগের থেকে কেনা মূল্য অনেক বেশি পড়ছে। লাভও হচ্ছে কম। রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল রোডের এক স্টেশনারি দোকানদার বলেন, সবকিছুরই দাম বেড়ে গেছে। যে খাতা আগে ৩০-৩৫ টাকা কেনা পড়ত, এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। শুধু খাতার দাম নয়, কাগজ রিলেটেড সবকিছুরই দাম বেড়েছে। মাঝারি আকারের ১০০টি খাকি খামের দাম আগে ২৫ টাকা ছিল। তা এখন বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। সবকিছুর নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আগে যেকোনো জিনিসে লাভ বেশি ছিল, কিন্তু এখন লাভও কমেছে। বেচা-বিক্রিও কমে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: নানা জটিলতায় সময়মতো বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা

কাগজ ও খাতা-পত্রের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারাও। মুগদা এলাকায় স্টেশনারি দোকানে খাতা কিনতে আসা এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, মাত্র কিছুদিন আগে যে খাতা ৩৫ টাকা দিয়ে কিনেছি সেই খাতা এখন ৫০ টাকা হয়ে গেছে। তাও নর্মাল কাগজ। ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করছে, তাদের পড়াশোনার জিনিসপত্রের দামও যদি এভাবে বেড়ে যায় তাহলে বাচ্চারা পড়াশোনা করবে কীভাবে?

কাগজের দাম বৃদ্ধিতে নাগরিক সমাজের নেতারাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এ বিষয়ে সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান উপকরণ বই, খাতা। শিক্ষার্থীরা যে বই পড়াশোনা করবেন, যেই খাতায় লিখবেন সেই বই-খাতার দাম যদি নাগালের বাইরে চলে যায় তবে তো ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তারা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারবে না। বিশেষ করে যারা গরিব, সেসব শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়তে পারে। এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

এদিকে দাম বাড়ার পরও চাহিদামতো কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে পাঞ্জেরি প্রকাশনীর কর্মকর্তা লিনাস হেনেরি ঢাকা মেইলকে বলেন, কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশনার জগতে একটা বড় প্রভাব পড়বে। কিন্তু দাম যাই হোক এখন তো কাগজই ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা দিয়েও কাগজ মিলছে না। অনেক প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো প্রোডাকসন হচ্ছে না। এরপর বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংকট তো রয়েছেই। বিশেষ করে যারা পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ করছে তারা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ঠিকমতো কাগজ পাচ্ছে না। নতুন বছরে বই পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন: কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে পাঠ্যবই ছাপার কাজ

33

বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি শামসুল ইসলাম বাহার গণমাধ্যমকে জানান, কাগজের দাম তো বাড়ছেই। অস্বাভাবিক দামেও চাহিদামতো কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। সামনে কাগজের আরও টান পড়তে পারে। অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট। মাত্র দুই মাসের মধ্যে সরকারের ৩৫ কোটি বই ছাপার কাজ কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় আছে। কাগজ কলগুলো সাধারণত বই ছাপার মৌসুমের ছয় থেকে সাত মাস আগেই পাল্প আমদানি করে কাগজ উৎপাদন করতে থাকে। এ বছর কেন তারা আগে পাল্প আমদানি করেনি, তা বুঝতে পারছি না।

আরও পড়ুন: কাগজ সংকটে যথাসময়ে বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা

কাগজের এই মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের প্রভাব পড়বে আগামী বইমেলাতেও। সাধারণত প্রকাশনা সংস্থাগুলো এই সময় বই ছাপানোর কাজে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক প্রকাশনা সংস্থা এবার কম করে বই বের করছেন। আবার কেউ কেউ বইমেলা উপলক্ষে বই প্রকাশ না করা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বইমেলায় যতগুলো বড় প্যাভিলিয়ন থাকে তার মধ্যে ‘অনন্যা’ অন্যতম। সেই অনন্যা থেকে এবার নতুন কোনো বই আসছে না বলে জানা গেছে। অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, কাগজের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনন্যা এইবারের বই মেলায় নতুন কোনো বই প্রকাশ করতে পারছে না। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

টিএই/জেএম/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর