শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চাল-ডাল-তেল-সবজির দামে চাপ, দিশেহারা মানুষ

মহিউদ্দিন রাব্বানি
প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

চাল-ডাল-তেল-সবজির দামের চাপ, দিশেহারা মানুষ
  • মুদি দোকানে নিত্যপণ্যের দামে আগুন

  • শীতের ভরা মৌসুমেও সবজিতে নেই স্বস্তি

  • মাছ-মাংসেও চড়া দাম, চাপ বাড়ছে সংসারে

  • নির্ধারিত আয়ের মানুষের বাড়ছে ভোগান্তি

  • 'মোকামেই বাড়তি দাম, খুচরায় হাত বাঁধা'

 


বিজ্ঞাপন


রাজধানীর কাঁচাবাজার ও মুদি দোকানগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতের ভরা মৌসুমে সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও দামে তার কোনো প্রভাব নেই। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ—সব মিলিয়ে বাজারে গেলেই হিসাবের খাতা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ ক্রেতাদের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকামেই এখন বাড়তি দাম। তারা যে দামে পাইকারী কেনে সেই হিসাবেই খুচরা বিক্রি করতে হচ্ছে। পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বেড়েছে। তাই খুচরা বাজারে আগের দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে পাইকারদের সিন্ডিকেট ও আমাদানিকারকদের অতি মুনাফালোভী চিন্তাভাবনা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

মুদি দোকানে নিত্যপণ্যের চড়া দাম
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চালের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিকন চাল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা। ছোট দানার মসুর ডাল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা এবং মুগডাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯৫ টাকা, আর খোলা সয়াবিন তেল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। 

ক্রেতারা বলছেন, এই দাম নির্ধারিত আয়ের মানুষের জন্য বড় চাপ। মাসের শুরুতেই বড় অংকের টাকা বাজারে চলে যাচ্ছে। 


বিজ্ঞাপন


 

 

শীতের সবজি, তবু দামে স্বস্তি নেই
শীতকাল মানেই সবজির প্রাচুর্য—এটাই ছিল সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। কিন্তু বাস্তবে বাজারে সবজির দাম এখনও চড়া। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। গাজর, শিম ও বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। মানভেদে শিম ৬০ থেকে ১০০ টাকা। শালগম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস ৩০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক আঁটি পালংশাক কিনতে গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা। লালশাক ও মুলাশাক ১০ থেকে ১৫ টাকা আঁটি। বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস। সবজির দাম বেশি থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।

'মাসের বাজার করাই সবচেয়ে কঠিন'
কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে যে টাকায় এক সপ্তাহের বাজার হতো, এখন সে টাকায় তিন-চার দিনের বেশি চলে না। সবজির ভরা মৌসুম, অথচ টমেটো, শিম, গাজরের দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি। এমন দামে মানুষ স্বস্তিতে থাকবে কীভাবে?

1000174267
শীতকালীন সবজির দামও চড়া রাজধানীর বাজারে। ছবি: ঢাকা মেইল

 

নির্ধারিত আয়ের মানুষের বাড়তি ভোগান্তি
যাত্রাবাড়ী বাজারে আসা আবুল কাশেম বলেন, চাল-ডালের দাম কমছে না, ভোজ্যতেল অনেক দিন ধরেই চড়া। ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে খুব বেশি কিছু কেনা যায় না। বেতন বাড়েনি, কিন্তু বাজার খরচ নিয়মিতই বাড়ছে—এটাই আমাদের মতো মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা।

মাছ-মাংসেও আগুন
মাছের বাজারেও স্বস্তির চিত্র নেই। মাঝারি সাইজের রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। শিং মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের বাজারে গরুর মাংস কেজি ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। তবে তুলনামূলকভাবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

বিক্রেতাদের যুক্তি: মোকামেই দাম বেশি
অনেকে মনে করেন আমরা ইচ্ছা করে দাম বাড়াচ্ছি। কিন্তু মোকামেই এখন সবজির দাম বেশি। পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বেড়েছে, তাই খুচরা বাজারে আগের দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

চাল ও ডালের দামের বিষয়ে মেরাদিয়ার ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম জানান, মিল ও আড়ৎ থেকে যে দামে চাল-ডাল আসছে, ভাড়া আর দোকান খরচ যোগ হলে খুচরা দামে প্রভাব পড়বেই। ডালের ক্ষেত্রেও আমদানি ও সরবরাহ ব্যয়ের কারণে দাম কমছে না।

ভোজ্যতেল নিয়ে স্টাফ কোয়ার্টারের ব্যবসায়ী মো. হাজী মিলন আহমেদ বলেন, এখন তেলের দাম মূলত কোম্পানি ও ডিলার পর্যায়েই নির্ধারিত। আমরা বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই। দাম বেশি থাকায় বিক্রিও কমে গেছে। 

1000174544
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকামেই এখন বাড়তি দাম। তারা যে দামে পাইকারী পণ্য কেনে সেই হিসাবেই খুচরা বিক্রি করতে হচ্ছে। ছবি: ঢাকা মেইল

 

নজরদারির দাবি ভোক্তাদের
রাজধানীর বাজারে এখনো স্বস্তির কোনো ইঙ্গিত নেই। ভোক্তারা বলছেন, আয় বাড়ছে না অথচ নিত্যপণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণও নেই। বাজারে কার্যকর তদারকি ও বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ না থাকলে সাধারণ মানুষের সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে—এমন আশঙ্কাই এখন সবার।

এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, সব ধরনের পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে তারা কাজ করছে। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। 

সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা এখন খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছি। একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্যদিকে অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতি। সরকার এখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশি মনোযোগী। 

নাজের হোসাইন বলেন, নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেশি। শীতেও সবজির বাজার অসহনীয়, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। ব্যবসায়ীরা সৎ না হলে ক্রেতারা ঠকতেই থাকবে। 

ক্যাবের এই নেতার মতে, স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের আমিষের চাহিদা পূরণ করতেন। উচ্চমূল্যের কারণে সেটুকুও পারছেন না। কৃষকের ৪০-৪২ টাকার পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। আড়তদাররাই মূলহোতা। তারাই সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করে। 
 
এমআর/ক.ম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর