সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কাগজ সংকটে যথাসময়ে বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৬:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

কাগজ সংকটে যথাসময়ে বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা

কাগজ সংকটের থমকে আছে বিনামূল্যে বই ছাপার কাজ। যার ফলে আগামী বছরের প্রথমদিন বিনামূল্যে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।

সমিতির নেতারা বলছেন, কাগজের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখনও ৫০ ভাগ কাগজ শুল্কমুক্ত আমদানি না করলে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিওয়ার জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই চেয়েছেন প্রকাশকদের কাছে। 


বিজ্ঞাপন


শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে সমিতির ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতারা এই অভিযোগ করেছেন। এসময় প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভাবনা তুলে ধরেন শ্যামল পাল।

বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির পরিচালক এবং ৬৪ জেলা ও উপজেলাগুলোর পুস্তক ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: পড়াশোনা শুধু ডিগ্রি আর সার্টিফিকেটের জন্য নয়: শিক্ষামন্ত্রী

সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি কায়সার-ই-আলম, শ্যামল পাল, মির্জা আলী আশরাফ কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, মাজহারুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন।


বিজ্ঞাপন


সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, দুঃখের কথা বলার জন্য আমরা কারো কাছে যেতে পারি না। আমাদের কিছু পুস্তক প্রকাশনী আছে, যারা ডোনেশনের মাধ্যমে এই শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়। আমরা আপনাদের সহায়তায় এসব প্রকাশনীকে কালো তালিকাভুক্ত করতে চাই।

সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, কাগজ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আগামী বছরের জন্য বিনামূল্যে বই ছাপাতে যে পরিমাণে কাগজ প্রয়োজন তার ৫০ শতাংশ কাগজ শুল্কমুক্ত আমদানি না করলে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।

সহসভাপতি মাজাহারুল ইসলাম বলেন, এখনো স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় চাইনিজ মেলামাইনের প্লেট উপহার দেওয়া হয়। অথচ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, এসব প্রতিযোগিতায় বই উপহার দেওয়া হোক।

বাপুসের উপদেষ্টা ওসমান গণি বলেন, সমিতির ২৬ হাজার সদস্য শুধু পুস্তক ব্যবসায়ী নন, তারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করেন। এনসিটিবি কখনই বই ছাপানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে সঠিক কথা বলে না। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কোনো প্রণোদনা পাননি, কোনো সহযোগিতা পাননি। করোনায় তারা অনেক কষ্ট করেছেন। আমরা সরকারের পক্ষের শক্তি। প্রতিটি স্কুলে পাঠাগার যেন সচল থাকে- সেই আহ্বানও জানান তিনি।

পুস্তক বাধাই কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম মল্লিক বলেন, কারোনা মহামারিতে এই শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সচেষ্ট সরকার

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বইয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তারা শিক্ষা পরিবারের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন সুলেখক, সম্পাদক ও পাঠক। তার সময়ে প্রকাশনা শিল্প খারাপ অবস্থায় থাকবে সেটি হতে পারে না। বিশ্ব একটি কষ্টকর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারপরও মুদ্রণ শিল্পের যা যা সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, পহেলা জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। কাগজের সংকট নিয়ে মিল মালিকদের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন কাগজ সংকট হবে না। বই আমাদের লাগবে পহেলা জানুয়ারিতে, এতে কোনো ছাড় নেই। মিল মালিকরা যদি তাদের ওয়াদা ভঙ্গ করেন তবে তাদের বিরুদ্ধে আমরাও ব্যবস্থা নেব। বিদেশ থেকে আমদানির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতিও দেন শিক্ষামন্ত্রী।

প্রশাসকদের বিভিন্ন প্রস্তাবনার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এনসিটিবি’র (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পুস্তক প্রকাশনা সংক্রান্ত সেখানে আপনাদের প্রতিনিধিত্বের কথা বলেছেন সেটি অত্যন্ত ভালো প্রস্তাব। আমি তো বললাম আমি আপনাদের সব সুপারিশের সঙ্গে একমত। গণি ভাই বলেছেন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মন্ত্রীর কথায় খুশি হয়ে ফিরে আসি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আশা করি সেই মন্ত্রী আমি না। কিন্তু আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলব তখন অখুশি করার কথা তো বলতে চাই না। আপনারা খুশি হন তেমন কথাই বলতে চাই। তবে আমি নিজেকে যতটুকু জানি সেটুকু বলতে পারি আমি সত্যটুকু বলবার চেষ্টা করি। তাতে আপনি যদি অখুশি হন তাতে আমার কিছু করার নেই।

তিনি বলেন, আমি সত্যটা আমি বলব। আর আপনাকে খুশি করবার জন্য অর্থাৎ আপনার শিল্পটা ভালো হলেই তো আপনি খুশি হবেন! সেই ভালোটা করবার জন্য আমার যা সাধ্যে আছে, আমি তার সবটুকু করতে রাজি আছি এবং করব। কাগজের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার কথা বলেছেন এটা সত্যি, কিন্তু আমার মন্ত্রণালয় সরাসরি জড়িত নয়। যদি সমস্যা হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি বেশি ভুক্তভোগী হবো আমরা, কারণ সবচেয়ে বড় গ্রাহক আমার মন্ত্রণালয়।

ডা. দীপু মনি বলেন, আমি বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব। পাঠাগার সারাদেশে চালু করার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছি। অনেক বেশি মনিটর আমাদের করতে হবে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটালি কানেক্ট করার চেষ্টা করছি। যাতে আমরা এক জায়গায় বসে যেকোনও প্রতিষ্ঠানকে (প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম) নিয়মিত দেখতে পাই। ডিজিটাল হলে আমি পাঠাগারও দেখতে পাব। পাঠাগার নামে কোথাও একটি আলমারি আছে, কোথাও একটা ঘর আছে। এগুলোতে তালা মারা থাকে, ভেতরে ধুলাবালি পড়ে আছে তেমন যেনও না হয়। পাঠাগারের কাজটি ঠিকমতো হওয়া প্রয়োজন। লাইব্রেরিয়ান পদটিকে শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সেটি যখন করা হয়েছে তার পাশাপাশি পাঠাগারেও উন্নয়ন অবশ্যই হাত হাত ধরে হবে।

এসএএস/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর